Sunday, December 16, 2018

Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info

Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Devi (1960) Film Poster, Directed By Satyajit Ray_BD Films Info    দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।     দেবী কাহিনী সংক্ষেপ:-  উনিশ শতকে বাংলার এক গ্রাম চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের গৃহবধূ দয়াময়ীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার। সে থাকে তার স্বামী উমাপ্রসাদ, উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, বড় ভাই তারাপ্রসাদ ও তার স্ত্রী হরসুন্দরী আর তাদের ছেলে খোকার সাথে একই বাড়িতে। গ্রামের জমিদার কালিকিঙ্কর  এক দিকে যেমন বিদ্বান অন্যদিকে কালীদেবীর ভক্ত। স্নেহময়ী দয়াময়ী শ্বশুর আর শ্বশুরবাড়িকে ভালভাবেই আগলে রাখে। একদিন রাতে কালিকিঙ্কর স্বপ্নে দেখেন তার স্নেহময়ী পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী কালীর রূপে। এই স্বপ্নকে সত্যি ভেবে তিনি দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে দেবী হিসেবে পূজা করতে শুরু করেন। প্রথমে দয়াময়ী এই ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু একদিন এক মৃতপ্রায় বালকের জীবন তার কাছে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে গেলে সবাই তাকে দেবী হিসেবে মেনে নিতে থাকে। এক সময় সে নিজেও স্বীকার করে নেয় তার মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি আছে। অবশেষে তার হাতে প্রিয় খোকার মৃত্যু দিয়ে এই ধর্মান্ধতার করুণ পরিণতি লাভ করে। ফলাফল পাগলপ্রায় দেবী মিলিয়ে যায় অজানায়।          দেবী চলচ্চিত্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ:-  পরিচালক সত্যজিৎ রায় এমন একটি সময়কালকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যেখানে একদিকে দেখা যায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিদ্বান ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে কুসংস্কার বর্জিত আধুনিক চিন্তা ধারণ করা বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, দ্বিতীয় জন উমাপ্রসাদ। আর সময়টি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল নিয়ে আবর্তিত। এই সময়ে এই দুই মানসিকতার প্রবণতা সমাজে তথা পুরো রাষ্ট্রে দেখা যেত। তাইতো উমাপ্রসাদের উক্তিতে যেমন উঠে আসে তার বাবা বিদ্বান হলেও সেকেলে একইভাবে ইংরেজি শিক্ষা নেয়া উমাপ্রসাদের প্রসঙ্গে দয়াময়ীকে বলেন "তোমার কেরেসটান স্বামী"। কারণ তৎকালীন সময়ে ইংরেজি চর্চা প্রাচীনদের কাছে খ্রিস্টান চর্চার শামিল ছিল। এভাবেই সেই সময়কালে সমাজের প্রাচীন অর্বাচীনের চিন্তা ধারার বিস্তর ফারাক এই পরিবারের গল্পটিতে উঠে এসেছে।  তৎকালীন নারী সমাজের একটি চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এই পরিবারের দুই নারী চরিত্র হরসুন্দরী ও দয়াময়ীকে সমান্তরালে রেখে পরিচালক দুই ধরনের নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। হরসুন্দরী ছিল প্রতিবাদী নারীসত্ত্বার প্রতীক অপরদিকে দয়াময়ী চিরায়ত ভীরু ও নিপীড়িত সত্ত্বার প্রতীক। সেই সময়কালটি যেহেতু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল তখনকার কিছু নারীদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হতে দেখা যেত। তারা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এর প্রতিবাদ জানাত। আমরা যদি কালিকিঙ্করের চরিত্রটি দেখি তবে তাতে ব্রিটিশ শাসকদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ছিলেনও তাদেরই এক জমিদার। যার কথাই শেষ হিসেবে ধরা হত।  হরসুন্দরী তার বিপক্ষে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে তার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাকারী ছিলেন। অন্যদিকে দয়াময়ী চিরায়ত নারী সমাজের সেই শোষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।   এভাবেই চারিত্রিক বৈপরীত্যের মাধ্যমে পরিচালক তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র আর তার নতুন পথে অগ্রসরের চিন্হ এঁকেছেন।             প্লট বিভাজনঃ-   ১) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপন   (ক) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা অর্চনা  (খ) বলি অনুষ্ঠান ও উমাপ্রসাদদের পূজা উদযাপন  (গ) দেবী দুর্গার বিসর্জন    ২) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন  (ক) দয়াময়ী ও খোকার মাঝে শক্ত বন্ধন  (খ) কালিকিঙ্করের সেবা শুশ্রূষা করে দয়াময়ী  (গ) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন    ৩) দয়াময়ীকে দেবী রূপে পূজা অর্চনা  (ক) কালিকিঙ্কর দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে  (খ) দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু হয় দয়াময়ীর  (গ) দয়াময়ীর জন্য পৃথক ঘর দেয়া হয়  (ঘ) দয়াময়ীর ইচ্ছায় হরসুন্দরী উমাপ্রসাদকে কাছে চিঠি লিখে জ্ঞাত করে    ৪) দয়াময়ীর শক্তির প্রকাশ  (ক) দয়াময়ীর কাছে মুমূর্ষু নাতিকে বাঁচিয়ে তুলতে নিয়ে আসে এক বৃদ্ধ  (খ) শিশুটিকে দয়াময়ীর চরণামৃত খাওয়ানো হয়  (গ) উমাপ্রসাদ বাড়িতে ফিরে দয়াময়ীকে দেবীর আসনে দেখে  (ঘ) উমাপ্রসাদ আর কালিকিঙ্করের মাঝে বাকবিতণ্ডা  (ঙ) মুমূর্ষু শিশুটি বেঁচে উঠে  (চ) দয়াময়ীর শক্তির ব্যপারে কালিকিঙ্করের বিশ্বাস দৃঢ় হয়    ৫) উমাপ্রসাদ ও দয়াময়ীর বাড়ি থেকে পালানো  (ক) উমাপ্রসাদ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে  (খ) দয়াময়ীকে উমাপ্রসাদ পালিয়ে গৃহ ত্যাগের জন্য রাজি করায়  (গ) দয়াময়ী এবং উমাপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালায়  (ঘ) মাঝপথে দয়াময়ী পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়    ৬) খোকার মৃত্যু  (ক) দয়াময়ীর পূজা অর্চনা চলতে থাকে  (খ) এক রাতে খোকা অসুস্থ হয়ে পড়ে  (গ) অসুস্থ খোকাকে কালিকিঙ্করের অজ্ঞাতে চিকিৎসক দেখান হরসুন্দরী  (ঘ) খোকাকে দয়াময়ীর কাছে নেয়া হয়  (ঙ) খোকাকে সুস্থ করতে দয়াময়ী রাতে তার কাছে রেখে দেয়  (চ) খোকার মৃত্যু    ৭) দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ  (ক) উমাপ্রসাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারে খোকার মৃত্যু সংবাদ  (খ) কালিকিঙ্করকে খোকার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে উমাপ্রসাদ  (গ) দয়াময়ীকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় সে  (ঘ) নিজ ঘরে পাগল প্রায় দয়াময়ীকে দেখতে পায় উমাপ্রসাদ  (ঙ) তার কাছে বাঁচার আকুতি জানায় দয়াময়ী  (চ) কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে অজানায় মিলিয়ে যায় দয়াময়ী    প্লট বিশ্লেষণঃ  দেবী চলচ্চিত্রের শুরু হয় জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে। উমাপ্রসাদের কলকাতা যাত্রা আর কালিকিঙ্করের স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে দয়াময়ীকে পূজা করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর একটি শিশু কাকতালীয়ভাবে দয়াময়ীর কাছে বেঁচে উঠে। যার ফলে তার দেবত্ব ভাবের বিস্তার লাভ করে। নিজ শিক্ষা আর সেই সাথে গুরুজনেরর কুসংস্কারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উমাপ্রসাদ। দয়াময়ীও নিজ ক্ষমতার মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে শুরু করে। ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে তার হাতে আদরের খোকার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকে একটি পরিবার তথা পুরো একটি সমাজ ও গোষ্ঠীর কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস। ফলে আরোপিত দেবীর ভাগ্যেও জোটে বিসর্জনের পরিণতি।    চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ-  দেবী চলচ্চিত্র শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা নিয়ে নয়। এটি একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও। প্রতিটি চরিত্র এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেছে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা ও দেবীর নান্দনিকতার প্রকাশ পায়।  এখানে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা চেতনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল।    কালিকিঙ্কর-  কালিকিঙ্কর অন্যতম মূল চরিত্র এই চলচ্চিত্রের। জমিদার ও ভুমিপতি এই ব্যক্তি তার কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে দৃঢ় চেতন। তার বাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী কালীর নিয়মিত আরাধনা করে সে। সেই  সাথে ঘটা করে দুর্গা পুজাও করে বাড়িতে। তার ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী তার বিশেষ স্নেহভাজন সেই সাথে তাকে সে নিজের মা বলেই ডাকে, যেমনটা সে মনে করে থাকে তার অধিষ্ঠিত দেবী কালী্র ক্ষেত্রেও। তার মনের এই সুপ্ত ইচ্ছাটি স্বপ্নের মাধ্যমে উঠে আসে। এর বিশ্লেষণ আমরা পাই মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার মতে-"Dreams are the fulfillment of wishes, and sometimes that dreams represent the fulfillment of wishes."  এই কথাটিকে আমরা যদি চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষিতে দেখি তবে আরও স্পষ্ট উল্লেখ পাই কালিকিঙ্করের উক্তির মধ্য দিয়ে। সে একদিকে দয়াময়ীকে দিয়ে পা মালিশ করায় অন্য দিকে বলে তার মা অর্থাৎ দয়ার জন্যই সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেনি। এই যে দয়াময়ীকে নিজের মা হিসেবে দেখতে চাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা থেকেই স্বপ্নে তাকে দেবী রূপে দর্শন।  আবার তার কুলপতি ও একরোখা মনোভাবের জন্যই সে খোকার মৃত্যুর পরও তার আরোপিত দেবীভাবের সংস্কারের কুফল মেনে নেয়নি। এমনকি তার প্রিয় পুত্রবধূর অসহায় অবস্থাও তার সিদ্ধান্তের কোন চ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বিদ্বান কিন্তু ধর্মান্ধ এক দৃঢ় স্বৈরাচারী জমিদারের চরিত্র বলা যেতে পারে কালিকিঙ্করকে।    উমাপ্রসাদ-  কালিকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র উমাপ্রসাদের সাথে তার বাবার ফারাক এক যুগের। সেই সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, সংস্কারও ভিন্ন। সত্যজিৎ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই চরিত্রটি সময়ের সাথে সাথে দৃঢ় হয়েছে। তার কথার সত্যতা আমরা খুঁজে পাই চলচ্চিত্রে।  প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি এমন এক উমাপ্রসাদকে যে কিনা ইংরেজি শিক্ষার দাম্ভিকতায় তার বাবাকে সেকেল বলে আখ্যা দেয়। অথচ বিধবা বিবাহে সমর্থন দেয়া, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা আধুনিক চিন্তার এই যুবকই নিজের স্ত্রীয়ের উপর হওয়া মানসিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি। এমনকি এক সময় সে নিজেও কেমন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে দয়ার দেবত্ব নিয়ে। তার কিশোরী স্ত্রী যখন তার সাথে পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে তখন তাকে বোঝানোর মত ব্যক্তিত্ব রাখে না।  কিন্তু তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ দেখতে পাই খোকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর যখন সে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলে। এর পূর্ব পর্যন্ত পিতার অন্যায়ের বিপক্ষে তাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথেই তার চারিত্রিক শক্তির দৃঢ়তা অর্জিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক বাবার সাথে লড়াই করেও সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারে না।    দয়াময়ী-  সতের বছরের কিশোরী গৃহবধূ দয়াময়ীর চরিত্রটি নিতান্তই সাধারণ ও চিরাচরিত নারীর প্রতিনিধি। খুব বেশি পড়ালেখা না জানা সংসারব্রত পালন করা এক নারী চরিত্র এটি। আমাদের সাধারণ নারীদেরই যে বিভিন্ন রূপ সেটি দেখা যায় তার মাঝে। যেমন- খোকার কাছে সে মায়ের মত সেই সাথে খেলার সাথী, উমাপ্রসাদের কাছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর কালিকিঙ্করের কাছে একই সাথে স্নেহময়ী মেয়ে আবার মমতাময়ী মায়ের মত। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল যে যে পুরুষ তাকে যেভাবে দেখতে চায় সে তাকে সেই রূপেই তুলে ধরে। যার ফলে এক সাধারণ ও ক্ষমতাহীন (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক দৃঢ়তাহীন) দয়াময়ীর উপর দেবত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় সে চুপ করে থাকে। নিজের অবস্থান জানাতে পারে না।  এই চরিত্রটির অন্য স্তর দেখি আমরা তখন যখন কিনা সে নিজ ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে বা তার মধ্যে দেবত্ব পাওয়ার লোভ প্রকাশ পায়। এই কারনেই সে উমাপ্রসাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধা দেয়। এমনকি তার প্রিয় খোকার অসুখে নিজ দেবত্ব জাহির করতে গিয়ে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। ফলাফল তার হাতে খোকার মৃত্যু। শেষ দৃশ্যে আমরা তার পাগলপ্রায় অবস্থাটা লক্ষ্য করলে দেখি তার মাঝে খোকার মৃত্যু শোক নেই বরং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ।  এভাবেই এক সাধারণ কিশোরী গৃহবধূ যখন বিশেষ ক্ষমতা পায় তার মধ্য দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন স্তর উঠে আসে। এক দিকে স্বামীর স্মৃতিতে অশ্রু ঝরায় তো অপরদিকে স্বামীর সাথে ঘর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।    হরসুন্দরী-  এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় ও প্রতিবাদী চরিত্র হল বাড়ির বড় বউ হরসুন্দরী। যেখানে দয়াময়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বশুরের হাতের পুতুল সেখানে হরসুন্দরী হল সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নারী। চলচ্চিত্রটির সময়কাল এমন এক যুগের যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবল, সেই যুগে কোন নারীর এতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।  দয়াময়ীকে যখন সবাই দেবী হিসেবে মেনে নেয় তখন এর বিরোধিতা করা একমাত্র ব্যক্তি ছিল হরসুন্দরী। এমনকি সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারটি মেনে নেয়ার জন্য ভর্ৎসনা জানায়। এর পিছনে হয়তোবা মানব মনের সাধারণ হিংসা প্রবৃত্তিও থাকতে পারে। কেননা চলচ্চিত্রের প্রথম থেকেই আমরা দেখি সবার প্রিয় ছিল দয়াময়ী। তার সাথে সবারই কেমন যেন দূরত্ব। দয়াময়ীর উপর দেবত্ব আরোপের পর সবাই তার পূজা করতে থাকে। কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়।  দয়াময়ী আলাদা নিচে ঘর পাওয়ার পর তার উক্তি "তোর তো ভালই হল উপর নিচ করতে হবে না"- এর মধ্য দিয়েও একটি সুক্ষ্ম খোঁচা পরিলক্ষিত হয়।  শেষে এসে দয়াময়ীকে রাক্ষুসী আখ্যা দিয়ে সে যেন তার আগের অবস্থানের বরখেলাপ করে।    তারাপ্রসাদ-  দেবী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নিস্ক্রিয় চরিত্র হল উমাপ্রসাদের বড় ভাই তারাপ্রসাদ। তাকে দেখা যায় তার বাবার শাসনের ছায়ায় থাকা এক ব্যক্তি যার নিজের কোন রায় নেই। সে মাতাল অবস্থায় নিজের হুঁশ রাখতে পারে না। তার স্ত্রী তাকে ভর্ৎসনা করলেও সে সঠিক পথে চলে না। চরিত্রটি এতটাই নির্লিপ্ত যে তার পুত্রের অসুখের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারে না পাছে তার বাবার বিরুদ্ধে না তা চলে যায়।  তারাপ্রসাদের চরিত্রটির মানসিকতা সমাজের বুদ্ধি বিবেকহীন মেরুদণ্ডহীন পুরুষদের প্রতিনিধি।      ভিজ্যুয়াল উপাদানের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা বিশ্লেষণঃ  ভিজ্যুয়াল উপাদান যেমন ফ্রেম, আলো, শব্দ প্রভৃতির নান্দনিক ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ভিজ্যুয়াল আস্পেক্ট তৈরি করেছে। উপাদানগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাহ্যিক নয় অন্তর্গত অর্থ ও ফুটে উঠেছে। এখানে দেবীর কয়েকটি দৃশ্য ও ফ্রেমের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোর ব্যবহার আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরা হল-   প্রথমে পূজা উদযাপনের দৃশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম পাওয়া যায়। যেমন- পূজা অর্চনার সময় বিরাট দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের অবস্থান দেখে মনে হয় প্রতিমাটি যেন তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা এই তথ্যটিই পাই যে ধর্মচর্চার আতিশয্যে কালিকিঙ্কর পিষ্ট। আলোক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফ্রেমটিতে এই তথ্যই উঠে আসে। সেখানে দুর্গা প্রতিমার আলোতে অবস্থান আর কালিকিঙ্করকে অন্ধকারে রাখার মাধ্যমে আলোর সামনে থেকেও তার মাঝের ধর্মান্ধতার অভিশাপ তুলে ধরা হয়েছে।  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info                           দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের পূজা অর্চনা    আবার বলির দৃশ্যটিতে দেখা যায় পরিচালক সরাসরি বলির দৃশ্য না দেখিয়ে সেটিকে আতশবাজির দৃশ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। আতশবাজির দৃশ্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দৃশ্য। বলির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে সকল পশুত্ব ও পাপকে দূরীভূত করা। এই দৃশ্যে সরাসরি বলির দৃশ্যের রক্তপাতের পরিবর্তে যেমন একটা উদযাপনের মুড সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সাথে অন্ধকার আকাশে আতশবাজির আলোর স্ফুটন যেন সব আঁধারকে সব পাপকে দূরীভূত করে দিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।      আতশবাজির আলোকচ্ছটা: দেবী (১৯৬০)  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    বলির দৃশ্য :দেবী (১৯৬০)                    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শনের দৃশ্যটির পর্যালোচনা করলে সেখানে ত্রিনয়ন দয়াময়ীর দুই চোখ আর টিপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। দৃশ্যের শুরুতে অন্ধকারে তিনটি চোখ দেখা যায় পড়ে তা ধীরে ধীরে দয়াময়ীর ত্রিনয়নে পরিনত হয়। অন্ধকারে তিনটি চোখ কালী দেবীরই ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় চোখ মুলত ধ্বংসের প্রতিনিধি। মানুষ হিসেবে দয়াময়ীর দুটি চোখ দেখানোই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই তৃতীয় চোখ দেখানোর ফলে দয়াময়ীর মাধ্যমে কোন কিছুর বিনাশের সংকেত দেয়। ফলাফল দেখি যখন তার হাতে খোকার মৃত্যু হয়। এখানে আলো ছায়ার অসাধারণ ব্যবহারের ফলে একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।          Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শন: দেবী (১৯৬০)    শেষ সিকুয়েন্সে যখন উমাপ্রসাদ দয়াময়ীকে ফিরিয়ে নিতে আসে তখন তাদের ঘরটি তীব্র আলোয় পূর্ণ থাকে। এটি এক ধরনের পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরি করে। প্রচুর আলোকচ্ছটার মাঝে যেন দয়ার আবির্ভাব হয় উমার সামনে। দয়া যে আর উমাপ্রসাদের স্ত্রী হিসেবে নেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার সাজ পোশাক বা ব্যবহারের মধ্যেও সেই অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সে যে নিজেও তার দেবত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে এ যেন তারই প্রমাণ।    Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   তীব্র আলোর মাঝে দয়ার আবির্ভাব: দেবী (১৯৬০)    সর্বশেষ দৃশ্যে যেখানে দয়াময়ীর প্রস্থান দেখানো হয়েছে সেই ফ্রেমটি ভীষণ তাৎপর্য রাখে। তার করুণ পরিণতির গন্তব্য যে কোন অজানার পথে সেটিকে দয়াময়ীর অন্তর্ধান হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এ যেন চিরায়ত নারীদেরই শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দেয় যাদের নাকি সমাজের সংস্কারের বলি হতে হয়, তাদের গন্তব্য হয় ঠিকানাহীন হারানোর দেশে।   Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে প্রস্থান: দেবী (১৯৬০)     দেবীকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তুলে ধরা কোন চলচ্চিত্র বললে ভুল হবে। সত্যজিৎ রায় এখানে পুরো একটি সমাজের, একটি সময়কালের অংশ ব্যক্তিজীবনের পারিবারিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি সম্পর্কগুলো দেখিয়েছেন। যার ফলে দুই প্রজন্মের চিন্তা চেতনা, আবেগ এমনকি ধর্মচর্চার যে বিস্তর ফারাক সেটি এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। একই সাথে যে কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা থেকে যে আবেশ বা অবসেশন তৈরি হয় তার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেই বার্তাটিই তিনি দেবীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। Read More...
Devi (1960) Film Poster, Directed By Satyajit Ray_BD Films Info 

