গুরুদক্ষিণা_Short Film Stories_BD Films Info |
আদিবার ঘুম এতো তাড়াতাড়ি কখনোই ভাঙ্গেনা। কিন্তু শয়নের পাগলামিতে তাঁকে ঘুম
থেকে উঠতেই হলো। আজ যে তার জন্মদিন সেটা তো শয়নের এই পাগলামি না দেখলে তার মনেই
হতোনা। জন্মদিনের শুরুতেই আদিবা আবদার করে বসলো তাকে আজ সারাদিন বাইরে ঘুরাতে হবে
এবং ভালো মানের গিফট দিতে হবে। শয়নও আদিবার কথায় রাজি হলো কিন্তু একটি শর্ত জুড়ে
দিল যে, তাঁকে নিয়ে ঘুরার সময় তার চোখ বাঁধা থাকবে এবং দিন শেষে সেই চোখের বাঁধন
খুলে তাঁকে সে একটি সারপ্রাইজ গিফট দিবে। আদিবাও নাছোড়বান্দা সেও ছাড় দেয়ার পাত্রী
নয়। চোখই তো বাঁধা থাকবে- সে রাজি হয়ে গেলো। শয়ন একটুপর আদিবার চোখ বেধে যাত্রা
শুরু করলো। যদিও আদিবা প্রথমে রাজি ছিলো কিন্তু এখন সে একটু নার্ভাস ফিল করছে। শয়ন
তাঁকে নিয়ে প্রথমে ফুচকা খেতে গেলো। খেতে খেতে সে আদিবার ফুচকার প্লেটে একটু ঝাল
দিয়ে দিল। আদিবা তখন মুখে দিয়েই তা ফেলে দিলো। তার মুখ জ্বালা করছে। শয়ন
পরমুহূর্তেই ঠান্ডা পানি খাইয়ে তার ঝাল উপশম করলো, আদিবা তখন চোখের বাধন খুলতে
চাইলো। কিন্তু শয়ন শর্তের কথা মনে করিয়ে দিলে সে তখন চুপ হয়ে যায়। তারা
দুপুরের খাবারের জন্য একটা রেস্টুরেন্টে গেলো। সেখানেও শয়ন আদিবার চোখ বাঁধা
অবস্থায় প্লেটে অতিরিক্ত লবণ দিয়ে দিল। তখনও
আদিবা বাধ্য হয়েই তার মুখের ভাত ফেলে দিলো। শুধু শর্তের জন্য আজ সে শয়নকে কিছু
বলতে পারছে না। শয়ন এসব করে কি বোঝাতে চাচ্ছে, আদিবা এসবের কিছুই বুঝতে পারছে না।
সবশেষে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, শয়ন আদিবাকে নিয়ে একটি রুমে গেলো সেই সারপ্রাইজ গিফটের
জন্য। শয়ন আদিবার চোখের বাধন খুলে দিল। চোখ খোলার পর আদিবা যা দেখল তাতে সে একদম
আশ্চর্যান্বিত। সে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলোনা। কিছু দিন আগে আদিবা যখন ভেলপুরি
খাচ্ছিল তখন একটি অন্ধ বাচ্চা ছেলে
অসাবধানতাবসত, তার প্লেটটি ফেলে দেয় এবং তাঁকে নোংরা করে ফেলে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে
ছেলেটিকে থাপ্পড় দেয়। যা শয়নের মনে অনেক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাকে
সে এতটা ভালবাসে যে এতটা অহংকারি এবং রাগী হলে তো সমস্যা। সে আদিবাকে একটি শিক্ষা
দিতে চেয়েছিলো। সে আদিবার জন্য যে সারপ্রাইজ গিফট উপস্থাপন করেছিল সেটা হলো সেই
অন্ধ ছেলেটি। সে অন্ধ ছেলেটির চোখ ভালো করে তাঁকে আদিবার সামনে দাঁড় করায়। তখন
অন্ধ ছেলেটির বড় বোন আদিবাকে দেখিয়ে ছেলেটিকে বলে যে, এই আপুটিই তোমার চোখ দুটো ভালো
করে দিয়েছে। ছেলেটি তখন অশ্রুসিক্ত অবস্থায় ধন্যবাদ আপু, বলে আদিবাকে জড়িয়ে ধরে।
আদিবাও চোখের পানি মুছতে মুছতে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে এবং একটি অন্ধ ছেলের অন্ধত্বের
অবস্থা বুঝতে পারে। আর এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটে সব অহংকার, অভিমান এবং ক্ষোভের।