Friday, February 8, 2019

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.    মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)  প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক    ** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।    ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।  মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।  নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে  শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।  নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।  নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।  তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।  ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।  কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।  একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।
Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film

Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.

মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)
প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক

** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.    মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)  প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক    ** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।    ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।  মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।  নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে  শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।  নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।  নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।  তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।  ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।  কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।  একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।
Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film

‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.    মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)  প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক    ** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।    ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।  মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।  নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে  শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।  নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।  নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।  তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।  ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।  কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।  একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।
Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film

মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।
নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.    মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)  প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক    ** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।    ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।  মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।  নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে  শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।  নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।  নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।  তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।  ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।  কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।  একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।
Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film

শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।
নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।
নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.    মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)  প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক    ** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।    ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।  মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।  নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে  শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।  নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।  নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।  তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।  ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।  কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।  একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।
Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film

তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।
ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.    মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)  প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক    ** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।    ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।  মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।  নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে  শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।  নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।  নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।  তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।  ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।  কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।  একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।
Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film

কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.    মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)  প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক    ** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।    ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।  মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।  নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে  শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।  নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।  নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।  তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।  ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।  কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।  একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।
Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film

অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।
একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।

Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film review_BD Films Info Meghe Dhaka Tara (1960) English The Cloud-Capped Star (1960) directed by Ritwik Ghatak.    মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)  প্রযোজনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শ্রী ঋত্বিক কুমার ঘটক    ** পুরো চলচ্চিত্রটি একটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলে, পূর্ব বঙ্গ থেকে বহু পরিবার পাড়ি জমায় ভারতে। সিনেমায় স্পষ্টভাবে দেশভাগের কোন ইঙ্গিত না থাকলেও ঋত্বিক সাহেব চলচ্চিত্রটিতে পরোক্ষভাবে ৪৭’ এর দেশভাগের পর একটি পরিবারের পশ্চিম বঙ্গে পাড়ি দেয়ার অন্তর্নিহিত বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘ট্রিলজি’র এটি ১ম পর্ব। ১৯৬১ সালে ২য় পর্ব ‘কোমল গান্ধার’ এবং ১৯৬২ সালে ‘সুবর্ণরেখা’ দিয়ে ৩য় পর্বের নির্মাণকাজ শেষ করেন।    ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মূল চরিত্র নীতা নামে একটি মেয়ে। যিনি একাই পরিবারের ৬ সদস্যের মধ্যে আয় উপার্জনকারী। তিনি কলেজে পড়েন পাশাপাশি টিউশনি করান। উপার্জনের অর্থ দিয়ে পুরো পরিবার চালান। বাবা একটি স্কুলের মাস্টার। মা পরিবারের সকল কাজ দেখাশুনা করেন। বড় দাদা ‘শংকর’ যার গানের শিল্পী হওয়ার বড় স্বপ্ন। সংসারের কোন উপার্জনে তার মন নাই। তিনি বলেন, শিল্পী মানুষের কোন চাকরি করা সাজেনা। নীতার দুই ছোট ভাই-বোন মন্টু ও গীতা কলেজে পড়েন। তাদের পড়ালেখার খরচ ও নিতাকে চালাতে হয়। নীতার একমাত্র ভালবাসার মানুষটি ‘সনত’। যিনি দেশে পড়ালেখা শেষ করে বিদেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যেতে চান। সনতকে নিয়ে নীতার অনেক স্বপ্ন। এক সময় সনত নীতাকে বিয়ে করার জন্য বলে । কিন্তু নীতা বলেন, তার পরিবারের কেউ উপার্জনে সক্ষম না হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন না। প্রয়োজনে সনতকে অপেক্ষা করতে হবে। নীতা জানে সে এ মুহূর্তে সনতকে বিয়ে করলে হয়ত তারা দু জন সুখের সংসার গড়তে পারবে কিন্তু তার পরিবারের কি হবে? তাই সে সনতকে অপেক্ষা করতে বলে। পরিবারে চরম দরিদ্রতা। এমন সময় মন্টু কলেজে পড়ালেখা বাদ দিয়ে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে শুরু করে। সনত নীতার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে অপারগতার কথা জানায়। এদিকে নিতার ছোট বোন গীতার হাঁসিতে সনত আজ ও আত্নহারা। সনত গীতাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক । এক সময় গীতার সাথে সনতের বিয়ে হয়ে যায়।  মায়ের বকা ঝকা সহ্য করতে না পেরে শংকর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় বোম্বের উদ্দেশ্যে। তার স্বপ্ন । তিনি একদিন মস্ত বড় গানের শিল্পী হবেন।  নীতা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নিজের অর্থ, সুখ, শান্তি পরিবারের জন্য বিসর্জন দেয়। মন্টু আর তার বাবা দুর্ঘটনায় পড়ে উপার্জন অক্ষম হয়ে পড়ে। এ দিকে নীতার শক্ত একটা ব্যামো হয়। তিনি পরিবারের কাউকে বলেন না। সংসারের চাপ তার কাঁধে আর ও বেড়ে যায়। নীতা দুর্বল হয়ে পড়ে  শংকর মস্ত বড় শিল্পী হয়ে বাড়ি ফেরে দেখে তার বোন নীতা সেই আগেরটির মত নেই। একদিন যাকে কিনা দাড়ি কাটার ব্লেডের পয়শাটার জন্য ও হাত পাততে হত তার বোনের কাছে। আজ তার বোন ভাল নেই। শক্ত ব্যামো যক্ষ্মায় আক্রান্ত।  নীতার মা সব বুঝতে পারে মেয়েটার ভেঙ্গে পড়ার বিষয়। কিন্তু নীতা কাউকে কিছু বলেনা। নীতার মা একা কোণে চোখ থেকে পানি ফেলেন । কেউ দেখার নাই।  নীতার অসুখ বেড়ে গেলে তার দাদা নীতাকে নিয়ে পাহাড়ের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তার চিকিৎসার জন্য। এত দিন পর নীতা এত দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে তার দাদাকে বলেন, ‘ দাদা, আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম’।  তার দাদা সনতের সাথে নীতার সম্পর্কের কথা জানত । কিন্তু তার পক্ষে ইছুই করার ছিলনা। এভাবেই গল্পের কাহিনী শেষ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় একটি দুঃখ কষ্টের জীবন কাহিনী। এই ছিল চলচ্চিত্রের প্লট।  ঋত্বিক কুমার ঘটক তার ‘ মেঘে ঢাকা তারা’য় অতি নিপুণভাবে শব্দ আর আলোর ব্যবহার করেছেন। বলা হয় সত্যজিৎ রায়, চলচ্চিত্র শিল্পের শিল্পপতি। কিন্তু ঋত্বিক কুমার ঘটক তাকে অনুসরণ না করেই চমৎকার সব শিল্প তৈরি করেছেন তার দক্ষতা আর মেধার বলে। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সাদা কালো যুগের একটি ফিল্ম। কিন্তু এখানে ঋত্বিক ঘটক কৃত্রিম আলোর ব্যাবহার করেছেন। যা অনেকের কাছে প্রত্যক্ষভাবে অস্পষ্ট হতে পারে। কিন্তু চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য বর্ণনা করলে আমরা বুঝতে পারব। যে ঘটক চমৎকার আলোর ব্যবহার করেন। নীতা আর সনতের রোমান্টিকতার দৃশ্যগুলো দেখলে, বুঝা যায় যে এখানে ঘটক সাহেব কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেন নি। যেমন রাস্তায় বসে দুজনের গল্প করার দৃশ্য। নিরিবিলি এক জায়গায় বসে দু জনে গল্প করছেন কিছু দূরে ট্রেন চলে গেল। কি সুন্দর এক প্রাকৃতিক দৃশ্য, কি সুমধুর শব্দ, শোনা যায় ট্রেনের শব্দ।  কিন্তু চরম একাকিত্বের সময় নীতা ঘরে একা, বিছানায় । অন্ধকারাছন্ন ঘর। ঋত্বিক কুমার ঘটক এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার করেছেন। কিছু আলো ব্যবহার করে শুধু নীতাকে দেখা যায় তার ক্লোজ আপের কিছু ছবি অবলোকন করা যায় মাত্র। বাকি সব অন্ধকার। মেঘে ঢাকা পড়লে তারা যেমন দেখতে অনেক কষ্ট হয় , অনেক সময় দেখা যায়না। ঠিক তেমনি দুঃখ, কষ্ট আর অসুস্থ হয়ে নিস্পৃষ্ট হয়ে যায় নীতা।অন্ধকারচ্ছন্ন ঘরে নীতা অদৃশ্য হয়ে যায়। এমনটায় পরোক্ষভাবে ঘটক সাহেব দেখাতে চেয়েছেন। দেখাতে চেয়েছেন দেশ ভাগের কারনে মানুষদের ভোগান্তির কথা। পরোক্ষ ইঙ্গিত বহন করে।  একটি মেয়ে একটু সুখের স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিবারকে ভালবেসে সকল দরিদ্রতাকে উপেক্ষা করে নিজের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জয় করেছে নিজের দুঃখ, কষ্টকে।
Meghe Dhaka Tara (1960) Indian Bengali film


SHARE THIS