দেবী
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। 

দেবী কাহিনী সংক্ষেপ:-
উনিশ শতকে বাংলার এক গ্রাম চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের গৃহবধূ দয়াময়ীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার সে থাকে তার স্বামী উমাপ্রসাদ, উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, বড় ভাই তারাপ্রসাদ ও তার স্ত্রী হরসুন্দরী আর তাদের ছেলে খোকার সাথে একই বাড়িতেগ্রামের জমিদার কালিকিঙ্কর  এক দিকে যেমন বিদ্বান অন্যদিকে কালীদেবীর ভক্ত। স্নেহময়ী দয়াময়ী শ্বশুর আর শ্বশুরবাড়িকে ভালভাবেই আগলে রাখে। একদিন রাতে কালিকিঙ্কর স্বপ্নে দেখেন তার স্নেহময়ী পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী কালীর রূপে। এই স্বপ্নকে সত্যি ভেবে তিনি দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে দেবী হিসেবে পূজা করতে শুরু করেন। প্রথমে দয়াময়ী এই ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু একদিন এক মৃতপ্রায় বালকের জীবন তার কাছে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে গেলে সবাই তাকে দেবী হিসেবে মেনে নিতে থাকে। এক সময় সে নিজেও স্বীকার করে নেয় তার মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি আছে। অবশেষে তার হাতে প্রিয় খোকার মৃত্যু দিয়ে এই ধর্মান্ধতার করুণ পরিণতি লাভ করে। ফলাফল পাগলপ্রায় দেবী মিলিয়ে যায় অজানায়।    


দেবী চলচ্চিত্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ:-
পরিচালক সত্যজিৎ রায় এমন একটি সময়কালকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যেখানে একদিকে দেখা যায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিদ্বান ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে কুসংস্কার বর্জিত আধুনিক চিন্তা ধারণ করা বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, দ্বিতীয় জন উমাপ্রসাদআর সময়টি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল নিয়ে আবর্তিত। এই সময়ে এই দুই মানসিকতার প্রবণতা সমাজে তথা পুরো রাষ্ট্রে দেখা যেত। তাইতো উমাপ্রসাদের উক্তিতে যেমন উঠে আসে তার বাবা বিদ্বান হলেও সেকেলে একইভাবে ইংরেজি শিক্ষা নেয়া উমাপ্রসাদের প্রসঙ্গে দয়াময়ীকে বলেন "তোমার কেরেসটান স্বামী"। কারণ তৎকালীন সময়ে ইংরেজি চর্চা প্রাচীনদের কাছে খ্রিস্টান চর্চার শামিল ছিল। এভাবেই সেই সময়কালে সমাজের প্রাচীন অর্বাচীনের চিন্তা ধারার বিস্তর ফারাক এই পরিবারের গল্পটিতে উঠে এসেছে।
তৎকালীন নারী সমাজের একটি চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এই পরিবারের দুই নারী চরিত্র হরসুন্দরী দয়াময়ীকে সমান্তরালে রেখে পরিচালক দুই ধরনের নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। হরসুন্দরী ছিল প্রতিবাদী নারীসত্ত্বার প্রতীক অপরদিকে দয়াময়ী চিরায়ত ভীরু ও নিপীড়িত সত্ত্বার প্রতীক। সেই সময়কালটি যেহেতু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল তখনকার কিছু নারীদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হতে দেখা যেত। তারা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এর প্রতিবাদ জানাত। আমরা যদি কালিকিঙ্করের চরিত্রটি দেখি তবে তাতে ব্রিটিশ শাসকদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ছিলেনও তাদেরই এক জমিদার। যার কথাই শেষ হিসেবে ধরা হত।  হরসুন্দরী তার বিপক্ষে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে তার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাকারী ছিলেন। অন্যদিকে দয়াময়ী চিরায়ত নারী সমাজের সেই শোষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
 এভাবেই চারিত্রিক বৈপরীত্যের মাধ্যমে পরিচালক তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র আর তার নতুন পথে অগ্রসরের চিন্হ এঁকেছেন।        


প্লট বিভাজনঃ-

১) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপন
(ক) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা অর্চনা
(খ) বলি অনুষ্ঠান ও উমাপ্রসাদদের পূজা উদযাপন
(গ) দেবী দুর্গার বিসর্জন

২) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন
(ক) দয়াময়ী ও খোকার মাঝে শক্ত বন্ধন
(খ) কালিকিঙ্করের সেবা শুশ্রূষা করে দয়াময়ী
(গ) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন

৩) দয়াময়ীকে দেবী রূপে পূজা অর্চনা
(ক) কালিকিঙ্কর দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে
(খ) দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু হয় দয়াময়ীর
(গ) দয়াময়ীর জন্য পৃথক ঘর দেয়া হয়
(ঘ) দয়াময়ীর ইচ্ছায় হরসুন্দরী উমাপ্রসাদকে কাছে চিঠি লিখে জ্ঞাত করে

৪) দয়াময়ীর শক্তির প্রকাশ
(ক) দয়াময়ীর কাছে মুমূর্ষু নাতিকে বাঁচিয়ে তুলতে নিয়ে আসে এক বৃদ্ধ
(খ) শিশুটিকে দয়াময়ীর চরণামৃত খাওয়ানো হয়
(গ) উমাপ্রসাদ বাড়িতে ফিরে দয়াময়ীকে দেবীর আসনে দেখে
(ঘ) উমাপ্রসাদ আর কালিকিঙ্করের মাঝে বাকবিতণ্ডা
(ঙ) মুমূর্ষু শিশুটি বেঁচে উঠে
(চ) দয়াময়ীর শক্তির ব্যপারে কালিকিঙ্করের বিশ্বাস দৃঢ় হয়

৫) উমাপ্রসাদ ও দয়াময়ীর বাড়ি থেকে পালানো
(ক) উমাপ্রসাদ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে
(খ) দয়াময়ীকে উমাপ্রসাদ পালিয়ে গৃহ ত্যাগের জন্য রাজি করায়
(গ) দয়াময়ী এবং উমাপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালায়
(ঘ) মাঝপথে দয়াময়ী পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়

৬) খোকার মৃত্যু
(ক) দয়াময়ীর পূজা অর্চনা চলতে থাকে
(খ) এক রাতে খোকা অসুস্থ হয়ে পড়ে
(গ) অসুস্থ খোকাকে কালিকিঙ্করের অজ্ঞাতে চিকিৎসক দেখান হরসুন্দরী
(ঘ) খোকাকে দয়াময়ীর কাছে নেয়া হয়
(ঙ) খোকাকে সুস্থ করতে দয়াময়ী রাতে তার কাছে রেখে দেয়
(চ) খোকার মৃত্যু

৭) দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ
(ক) উমাপ্রসাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারে খোকার মৃত্যু সংবাদ
(খ) কালিকিঙ্করকে খোকার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে উমাপ্রসাদ
(গ) দয়াময়ীকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় সে
(ঘ) নিজ ঘরে পাগল প্রায় দয়াময়ীকে দেখতে পায় উমাপ্রসাদ
(ঙ) তার কাছে বাঁচার আকুতি জানায় দয়াময়ী
(চ) কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে অজানায় মিলিয়ে যায় দয়াময়ী

প্লট বিশ্লেষণঃ
দেবী চলচ্চিত্রের শুরু হয় জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে। উমাপ্রসাদের কলকাতা যাত্রা আর কালিকিঙ্করের স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে দয়াময়ীকে পূজা করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর একটি শিশু কাকতালীয়ভাবে দয়াময়ীর কাছে বেঁচে উঠে। যার ফলে তার দেবত্ব ভাবের বিস্তার লাভ করে। নিজ শিক্ষা আর সেই সাথে গুরুজনেরর কুসংস্কারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উমাপ্রসাদদয়াময়ীও নিজ ক্ষমতার মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে শুরু করে। ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে তার হাতে আদরের খোকার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকে একটি পরিবার তথা পুরো একটি সমাজ ও গোষ্ঠীর কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস। ফলে আরোপিত দেবীর ভাগ্যেও জোটে বিসর্জনের পরিণতি।

চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ-
দেবী চলচ্চিত্র শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা নিয়ে নয়। এটি একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও। প্রতিটি চরিত্র এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেছে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা ও দেবীর নান্দনিকতার প্রকাশ পায়।  এখানে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা চেতনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল।

কালিকিঙ্কর-
কালিকিঙ্কর অন্যতম মূল চরিত্র এই চলচ্চিত্রের। জমিদার ও ভুমিপতি এই ব্যক্তি তার কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে দৃঢ় চেতন। তার বাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী কালীর নিয়মিত আরাধনা করে সেসেই
সাথে ঘটা করে দুর্গা পুজাও করে বাড়িতে। তার ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী তার বিশেষ স্নেহভাজন সেই সাথে তাকে সে নিজের মা বলেই ডাকে, যেমনটা সে মনে করে থাকে তার অধিষ্ঠিত দেবী কালী্র ক্ষেত্রেও। তার মনের এই সুপ্ত ইচ্ছাটি স্বপ্নের মাধ্যমে উঠে আসে। এর বিশ্লেষণ আমরা পাই মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার মতে-"Dreams are the fulfillment of wishes, and sometimes that dreams represent the fulfillment of wishes."
এই কথাটিকে আমরা যদি চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষিতে দেখি তবে আরও স্পষ্ট উল্লেখ পাই কালিকিঙ্করের উক্তির মধ্য দিয়ে। সে একদিকে দয়াময়ীকে দিয়ে পা মালিশ করায় অন্য দিকে বলে তার মা অর্থাৎ দয়ার জন্যই সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেনি। এই যে দয়াময়ীকে নিজের মা হিসেবে দেখতে চাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা থেকেই স্বপ্নে তাকে দেবী রূপে দর্শন।
আবার তার কুলপতি ও একরোখা মনোভাবের জন্যই সে খোকার মৃত্যুর পরও তার আরোপিত দেবীভাবের সংস্কারের কুফল মেনে নেয়নিএমনকি তার প্রিয় পুত্রবধূর অসহায় অবস্থাও তার সিদ্ধান্তের কোন চ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বিদ্বান কিন্তু ধর্মান্ধ এক দৃঢ় স্বৈরাচারী জমিদারের চরিত্র বলা যেতে পারে কালিকিঙ্করকে।

উমাপ্রসাদ-
কালিকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র উমাপ্রসাদের সাথে তার বাবার ফারাক এক যুগের। সেই সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, সংস্কারও ভিন্ন। সত্যজিৎ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই চরিত্রটি সময়ের সাথে সাথে দৃঢ় হয়েছে। তার কথার সত্যতা আমরা খুঁজে পাই চলচ্চিত্রে।
প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি এমন এক উমাপ্রসাদকে যে কিনা ইংরেজি শিক্ষার দাম্ভিকতায় তার বাবাকে সেকেল বলে আখ্যা দেয়। অথচ বিধবা বিবাহে সমর্থন দেয়া, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা আধুনিক চিন্তার এই যুবকই নিজের স্ত্রীয়ের উপর হওয়া মানসিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনিএমনকি এক সময় সে নিজেও কেমন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে দয়ার দেবত্ব নিয়ে। তার কিশোরী স্ত্রী যখন তার সাথে পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে তখন তাকে বোঝানোর মত ব্যক্তিত্ব রাখে না।
কিন্তু তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ দেখতে পাই খোকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর যখন সে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলে। এর পূর্ব পর্যন্ত পিতার অন্যায়ের বিপক্ষে তাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথেই তার চারিত্রিক শক্তির দৃঢ়তা অর্জিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক বাবার সাথে লড়াই করেও সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারে না।

দয়াময়ী-
সতের বছরের কিশোরী গৃহবধূ দয়াময়ীর চরিত্রটি নিতান্তই সাধারণ ও চিরাচরিত নারীর প্রতিনিধি। খুব বেশি পড়ালেখা না জানা সংসারব্রত পালন করা এক নারী চরিত্র এটি। আমাদের সাধারণ নারীদেরই যে বিভিন্ন রূপ সেটি দেখা যায় তার মাঝে। যেমন- খোকার কাছে সে মায়ের মত সেই সাথে খেলার সাথী, উমাপ্রসাদের কাছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর কালিকিঙ্করের কাছে একই সাথে স্নেহময়ী মেয়ে আবার মমতাময়ী মায়ের মত। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল যে যে পুরুষ তাকে যেভাবে দেখতে চায় সে তাকে সেই রূপেই তুলে ধরে। যার ফলে এক সাধারণ ও ক্ষমতাহীন (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক দৃঢ়তাহীন) দয়াময়ীর উপর দেবত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় সে চুপ করে থাকে। নিজের অবস্থান জানাতে পারে না।
এই চরিত্রটির অন্য স্তর দেখি আমরা তখন যখন কিনা সে নিজ ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে বা তার মধ্যে দেবত্ব পাওয়ার লোভ প্রকাশ পায়। এই কারনেই সে উমাপ্রসাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধা দেয়। এমনকি তার প্রিয় খোকার অসুখে নিজ দেবত্ব জাহির করতে গিয়ে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। ফলাফল তার হাতে খোকার মৃত্যু। শেষ দৃশ্যে আমরা তার পাগলপ্রায় অবস্থাটা লক্ষ্য করলে দেখি তার মাঝে খোকার মৃত্যু শোক নেই বরং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ।
এভাবেই এক সাধারণ কিশোরী গৃহবধূ যখন বিশেষ ক্ষমতা পায় তার মধ্য দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন স্তর উঠে আসে। এক দিকে স্বামীর স্মৃতিতে অশ্রু ঝরায় তো অপরদিকে স্বামীর সাথে ঘর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।

হরসুন্দরী-
এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় ও প্রতিবাদী চরিত্র হল বাড়ির বড় বউ হরসুন্দরী। যেখানে দয়াময়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বশুরের হাতের পুতুল সেখানে হরসুন্দরী হল সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নারী। চলচ্চিত্রটির সময়কাল এমন এক যুগের যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবল, সেই যুগে কোন নারীর এতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।
দয়াময়ীকে যখন সবাই দেবী হিসেবে মেনে নেয় তখন এর বিরোধিতা করা একমাত্র ব্যক্তি ছিল হরসুন্দরীএমনকি সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারটি মেনে নেয়ার জন্য ভর্ৎসনা জানায়। এর পিছনে হয়তোবা মানব মনের সাধারণ হিংসা প্রবৃত্তিও থাকতে পারে। কেননা চলচ্চিত্রের প্রথম থেকেই আমরা দেখি সবার প্রিয় ছিল দয়াময়ী। তার সাথে সবারই কেমন যেন দূরত্ব। দয়াময়ীর উপর দেবত্ব আরোপের পর সবাই তার পূজা করতে থাকে। কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়।  দয়াময়ী আলাদা নিচে ঘর পাওয়ার পর তার উক্তি "তোর তো ভালই হল উপর নিচ করতে হবে না"- এর মধ্য দিয়েও একটি সুক্ষ্ম খোঁচা পরিলক্ষিত হয়।
শেষে এসে দয়াময়ীকে রাক্ষুসী আখ্যা দিয়ে সে যেন তার আগের অবস্থানের বরখেলাপ করে।

তারাপ্রসাদ-
দেবী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নিস্ক্রিয় চরিত্র হল উমাপ্রসাদের বড় ভাই তারাপ্রসাদ। তাকে দেখা যায় তার বাবার শাসনের ছায়ায় থাকা এক ব্যক্তি যার নিজের কোন রায় নেই। সে মাতাল অবস্থায় নিজের হুঁশ রাখতে পারে না। তার স্ত্রী তাকে ভর্ৎসনা করলেও সে সঠিক পথে চলে না। চরিত্রটি এতটাই নির্লিপ্ত যে তার পুত্রের অসুখের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারে না পাছে তার বাবার বিরুদ্ধে না তা চলে যায়।
তারাপ্রসাদের চরিত্রটির মানসিকতা সমাজের বুদ্ধি বিবেকহীন মেরুদণ্ডহীন পুরুষদের প্রতিনিধি।


ভিজ্যুয়াল উপাদানের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা বিশ্লেষণঃ
ভিজ্যুয়াল উপাদান যেমন ফ্রেম, আলো, শব্দ প্রভৃতির নান্দনিক ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ভিজ্যুয়াল আস্পেক্ট তৈরি করেছে। উপাদানগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাহ্যিক নয় অন্তর্গত অর্থ ও ফুটে উঠেছে। এখানে দেবীর কয়েকটি দৃশ্য ও ফ্রেমের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোর ব্যবহার আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরা হল-

প্রথমে পূজা উদযাপনের দৃশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম পাওয়া যায়। যেমন- পূজা অর্চনার সময় বিরাট দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের অবস্থান দেখে মনে হয় প্রতিমাটি যেন তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা এই তথ্যটিই পাই যে ধর্মচর্চার আতিশয্যে কালিকিঙ্কর পিষ্ট। আলোক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফ্রেমটিতে এই তথ্যই উঠে আসে। সেখানে দুর্গা প্রতিমার আলোতে অবস্থান আর কালিকিঙ্করকে অন্ধকারে রাখার মাধ্যমে আলোর সামনে থেকেও তার মাঝের ধর্মান্ধতার অভিশাপ তুলে ধরা হয়েছে।
Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Devi (1960) Film Poster, Directed By Satyajit Ray_BD Films Info    দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।     দেবী কাহিনী সংক্ষেপ:-  উনিশ শতকে বাংলার এক গ্রাম চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের গৃহবধূ দয়াময়ীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার। সে থাকে তার স্বামী উমাপ্রসাদ, উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, বড় ভাই তারাপ্রসাদ ও তার স্ত্রী হরসুন্দরী আর তাদের ছেলে খোকার সাথে একই বাড়িতে। গ্রামের জমিদার কালিকিঙ্কর  এক দিকে যেমন বিদ্বান অন্যদিকে কালীদেবীর ভক্ত। স্নেহময়ী দয়াময়ী শ্বশুর আর শ্বশুরবাড়িকে ভালভাবেই আগলে রাখে। একদিন রাতে কালিকিঙ্কর স্বপ্নে দেখেন তার স্নেহময়ী পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী কালীর রূপে। এই স্বপ্নকে সত্যি ভেবে তিনি দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে দেবী হিসেবে পূজা করতে শুরু করেন। প্রথমে দয়াময়ী এই ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু একদিন এক মৃতপ্রায় বালকের জীবন তার কাছে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে গেলে সবাই তাকে দেবী হিসেবে মেনে নিতে থাকে। এক সময় সে নিজেও স্বীকার করে নেয় তার মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি আছে। অবশেষে তার হাতে প্রিয় খোকার মৃত্যু দিয়ে এই ধর্মান্ধতার করুণ পরিণতি লাভ করে। ফলাফল পাগলপ্রায় দেবী মিলিয়ে যায় অজানায়।          দেবী চলচ্চিত্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ:-  পরিচালক সত্যজিৎ রায় এমন একটি সময়কালকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যেখানে একদিকে দেখা যায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিদ্বান ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে কুসংস্কার বর্জিত আধুনিক চিন্তা ধারণ করা বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, দ্বিতীয় জন উমাপ্রসাদ। আর সময়টি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল নিয়ে আবর্তিত। এই সময়ে এই দুই মানসিকতার প্রবণতা সমাজে তথা পুরো রাষ্ট্রে দেখা যেত। তাইতো উমাপ্রসাদের উক্তিতে যেমন উঠে আসে তার বাবা বিদ্বান হলেও সেকেলে একইভাবে ইংরেজি শিক্ষা নেয়া উমাপ্রসাদের প্রসঙ্গে দয়াময়ীকে বলেন "তোমার কেরেসটান স্বামী"। কারণ তৎকালীন সময়ে ইংরেজি চর্চা প্রাচীনদের কাছে খ্রিস্টান চর্চার শামিল ছিল। এভাবেই সেই সময়কালে সমাজের প্রাচীন অর্বাচীনের চিন্তা ধারার বিস্তর ফারাক এই পরিবারের গল্পটিতে উঠে এসেছে।  তৎকালীন নারী সমাজের একটি চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এই পরিবারের দুই নারী চরিত্র হরসুন্দরী ও দয়াময়ীকে সমান্তরালে রেখে পরিচালক দুই ধরনের নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। হরসুন্দরী ছিল প্রতিবাদী নারীসত্ত্বার প্রতীক অপরদিকে দয়াময়ী চিরায়ত ভীরু ও নিপীড়িত সত্ত্বার প্রতীক। সেই সময়কালটি যেহেতু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল তখনকার কিছু নারীদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হতে দেখা যেত। তারা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এর প্রতিবাদ জানাত। আমরা যদি কালিকিঙ্করের চরিত্রটি দেখি তবে তাতে ব্রিটিশ শাসকদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ছিলেনও তাদেরই এক জমিদার। যার কথাই শেষ হিসেবে ধরা হত।  হরসুন্দরী তার বিপক্ষে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে তার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাকারী ছিলেন। অন্যদিকে দয়াময়ী চিরায়ত নারী সমাজের সেই শোষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।   এভাবেই চারিত্রিক বৈপরীত্যের মাধ্যমে পরিচালক তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র আর তার নতুন পথে অগ্রসরের চিন্হ এঁকেছেন।             প্লট বিভাজনঃ-   ১) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপন   (ক) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা অর্চনা  (খ) বলি অনুষ্ঠান ও উমাপ্রসাদদের পূজা উদযাপন  (গ) দেবী দুর্গার বিসর্জন    ২) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন  (ক) দয়াময়ী ও খোকার মাঝে শক্ত বন্ধন  (খ) কালিকিঙ্করের সেবা শুশ্রূষা করে দয়াময়ী  (গ) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন    ৩) দয়াময়ীকে দেবী রূপে পূজা অর্চনা  (ক) কালিকিঙ্কর দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে  (খ) দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু হয় দয়াময়ীর  (গ) দয়াময়ীর জন্য পৃথক ঘর দেয়া হয়  (ঘ) দয়াময়ীর ইচ্ছায় হরসুন্দরী উমাপ্রসাদকে কাছে চিঠি লিখে জ্ঞাত করে    ৪) দয়াময়ীর শক্তির প্রকাশ  (ক) দয়াময়ীর কাছে মুমূর্ষু নাতিকে বাঁচিয়ে তুলতে নিয়ে আসে এক বৃদ্ধ  (খ) শিশুটিকে দয়াময়ীর চরণামৃত খাওয়ানো হয়  (গ) উমাপ্রসাদ বাড়িতে ফিরে দয়াময়ীকে দেবীর আসনে দেখে  (ঘ) উমাপ্রসাদ আর কালিকিঙ্করের মাঝে বাকবিতণ্ডা  (ঙ) মুমূর্ষু শিশুটি বেঁচে উঠে  (চ) দয়াময়ীর শক্তির ব্যপারে কালিকিঙ্করের বিশ্বাস দৃঢ় হয়    ৫) উমাপ্রসাদ ও দয়াময়ীর বাড়ি থেকে পালানো  (ক) উমাপ্রসাদ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে  (খ) দয়াময়ীকে উমাপ্রসাদ পালিয়ে গৃহ ত্যাগের জন্য রাজি করায়  (গ) দয়াময়ী এবং উমাপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালায়  (ঘ) মাঝপথে দয়াময়ী পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়    ৬) খোকার মৃত্যু  (ক) দয়াময়ীর পূজা অর্চনা চলতে থাকে  (খ) এক রাতে খোকা অসুস্থ হয়ে পড়ে  (গ) অসুস্থ খোকাকে কালিকিঙ্করের অজ্ঞাতে চিকিৎসক দেখান হরসুন্দরী  (ঘ) খোকাকে দয়াময়ীর কাছে নেয়া হয়  (ঙ) খোকাকে সুস্থ করতে দয়াময়ী রাতে তার কাছে রেখে দেয়  (চ) খোকার মৃত্যু    ৭) দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ  (ক) উমাপ্রসাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারে খোকার মৃত্যু সংবাদ  (খ) কালিকিঙ্করকে খোকার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে উমাপ্রসাদ  (গ) দয়াময়ীকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় সে  (ঘ) নিজ ঘরে পাগল প্রায় দয়াময়ীকে দেখতে পায় উমাপ্রসাদ  (ঙ) তার কাছে বাঁচার আকুতি জানায় দয়াময়ী  (চ) কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে অজানায় মিলিয়ে যায় দয়াময়ী    প্লট বিশ্লেষণঃ  দেবী চলচ্চিত্রের শুরু হয় জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে। উমাপ্রসাদের কলকাতা যাত্রা আর কালিকিঙ্করের স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে দয়াময়ীকে পূজা করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর একটি শিশু কাকতালীয়ভাবে দয়াময়ীর কাছে বেঁচে উঠে। যার ফলে তার দেবত্ব ভাবের বিস্তার লাভ করে। নিজ শিক্ষা আর সেই সাথে গুরুজনেরর কুসংস্কারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উমাপ্রসাদ। দয়াময়ীও নিজ ক্ষমতার মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে শুরু করে। ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে তার হাতে আদরের খোকার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকে একটি পরিবার তথা পুরো একটি সমাজ ও গোষ্ঠীর কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস। ফলে আরোপিত দেবীর ভাগ্যেও জোটে বিসর্জনের পরিণতি।    চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ-  দেবী চলচ্চিত্র শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা নিয়ে নয়। এটি একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও। প্রতিটি চরিত্র এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেছে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা ও দেবীর নান্দনিকতার প্রকাশ পায়।  এখানে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা চেতনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল।    কালিকিঙ্কর-  কালিকিঙ্কর অন্যতম মূল চরিত্র এই চলচ্চিত্রের। জমিদার ও ভুমিপতি এই ব্যক্তি তার কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে দৃঢ় চেতন। তার বাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী কালীর নিয়মিত আরাধনা করে সে। সেই  সাথে ঘটা করে দুর্গা পুজাও করে বাড়িতে। তার ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী তার বিশেষ স্নেহভাজন সেই সাথে তাকে সে নিজের মা বলেই ডাকে, যেমনটা সে মনে করে থাকে তার অধিষ্ঠিত দেবী কালী্র ক্ষেত্রেও। তার মনের এই সুপ্ত ইচ্ছাটি স্বপ্নের মাধ্যমে উঠে আসে। এর বিশ্লেষণ আমরা পাই মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার মতে-"Dreams are the fulfillment of wishes, and sometimes that dreams represent the fulfillment of wishes."  এই কথাটিকে আমরা যদি চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষিতে দেখি তবে আরও স্পষ্ট উল্লেখ পাই কালিকিঙ্করের উক্তির মধ্য দিয়ে। সে একদিকে দয়াময়ীকে দিয়ে পা মালিশ করায় অন্য দিকে বলে তার মা অর্থাৎ দয়ার জন্যই সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেনি। এই যে দয়াময়ীকে নিজের মা হিসেবে দেখতে চাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা থেকেই স্বপ্নে তাকে দেবী রূপে দর্শন।  আবার তার কুলপতি ও একরোখা মনোভাবের জন্যই সে খোকার মৃত্যুর পরও তার আরোপিত দেবীভাবের সংস্কারের কুফল মেনে নেয়নি। এমনকি তার প্রিয় পুত্রবধূর অসহায় অবস্থাও তার সিদ্ধান্তের কোন চ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বিদ্বান কিন্তু ধর্মান্ধ এক দৃঢ় স্বৈরাচারী জমিদারের চরিত্র বলা যেতে পারে কালিকিঙ্করকে।    উমাপ্রসাদ-  কালিকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র উমাপ্রসাদের সাথে তার বাবার ফারাক এক যুগের। সেই সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, সংস্কারও ভিন্ন। সত্যজিৎ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই চরিত্রটি সময়ের সাথে সাথে দৃঢ় হয়েছে। তার কথার সত্যতা আমরা খুঁজে পাই চলচ্চিত্রে।  প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি এমন এক উমাপ্রসাদকে যে কিনা ইংরেজি শিক্ষার দাম্ভিকতায় তার বাবাকে সেকেল বলে আখ্যা দেয়। অথচ বিধবা বিবাহে সমর্থন দেয়া, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা আধুনিক চিন্তার এই যুবকই নিজের স্ত্রীয়ের উপর হওয়া মানসিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি। এমনকি এক সময় সে নিজেও কেমন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে দয়ার দেবত্ব নিয়ে। তার কিশোরী স্ত্রী যখন তার সাথে পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে তখন তাকে বোঝানোর মত ব্যক্তিত্ব রাখে না।  কিন্তু তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ দেখতে পাই খোকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর যখন সে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলে। এর পূর্ব পর্যন্ত পিতার অন্যায়ের বিপক্ষে তাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথেই তার চারিত্রিক শক্তির দৃঢ়তা অর্জিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক বাবার সাথে লড়াই করেও সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারে না।    দয়াময়ী-  সতের বছরের কিশোরী গৃহবধূ দয়াময়ীর চরিত্রটি নিতান্তই সাধারণ ও চিরাচরিত নারীর প্রতিনিধি। খুব বেশি পড়ালেখা না জানা সংসারব্রত পালন করা এক নারী চরিত্র এটি। আমাদের সাধারণ নারীদেরই যে বিভিন্ন রূপ সেটি দেখা যায় তার মাঝে। যেমন- খোকার কাছে সে মায়ের মত সেই সাথে খেলার সাথী, উমাপ্রসাদের কাছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর কালিকিঙ্করের কাছে একই সাথে স্নেহময়ী মেয়ে আবার মমতাময়ী মায়ের মত। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল যে যে পুরুষ তাকে যেভাবে দেখতে চায় সে তাকে সেই রূপেই তুলে ধরে। যার ফলে এক সাধারণ ও ক্ষমতাহীন (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক দৃঢ়তাহীন) দয়াময়ীর উপর দেবত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় সে চুপ করে থাকে। নিজের অবস্থান জানাতে পারে না।  এই চরিত্রটির অন্য স্তর দেখি আমরা তখন যখন কিনা সে নিজ ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে বা তার মধ্যে দেবত্ব পাওয়ার লোভ প্রকাশ পায়। এই কারনেই সে উমাপ্রসাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধা দেয়। এমনকি তার প্রিয় খোকার অসুখে নিজ দেবত্ব জাহির করতে গিয়ে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। ফলাফল তার হাতে খোকার মৃত্যু। শেষ দৃশ্যে আমরা তার পাগলপ্রায় অবস্থাটা লক্ষ্য করলে দেখি তার মাঝে খোকার মৃত্যু শোক নেই বরং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ।  এভাবেই এক সাধারণ কিশোরী গৃহবধূ যখন বিশেষ ক্ষমতা পায় তার মধ্য দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন স্তর উঠে আসে। এক দিকে স্বামীর স্মৃতিতে অশ্রু ঝরায় তো অপরদিকে স্বামীর সাথে ঘর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।    হরসুন্দরী-  এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় ও প্রতিবাদী চরিত্র হল বাড়ির বড় বউ হরসুন্দরী। যেখানে দয়াময়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বশুরের হাতের পুতুল সেখানে হরসুন্দরী হল সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নারী। চলচ্চিত্রটির সময়কাল এমন এক যুগের যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবল, সেই যুগে কোন নারীর এতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।  দয়াময়ীকে যখন সবাই দেবী হিসেবে মেনে নেয় তখন এর বিরোধিতা করা একমাত্র ব্যক্তি ছিল হরসুন্দরী। এমনকি সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারটি মেনে নেয়ার জন্য ভর্ৎসনা জানায়। এর পিছনে হয়তোবা মানব মনের সাধারণ হিংসা প্রবৃত্তিও থাকতে পারে। কেননা চলচ্চিত্রের প্রথম থেকেই আমরা দেখি সবার প্রিয় ছিল দয়াময়ী। তার সাথে সবারই কেমন যেন দূরত্ব। দয়াময়ীর উপর দেবত্ব আরোপের পর সবাই তার পূজা করতে থাকে। কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়।  দয়াময়ী আলাদা নিচে ঘর পাওয়ার পর তার উক্তি "তোর তো ভালই হল উপর নিচ করতে হবে না"- এর মধ্য দিয়েও একটি সুক্ষ্ম খোঁচা পরিলক্ষিত হয়।  শেষে এসে দয়াময়ীকে রাক্ষুসী আখ্যা দিয়ে সে যেন তার আগের অবস্থানের বরখেলাপ করে।    তারাপ্রসাদ-  দেবী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নিস্ক্রিয় চরিত্র হল উমাপ্রসাদের বড় ভাই তারাপ্রসাদ। তাকে দেখা যায় তার বাবার শাসনের ছায়ায় থাকা এক ব্যক্তি যার নিজের কোন রায় নেই। সে মাতাল অবস্থায় নিজের হুঁশ রাখতে পারে না। তার স্ত্রী তাকে ভর্ৎসনা করলেও সে সঠিক পথে চলে না। চরিত্রটি এতটাই নির্লিপ্ত যে তার পুত্রের অসুখের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারে না পাছে তার বাবার বিরুদ্ধে না তা চলে যায়।  তারাপ্রসাদের চরিত্রটির মানসিকতা সমাজের বুদ্ধি বিবেকহীন মেরুদণ্ডহীন পুরুষদের প্রতিনিধি।      ভিজ্যুয়াল উপাদানের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা বিশ্লেষণঃ  ভিজ্যুয়াল উপাদান যেমন ফ্রেম, আলো, শব্দ প্রভৃতির নান্দনিক ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ভিজ্যুয়াল আস্পেক্ট তৈরি করেছে। উপাদানগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাহ্যিক নয় অন্তর্গত অর্থ ও ফুটে উঠেছে। এখানে দেবীর কয়েকটি দৃশ্য ও ফ্রেমের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোর ব্যবহার আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরা হল-   প্রথমে পূজা উদযাপনের দৃশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম পাওয়া যায়। যেমন- পূজা অর্চনার সময় বিরাট দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের অবস্থান দেখে মনে হয় প্রতিমাটি যেন তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা এই তথ্যটিই পাই যে ধর্মচর্চার আতিশয্যে কালিকিঙ্কর পিষ্ট। আলোক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফ্রেমটিতে এই তথ্যই উঠে আসে। সেখানে দুর্গা প্রতিমার আলোতে অবস্থান আর কালিকিঙ্করকে অন্ধকারে রাখার মাধ্যমে আলোর সামনে থেকেও তার মাঝের ধর্মান্ধতার অভিশাপ তুলে ধরা হয়েছে।  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info                           দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের পূজা অর্চনা    আবার বলির দৃশ্যটিতে দেখা যায় পরিচালক সরাসরি বলির দৃশ্য না দেখিয়ে সেটিকে আতশবাজির দৃশ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। আতশবাজির দৃশ্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দৃশ্য। বলির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে সকল পশুত্ব ও পাপকে দূরীভূত করা। এই দৃশ্যে সরাসরি বলির দৃশ্যের রক্তপাতের পরিবর্তে যেমন একটা উদযাপনের মুড সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সাথে অন্ধকার আকাশে আতশবাজির আলোর স্ফুটন যেন সব আঁধারকে সব পাপকে দূরীভূত করে দিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।      আতশবাজির আলোকচ্ছটা: দেবী (১৯৬০)  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    বলির দৃশ্য :দেবী (১৯৬০)                    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শনের দৃশ্যটির পর্যালোচনা করলে সেখানে ত্রিনয়ন দয়াময়ীর দুই চোখ আর টিপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। দৃশ্যের শুরুতে অন্ধকারে তিনটি চোখ দেখা যায় পড়ে তা ধীরে ধীরে দয়াময়ীর ত্রিনয়নে পরিনত হয়। অন্ধকারে তিনটি চোখ কালী দেবীরই ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় চোখ মুলত ধ্বংসের প্রতিনিধি। মানুষ হিসেবে দয়াময়ীর দুটি চোখ দেখানোই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই তৃতীয় চোখ দেখানোর ফলে দয়াময়ীর মাধ্যমে কোন কিছুর বিনাশের সংকেত দেয়। ফলাফল দেখি যখন তার হাতে খোকার মৃত্যু হয়। এখানে আলো ছায়ার অসাধারণ ব্যবহারের ফলে একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।          Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শন: দেবী (১৯৬০)    শেষ সিকুয়েন্সে যখন উমাপ্রসাদ দয়াময়ীকে ফিরিয়ে নিতে আসে তখন তাদের ঘরটি তীব্র আলোয় পূর্ণ থাকে। এটি এক ধরনের পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরি করে। প্রচুর আলোকচ্ছটার মাঝে যেন দয়ার আবির্ভাব হয় উমার সামনে। দয়া যে আর উমাপ্রসাদের স্ত্রী হিসেবে নেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার সাজ পোশাক বা ব্যবহারের মধ্যেও সেই অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সে যে নিজেও তার দেবত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে এ যেন তারই প্রমাণ।    Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   তীব্র আলোর মাঝে দয়ার আবির্ভাব: দেবী (১৯৬০)    সর্বশেষ দৃশ্যে যেখানে দয়াময়ীর প্রস্থান দেখানো হয়েছে সেই ফ্রেমটি ভীষণ তাৎপর্য রাখে। তার করুণ পরিণতির গন্তব্য যে কোন অজানার পথে সেটিকে দয়াময়ীর অন্তর্ধান হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এ যেন চিরায়ত নারীদেরই শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দেয় যাদের নাকি সমাজের সংস্কারের বলি হতে হয়, তাদের গন্তব্য হয় ঠিকানাহীন হারানোর দেশে।   Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে প্রস্থান: দেবী (১৯৬০)     দেবীকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তুলে ধরা কোন চলচ্চিত্র বললে ভুল হবে। সত্যজিৎ রায় এখানে পুরো একটি সমাজের, একটি সময়কালের অংশ ব্যক্তিজীবনের পারিবারিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি সম্পর্কগুলো দেখিয়েছেন। যার ফলে দুই প্রজন্মের চিন্তা চেতনা, আবেগ এমনকি ধর্মচর্চার যে বিস্তর ফারাক সেটি এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। একই সাথে যে কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা থেকে যে আবেশ বা অবসেশন তৈরি হয় তার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেই বার্তাটিই তিনি দেবীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। Read More...
Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info

                       দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের পূজা অর্চনা

আবার বলির দৃশ্যটিতে দেখা যায় পরিচালক সরাসরি বলির দৃশ্য না দেখিয়ে সেটিকে আতশবাজির দৃশ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। আতশবাজির দৃশ্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দৃশ্য। বলির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে সকল পশুত্ব ও পাপকে দূরীভূত করা। এই দৃশ্যে সরাসরি বলির দৃশ্যের রক্তপাতের পরিবর্তে যেমন একটা উদযাপনের মুড সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সাথে অন্ধকার আকাশে আতশবাজির আলোর স্ফুটন যেন সব আঁধারকে সব পাপকে দূরীভূত করে দিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Devi (1960) Film Poster, Directed By Satyajit Ray_BD Films Info    দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।     দেবী কাহিনী সংক্ষেপ:-  উনিশ শতকে বাংলার এক গ্রাম চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের গৃহবধূ দয়াময়ীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার। সে থাকে তার স্বামী উমাপ্রসাদ, উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, বড় ভাই তারাপ্রসাদ ও তার স্ত্রী হরসুন্দরী আর তাদের ছেলে খোকার সাথে একই বাড়িতে। গ্রামের জমিদার কালিকিঙ্কর  এক দিকে যেমন বিদ্বান অন্যদিকে কালীদেবীর ভক্ত। স্নেহময়ী দয়াময়ী শ্বশুর আর শ্বশুরবাড়িকে ভালভাবেই আগলে রাখে। একদিন রাতে কালিকিঙ্কর স্বপ্নে দেখেন তার স্নেহময়ী পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী কালীর রূপে। এই স্বপ্নকে সত্যি ভেবে তিনি দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে দেবী হিসেবে পূজা করতে শুরু করেন। প্রথমে দয়াময়ী এই ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু একদিন এক মৃতপ্রায় বালকের জীবন তার কাছে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে গেলে সবাই তাকে দেবী হিসেবে মেনে নিতে থাকে। এক সময় সে নিজেও স্বীকার করে নেয় তার মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি আছে। অবশেষে তার হাতে প্রিয় খোকার মৃত্যু দিয়ে এই ধর্মান্ধতার করুণ পরিণতি লাভ করে। ফলাফল পাগলপ্রায় দেবী মিলিয়ে যায় অজানায়।          দেবী চলচ্চিত্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ:-  পরিচালক সত্যজিৎ রায় এমন একটি সময়কালকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যেখানে একদিকে দেখা যায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিদ্বান ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে কুসংস্কার বর্জিত আধুনিক চিন্তা ধারণ করা বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, দ্বিতীয় জন উমাপ্রসাদ। আর সময়টি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল নিয়ে আবর্তিত। এই সময়ে এই দুই মানসিকতার প্রবণতা সমাজে তথা পুরো রাষ্ট্রে দেখা যেত। তাইতো উমাপ্রসাদের উক্তিতে যেমন উঠে আসে তার বাবা বিদ্বান হলেও সেকেলে একইভাবে ইংরেজি শিক্ষা নেয়া উমাপ্রসাদের প্রসঙ্গে দয়াময়ীকে বলেন "তোমার কেরেসটান স্বামী"। কারণ তৎকালীন সময়ে ইংরেজি চর্চা প্রাচীনদের কাছে খ্রিস্টান চর্চার শামিল ছিল। এভাবেই সেই সময়কালে সমাজের প্রাচীন অর্বাচীনের চিন্তা ধারার বিস্তর ফারাক এই পরিবারের গল্পটিতে উঠে এসেছে।  তৎকালীন নারী সমাজের একটি চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এই পরিবারের দুই নারী চরিত্র হরসুন্দরী ও দয়াময়ীকে সমান্তরালে রেখে পরিচালক দুই ধরনের নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। হরসুন্দরী ছিল প্রতিবাদী নারীসত্ত্বার প্রতীক অপরদিকে দয়াময়ী চিরায়ত ভীরু ও নিপীড়িত সত্ত্বার প্রতীক। সেই সময়কালটি যেহেতু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল তখনকার কিছু নারীদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হতে দেখা যেত। তারা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এর প্রতিবাদ জানাত। আমরা যদি কালিকিঙ্করের চরিত্রটি দেখি তবে তাতে ব্রিটিশ শাসকদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ছিলেনও তাদেরই এক জমিদার। যার কথাই শেষ হিসেবে ধরা হত।  হরসুন্দরী তার বিপক্ষে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে তার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাকারী ছিলেন। অন্যদিকে দয়াময়ী চিরায়ত নারী সমাজের সেই শোষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।   এভাবেই চারিত্রিক বৈপরীত্যের মাধ্যমে পরিচালক তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র আর তার নতুন পথে অগ্রসরের চিন্হ এঁকেছেন।             প্লট বিভাজনঃ-   ১) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপন   (ক) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা অর্চনা  (খ) বলি অনুষ্ঠান ও উমাপ্রসাদদের পূজা উদযাপন  (গ) দেবী দুর্গার বিসর্জন    ২) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন  (ক) দয়াময়ী ও খোকার মাঝে শক্ত বন্ধন  (খ) কালিকিঙ্করের সেবা শুশ্রূষা করে দয়াময়ী  (গ) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন    ৩) দয়াময়ীকে দেবী রূপে পূজা অর্চনা  (ক) কালিকিঙ্কর দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে  (খ) দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু হয় দয়াময়ীর  (গ) দয়াময়ীর জন্য পৃথক ঘর দেয়া হয়  (ঘ) দয়াময়ীর ইচ্ছায় হরসুন্দরী উমাপ্রসাদকে কাছে চিঠি লিখে জ্ঞাত করে    ৪) দয়াময়ীর শক্তির প্রকাশ  (ক) দয়াময়ীর কাছে মুমূর্ষু নাতিকে বাঁচিয়ে তুলতে নিয়ে আসে এক বৃদ্ধ  (খ) শিশুটিকে দয়াময়ীর চরণামৃত খাওয়ানো হয়  (গ) উমাপ্রসাদ বাড়িতে ফিরে দয়াময়ীকে দেবীর আসনে দেখে  (ঘ) উমাপ্রসাদ আর কালিকিঙ্করের মাঝে বাকবিতণ্ডা  (ঙ) মুমূর্ষু শিশুটি বেঁচে উঠে  (চ) দয়াময়ীর শক্তির ব্যপারে কালিকিঙ্করের বিশ্বাস দৃঢ় হয়    ৫) উমাপ্রসাদ ও দয়াময়ীর বাড়ি থেকে পালানো  (ক) উমাপ্রসাদ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে  (খ) দয়াময়ীকে উমাপ্রসাদ পালিয়ে গৃহ ত্যাগের জন্য রাজি করায়  (গ) দয়াময়ী এবং উমাপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালায়  (ঘ) মাঝপথে দয়াময়ী পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়    ৬) খোকার মৃত্যু  (ক) দয়াময়ীর পূজা অর্চনা চলতে থাকে  (খ) এক রাতে খোকা অসুস্থ হয়ে পড়ে  (গ) অসুস্থ খোকাকে কালিকিঙ্করের অজ্ঞাতে চিকিৎসক দেখান হরসুন্দরী  (ঘ) খোকাকে দয়াময়ীর কাছে নেয়া হয়  (ঙ) খোকাকে সুস্থ করতে দয়াময়ী রাতে তার কাছে রেখে দেয়  (চ) খোকার মৃত্যু    ৭) দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ  (ক) উমাপ্রসাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারে খোকার মৃত্যু সংবাদ  (খ) কালিকিঙ্করকে খোকার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে উমাপ্রসাদ  (গ) দয়াময়ীকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় সে  (ঘ) নিজ ঘরে পাগল প্রায় দয়াময়ীকে দেখতে পায় উমাপ্রসাদ  (ঙ) তার কাছে বাঁচার আকুতি জানায় দয়াময়ী  (চ) কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে অজানায় মিলিয়ে যায় দয়াময়ী    প্লট বিশ্লেষণঃ  দেবী চলচ্চিত্রের শুরু হয় জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে। উমাপ্রসাদের কলকাতা যাত্রা আর কালিকিঙ্করের স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে দয়াময়ীকে পূজা করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর একটি শিশু কাকতালীয়ভাবে দয়াময়ীর কাছে বেঁচে উঠে। যার ফলে তার দেবত্ব ভাবের বিস্তার লাভ করে। নিজ শিক্ষা আর সেই সাথে গুরুজনেরর কুসংস্কারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উমাপ্রসাদ। দয়াময়ীও নিজ ক্ষমতার মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে শুরু করে। ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে তার হাতে আদরের খোকার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকে একটি পরিবার তথা পুরো একটি সমাজ ও গোষ্ঠীর কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস। ফলে আরোপিত দেবীর ভাগ্যেও জোটে বিসর্জনের পরিণতি।    চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ-  দেবী চলচ্চিত্র শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা নিয়ে নয়। এটি একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও। প্রতিটি চরিত্র এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেছে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা ও দেবীর নান্দনিকতার প্রকাশ পায়।  এখানে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা চেতনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল।    কালিকিঙ্কর-  কালিকিঙ্কর অন্যতম মূল চরিত্র এই চলচ্চিত্রের। জমিদার ও ভুমিপতি এই ব্যক্তি তার কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে দৃঢ় চেতন। তার বাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী কালীর নিয়মিত আরাধনা করে সে। সেই  সাথে ঘটা করে দুর্গা পুজাও করে বাড়িতে। তার ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী তার বিশেষ স্নেহভাজন সেই সাথে তাকে সে নিজের মা বলেই ডাকে, যেমনটা সে মনে করে থাকে তার অধিষ্ঠিত দেবী কালী্র ক্ষেত্রেও। তার মনের এই সুপ্ত ইচ্ছাটি স্বপ্নের মাধ্যমে উঠে আসে। এর বিশ্লেষণ আমরা পাই মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার মতে-"Dreams are the fulfillment of wishes, and sometimes that dreams represent the fulfillment of wishes."  এই কথাটিকে আমরা যদি চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষিতে দেখি তবে আরও স্পষ্ট উল্লেখ পাই কালিকিঙ্করের উক্তির মধ্য দিয়ে। সে একদিকে দয়াময়ীকে দিয়ে পা মালিশ করায় অন্য দিকে বলে তার মা অর্থাৎ দয়ার জন্যই সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেনি। এই যে দয়াময়ীকে নিজের মা হিসেবে দেখতে চাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা থেকেই স্বপ্নে তাকে দেবী রূপে দর্শন।  আবার তার কুলপতি ও একরোখা মনোভাবের জন্যই সে খোকার মৃত্যুর পরও তার আরোপিত দেবীভাবের সংস্কারের কুফল মেনে নেয়নি। এমনকি তার প্রিয় পুত্রবধূর অসহায় অবস্থাও তার সিদ্ধান্তের কোন চ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বিদ্বান কিন্তু ধর্মান্ধ এক দৃঢ় স্বৈরাচারী জমিদারের চরিত্র বলা যেতে পারে কালিকিঙ্করকে।    উমাপ্রসাদ-  কালিকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র উমাপ্রসাদের সাথে তার বাবার ফারাক এক যুগের। সেই সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, সংস্কারও ভিন্ন। সত্যজিৎ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই চরিত্রটি সময়ের সাথে সাথে দৃঢ় হয়েছে। তার কথার সত্যতা আমরা খুঁজে পাই চলচ্চিত্রে।  প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি এমন এক উমাপ্রসাদকে যে কিনা ইংরেজি শিক্ষার দাম্ভিকতায় তার বাবাকে সেকেল বলে আখ্যা দেয়। অথচ বিধবা বিবাহে সমর্থন দেয়া, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা আধুনিক চিন্তার এই যুবকই নিজের স্ত্রীয়ের উপর হওয়া মানসিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি। এমনকি এক সময় সে নিজেও কেমন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে দয়ার দেবত্ব নিয়ে। তার কিশোরী স্ত্রী যখন তার সাথে পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে তখন তাকে বোঝানোর মত ব্যক্তিত্ব রাখে না।  কিন্তু তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ দেখতে পাই খোকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর যখন সে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলে। এর পূর্ব পর্যন্ত পিতার অন্যায়ের বিপক্ষে তাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথেই তার চারিত্রিক শক্তির দৃঢ়তা অর্জিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক বাবার সাথে লড়াই করেও সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারে না।    দয়াময়ী-  সতের বছরের কিশোরী গৃহবধূ দয়াময়ীর চরিত্রটি নিতান্তই সাধারণ ও চিরাচরিত নারীর প্রতিনিধি। খুব বেশি পড়ালেখা না জানা সংসারব্রত পালন করা এক নারী চরিত্র এটি। আমাদের সাধারণ নারীদেরই যে বিভিন্ন রূপ সেটি দেখা যায় তার মাঝে। যেমন- খোকার কাছে সে মায়ের মত সেই সাথে খেলার সাথী, উমাপ্রসাদের কাছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর কালিকিঙ্করের কাছে একই সাথে স্নেহময়ী মেয়ে আবার মমতাময়ী মায়ের মত। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল যে যে পুরুষ তাকে যেভাবে দেখতে চায় সে তাকে সেই রূপেই তুলে ধরে। যার ফলে এক সাধারণ ও ক্ষমতাহীন (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক দৃঢ়তাহীন) দয়াময়ীর উপর দেবত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় সে চুপ করে থাকে। নিজের অবস্থান জানাতে পারে না।  এই চরিত্রটির অন্য স্তর দেখি আমরা তখন যখন কিনা সে নিজ ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে বা তার মধ্যে দেবত্ব পাওয়ার লোভ প্রকাশ পায়। এই কারনেই সে উমাপ্রসাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধা দেয়। এমনকি তার প্রিয় খোকার অসুখে নিজ দেবত্ব জাহির করতে গিয়ে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। ফলাফল তার হাতে খোকার মৃত্যু। শেষ দৃশ্যে আমরা তার পাগলপ্রায় অবস্থাটা লক্ষ্য করলে দেখি তার মাঝে খোকার মৃত্যু শোক নেই বরং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ।  এভাবেই এক সাধারণ কিশোরী গৃহবধূ যখন বিশেষ ক্ষমতা পায় তার মধ্য দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন স্তর উঠে আসে। এক দিকে স্বামীর স্মৃতিতে অশ্রু ঝরায় তো অপরদিকে স্বামীর সাথে ঘর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।    হরসুন্দরী-  এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় ও প্রতিবাদী চরিত্র হল বাড়ির বড় বউ হরসুন্দরী। যেখানে দয়াময়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বশুরের হাতের পুতুল সেখানে হরসুন্দরী হল সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নারী। চলচ্চিত্রটির সময়কাল এমন এক যুগের যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবল, সেই যুগে কোন নারীর এতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।  দয়াময়ীকে যখন সবাই দেবী হিসেবে মেনে নেয় তখন এর বিরোধিতা করা একমাত্র ব্যক্তি ছিল হরসুন্দরী। এমনকি সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারটি মেনে নেয়ার জন্য ভর্ৎসনা জানায়। এর পিছনে হয়তোবা মানব মনের সাধারণ হিংসা প্রবৃত্তিও থাকতে পারে। কেননা চলচ্চিত্রের প্রথম থেকেই আমরা দেখি সবার প্রিয় ছিল দয়াময়ী। তার সাথে সবারই কেমন যেন দূরত্ব। দয়াময়ীর উপর দেবত্ব আরোপের পর সবাই তার পূজা করতে থাকে। কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়।  দয়াময়ী আলাদা নিচে ঘর পাওয়ার পর তার উক্তি "তোর তো ভালই হল উপর নিচ করতে হবে না"- এর মধ্য দিয়েও একটি সুক্ষ্ম খোঁচা পরিলক্ষিত হয়।  শেষে এসে দয়াময়ীকে রাক্ষুসী আখ্যা দিয়ে সে যেন তার আগের অবস্থানের বরখেলাপ করে।    তারাপ্রসাদ-  দেবী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নিস্ক্রিয় চরিত্র হল উমাপ্রসাদের বড় ভাই তারাপ্রসাদ। তাকে দেখা যায় তার বাবার শাসনের ছায়ায় থাকা এক ব্যক্তি যার নিজের কোন রায় নেই। সে মাতাল অবস্থায় নিজের হুঁশ রাখতে পারে না। তার স্ত্রী তাকে ভর্ৎসনা করলেও সে সঠিক পথে চলে না। চরিত্রটি এতটাই নির্লিপ্ত যে তার পুত্রের অসুখের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারে না পাছে তার বাবার বিরুদ্ধে না তা চলে যায়।  তারাপ্রসাদের চরিত্রটির মানসিকতা সমাজের বুদ্ধি বিবেকহীন মেরুদণ্ডহীন পুরুষদের প্রতিনিধি।      ভিজ্যুয়াল উপাদানের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা বিশ্লেষণঃ  ভিজ্যুয়াল উপাদান যেমন ফ্রেম, আলো, শব্দ প্রভৃতির নান্দনিক ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ভিজ্যুয়াল আস্পেক্ট তৈরি করেছে। উপাদানগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাহ্যিক নয় অন্তর্গত অর্থ ও ফুটে উঠেছে। এখানে দেবীর কয়েকটি দৃশ্য ও ফ্রেমের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোর ব্যবহার আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরা হল-   প্রথমে পূজা উদযাপনের দৃশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম পাওয়া যায়। যেমন- পূজা অর্চনার সময় বিরাট দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের অবস্থান দেখে মনে হয় প্রতিমাটি যেন তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা এই তথ্যটিই পাই যে ধর্মচর্চার আতিশয্যে কালিকিঙ্কর পিষ্ট। আলোক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফ্রেমটিতে এই তথ্যই উঠে আসে। সেখানে দুর্গা প্রতিমার আলোতে অবস্থান আর কালিকিঙ্করকে অন্ধকারে রাখার মাধ্যমে আলোর সামনে থেকেও তার মাঝের ধর্মান্ধতার অভিশাপ তুলে ধরা হয়েছে।  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info                           দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের পূজা অর্চনা    আবার বলির দৃশ্যটিতে দেখা যায় পরিচালক সরাসরি বলির দৃশ্য না দেখিয়ে সেটিকে আতশবাজির দৃশ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। আতশবাজির দৃশ্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দৃশ্য। বলির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে সকল পশুত্ব ও পাপকে দূরীভূত করা। এই দৃশ্যে সরাসরি বলির দৃশ্যের রক্তপাতের পরিবর্তে যেমন একটা উদযাপনের মুড সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সাথে অন্ধকার আকাশে আতশবাজির আলোর স্ফুটন যেন সব আঁধারকে সব পাপকে দূরীভূত করে দিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।      আতশবাজির আলোকচ্ছটা: দেবী (১৯৬০)  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    বলির দৃশ্য :দেবী (১৯৬০)                    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শনের দৃশ্যটির পর্যালোচনা করলে সেখানে ত্রিনয়ন দয়াময়ীর দুই চোখ আর টিপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। দৃশ্যের শুরুতে অন্ধকারে তিনটি চোখ দেখা যায় পড়ে তা ধীরে ধীরে দয়াময়ীর ত্রিনয়নে পরিনত হয়। অন্ধকারে তিনটি চোখ কালী দেবীরই ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় চোখ মুলত ধ্বংসের প্রতিনিধি। মানুষ হিসেবে দয়াময়ীর দুটি চোখ দেখানোই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই তৃতীয় চোখ দেখানোর ফলে দয়াময়ীর মাধ্যমে কোন কিছুর বিনাশের সংকেত দেয়। ফলাফল দেখি যখন তার হাতে খোকার মৃত্যু হয়। এখানে আলো ছায়ার অসাধারণ ব্যবহারের ফলে একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।          Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শন: দেবী (১৯৬০)    শেষ সিকুয়েন্সে যখন উমাপ্রসাদ দয়াময়ীকে ফিরিয়ে নিতে আসে তখন তাদের ঘরটি তীব্র আলোয় পূর্ণ থাকে। এটি এক ধরনের পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরি করে। প্রচুর আলোকচ্ছটার মাঝে যেন দয়ার আবির্ভাব হয় উমার সামনে। দয়া যে আর উমাপ্রসাদের স্ত্রী হিসেবে নেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার সাজ পোশাক বা ব্যবহারের মধ্যেও সেই অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সে যে নিজেও তার দেবত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে এ যেন তারই প্রমাণ।    Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   তীব্র আলোর মাঝে দয়ার আবির্ভাব: দেবী (১৯৬০)    সর্বশেষ দৃশ্যে যেখানে দয়াময়ীর প্রস্থান দেখানো হয়েছে সেই ফ্রেমটি ভীষণ তাৎপর্য রাখে। তার করুণ পরিণতির গন্তব্য যে কোন অজানার পথে সেটিকে দয়াময়ীর অন্তর্ধান হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এ যেন চিরায়ত নারীদেরই শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দেয় যাদের নাকি সমাজের সংস্কারের বলি হতে হয়, তাদের গন্তব্য হয় ঠিকানাহীন হারানোর দেশে।   Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে প্রস্থান: দেবী (১৯৬০)     দেবীকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তুলে ধরা কোন চলচ্চিত্র বললে ভুল হবে। সত্যজিৎ রায় এখানে পুরো একটি সমাজের, একটি সময়কালের অংশ ব্যক্তিজীবনের পারিবারিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি সম্পর্কগুলো দেখিয়েছেন। যার ফলে দুই প্রজন্মের চিন্তা চেতনা, আবেগ এমনকি ধর্মচর্চার যে বিস্তর ফারাক সেটি এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। একই সাথে যে কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা থেকে যে আবেশ বা অবসেশন তৈরি হয় তার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেই বার্তাটিই তিনি দেবীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। Read More...
  আতশবাজির আলোকচ্ছটা: দেবী (১৯৬০)
Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Devi (1960) Film Poster, Directed By Satyajit Ray_BD Films Info    দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।     দেবী কাহিনী সংক্ষেপ:-  উনিশ শতকে বাংলার এক গ্রাম চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের গৃহবধূ দয়াময়ীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার। সে থাকে তার স্বামী উমাপ্রসাদ, উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, বড় ভাই তারাপ্রসাদ ও তার স্ত্রী হরসুন্দরী আর তাদের ছেলে খোকার সাথে একই বাড়িতে। গ্রামের জমিদার কালিকিঙ্কর  এক দিকে যেমন বিদ্বান অন্যদিকে কালীদেবীর ভক্ত। স্নেহময়ী দয়াময়ী শ্বশুর আর শ্বশুরবাড়িকে ভালভাবেই আগলে রাখে। একদিন রাতে কালিকিঙ্কর স্বপ্নে দেখেন তার স্নেহময়ী পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী কালীর রূপে। এই স্বপ্নকে সত্যি ভেবে তিনি দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে দেবী হিসেবে পূজা করতে শুরু করেন। প্রথমে দয়াময়ী এই ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু একদিন এক মৃতপ্রায় বালকের জীবন তার কাছে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে গেলে সবাই তাকে দেবী হিসেবে মেনে নিতে থাকে। এক সময় সে নিজেও স্বীকার করে নেয় তার মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি আছে। অবশেষে তার হাতে প্রিয় খোকার মৃত্যু দিয়ে এই ধর্মান্ধতার করুণ পরিণতি লাভ করে। ফলাফল পাগলপ্রায় দেবী মিলিয়ে যায় অজানায়।          দেবী চলচ্চিত্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ:-  পরিচালক সত্যজিৎ রায় এমন একটি সময়কালকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যেখানে একদিকে দেখা যায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিদ্বান ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে কুসংস্কার বর্জিত আধুনিক চিন্তা ধারণ করা বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, দ্বিতীয় জন উমাপ্রসাদ। আর সময়টি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল নিয়ে আবর্তিত। এই সময়ে এই দুই মানসিকতার প্রবণতা সমাজে তথা পুরো রাষ্ট্রে দেখা যেত। তাইতো উমাপ্রসাদের উক্তিতে যেমন উঠে আসে তার বাবা বিদ্বান হলেও সেকেলে একইভাবে ইংরেজি শিক্ষা নেয়া উমাপ্রসাদের প্রসঙ্গে দয়াময়ীকে বলেন "তোমার কেরেসটান স্বামী"। কারণ তৎকালীন সময়ে ইংরেজি চর্চা প্রাচীনদের কাছে খ্রিস্টান চর্চার শামিল ছিল। এভাবেই সেই সময়কালে সমাজের প্রাচীন অর্বাচীনের চিন্তা ধারার বিস্তর ফারাক এই পরিবারের গল্পটিতে উঠে এসেছে।  তৎকালীন নারী সমাজের একটি চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এই পরিবারের দুই নারী চরিত্র হরসুন্দরী ও দয়াময়ীকে সমান্তরালে রেখে পরিচালক দুই ধরনের নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। হরসুন্দরী ছিল প্রতিবাদী নারীসত্ত্বার প্রতীক অপরদিকে দয়াময়ী চিরায়ত ভীরু ও নিপীড়িত সত্ত্বার প্রতীক। সেই সময়কালটি যেহেতু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল তখনকার কিছু নারীদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হতে দেখা যেত। তারা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এর প্রতিবাদ জানাত। আমরা যদি কালিকিঙ্করের চরিত্রটি দেখি তবে তাতে ব্রিটিশ শাসকদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ছিলেনও তাদেরই এক জমিদার। যার কথাই শেষ হিসেবে ধরা হত।  হরসুন্দরী তার বিপক্ষে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে তার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাকারী ছিলেন। অন্যদিকে দয়াময়ী চিরায়ত নারী সমাজের সেই শোষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।   এভাবেই চারিত্রিক বৈপরীত্যের মাধ্যমে পরিচালক তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র আর তার নতুন পথে অগ্রসরের চিন্হ এঁকেছেন।             প্লট বিভাজনঃ-   ১) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপন   (ক) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা অর্চনা  (খ) বলি অনুষ্ঠান ও উমাপ্রসাদদের পূজা উদযাপন  (গ) দেবী দুর্গার বিসর্জন    ২) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন  (ক) দয়াময়ী ও খোকার মাঝে শক্ত বন্ধন  (খ) কালিকিঙ্করের সেবা শুশ্রূষা করে দয়াময়ী  (গ) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন    ৩) দয়াময়ীকে দেবী রূপে পূজা অর্চনা  (ক) কালিকিঙ্কর দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে  (খ) দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু হয় দয়াময়ীর  (গ) দয়াময়ীর জন্য পৃথক ঘর দেয়া হয়  (ঘ) দয়াময়ীর ইচ্ছায় হরসুন্দরী উমাপ্রসাদকে কাছে চিঠি লিখে জ্ঞাত করে    ৪) দয়াময়ীর শক্তির প্রকাশ  (ক) দয়াময়ীর কাছে মুমূর্ষু নাতিকে বাঁচিয়ে তুলতে নিয়ে আসে এক বৃদ্ধ  (খ) শিশুটিকে দয়াময়ীর চরণামৃত খাওয়ানো হয়  (গ) উমাপ্রসাদ বাড়িতে ফিরে দয়াময়ীকে দেবীর আসনে দেখে  (ঘ) উমাপ্রসাদ আর কালিকিঙ্করের মাঝে বাকবিতণ্ডা  (ঙ) মুমূর্ষু শিশুটি বেঁচে উঠে  (চ) দয়াময়ীর শক্তির ব্যপারে কালিকিঙ্করের বিশ্বাস দৃঢ় হয়    ৫) উমাপ্রসাদ ও দয়াময়ীর বাড়ি থেকে পালানো  (ক) উমাপ্রসাদ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে  (খ) দয়াময়ীকে উমাপ্রসাদ পালিয়ে গৃহ ত্যাগের জন্য রাজি করায়  (গ) দয়াময়ী এবং উমাপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালায়  (ঘ) মাঝপথে দয়াময়ী পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়    ৬) খোকার মৃত্যু  (ক) দয়াময়ীর পূজা অর্চনা চলতে থাকে  (খ) এক রাতে খোকা অসুস্থ হয়ে পড়ে  (গ) অসুস্থ খোকাকে কালিকিঙ্করের অজ্ঞাতে চিকিৎসক দেখান হরসুন্দরী  (ঘ) খোকাকে দয়াময়ীর কাছে নেয়া হয়  (ঙ) খোকাকে সুস্থ করতে দয়াময়ী রাতে তার কাছে রেখে দেয়  (চ) খোকার মৃত্যু    ৭) দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ  (ক) উমাপ্রসাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারে খোকার মৃত্যু সংবাদ  (খ) কালিকিঙ্করকে খোকার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে উমাপ্রসাদ  (গ) দয়াময়ীকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় সে  (ঘ) নিজ ঘরে পাগল প্রায় দয়াময়ীকে দেখতে পায় উমাপ্রসাদ  (ঙ) তার কাছে বাঁচার আকুতি জানায় দয়াময়ী  (চ) কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে অজানায় মিলিয়ে যায় দয়াময়ী    প্লট বিশ্লেষণঃ  দেবী চলচ্চিত্রের শুরু হয় জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে। উমাপ্রসাদের কলকাতা যাত্রা আর কালিকিঙ্করের স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে দয়াময়ীকে পূজা করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর একটি শিশু কাকতালীয়ভাবে দয়াময়ীর কাছে বেঁচে উঠে। যার ফলে তার দেবত্ব ভাবের বিস্তার লাভ করে। নিজ শিক্ষা আর সেই সাথে গুরুজনেরর কুসংস্কারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উমাপ্রসাদ। দয়াময়ীও নিজ ক্ষমতার মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে শুরু করে। ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে তার হাতে আদরের খোকার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকে একটি পরিবার তথা পুরো একটি সমাজ ও গোষ্ঠীর কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস। ফলে আরোপিত দেবীর ভাগ্যেও জোটে বিসর্জনের পরিণতি।    চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ-  দেবী চলচ্চিত্র শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা নিয়ে নয়। এটি একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও। প্রতিটি চরিত্র এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেছে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা ও দেবীর নান্দনিকতার প্রকাশ পায়।  এখানে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা চেতনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল।    কালিকিঙ্কর-  কালিকিঙ্কর অন্যতম মূল চরিত্র এই চলচ্চিত্রের। জমিদার ও ভুমিপতি এই ব্যক্তি তার কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে দৃঢ় চেতন। তার বাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী কালীর নিয়মিত আরাধনা করে সে। সেই  সাথে ঘটা করে দুর্গা পুজাও করে বাড়িতে। তার ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী তার বিশেষ স্নেহভাজন সেই সাথে তাকে সে নিজের মা বলেই ডাকে, যেমনটা সে মনে করে থাকে তার অধিষ্ঠিত দেবী কালী্র ক্ষেত্রেও। তার মনের এই সুপ্ত ইচ্ছাটি স্বপ্নের মাধ্যমে উঠে আসে। এর বিশ্লেষণ আমরা পাই মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার মতে-"Dreams are the fulfillment of wishes, and sometimes that dreams represent the fulfillment of wishes."  এই কথাটিকে আমরা যদি চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষিতে দেখি তবে আরও স্পষ্ট উল্লেখ পাই কালিকিঙ্করের উক্তির মধ্য দিয়ে। সে একদিকে দয়াময়ীকে দিয়ে পা মালিশ করায় অন্য দিকে বলে তার মা অর্থাৎ দয়ার জন্যই সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেনি। এই যে দয়াময়ীকে নিজের মা হিসেবে দেখতে চাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা থেকেই স্বপ্নে তাকে দেবী রূপে দর্শন।  আবার তার কুলপতি ও একরোখা মনোভাবের জন্যই সে খোকার মৃত্যুর পরও তার আরোপিত দেবীভাবের সংস্কারের কুফল মেনে নেয়নি। এমনকি তার প্রিয় পুত্রবধূর অসহায় অবস্থাও তার সিদ্ধান্তের কোন চ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বিদ্বান কিন্তু ধর্মান্ধ এক দৃঢ় স্বৈরাচারী জমিদারের চরিত্র বলা যেতে পারে কালিকিঙ্করকে।    উমাপ্রসাদ-  কালিকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র উমাপ্রসাদের সাথে তার বাবার ফারাক এক যুগের। সেই সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, সংস্কারও ভিন্ন। সত্যজিৎ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই চরিত্রটি সময়ের সাথে সাথে দৃঢ় হয়েছে। তার কথার সত্যতা আমরা খুঁজে পাই চলচ্চিত্রে।  প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি এমন এক উমাপ্রসাদকে যে কিনা ইংরেজি শিক্ষার দাম্ভিকতায় তার বাবাকে সেকেল বলে আখ্যা দেয়। অথচ বিধবা বিবাহে সমর্থন দেয়া, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা আধুনিক চিন্তার এই যুবকই নিজের স্ত্রীয়ের উপর হওয়া মানসিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি। এমনকি এক সময় সে নিজেও কেমন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে দয়ার দেবত্ব নিয়ে। তার কিশোরী স্ত্রী যখন তার সাথে পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে তখন তাকে বোঝানোর মত ব্যক্তিত্ব রাখে না।  কিন্তু তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ দেখতে পাই খোকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর যখন সে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলে। এর পূর্ব পর্যন্ত পিতার অন্যায়ের বিপক্ষে তাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথেই তার চারিত্রিক শক্তির দৃঢ়তা অর্জিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক বাবার সাথে লড়াই করেও সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারে না।    দয়াময়ী-  সতের বছরের কিশোরী গৃহবধূ দয়াময়ীর চরিত্রটি নিতান্তই সাধারণ ও চিরাচরিত নারীর প্রতিনিধি। খুব বেশি পড়ালেখা না জানা সংসারব্রত পালন করা এক নারী চরিত্র এটি। আমাদের সাধারণ নারীদেরই যে বিভিন্ন রূপ সেটি দেখা যায় তার মাঝে। যেমন- খোকার কাছে সে মায়ের মত সেই সাথে খেলার সাথী, উমাপ্রসাদের কাছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর কালিকিঙ্করের কাছে একই সাথে স্নেহময়ী মেয়ে আবার মমতাময়ী মায়ের মত। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল যে যে পুরুষ তাকে যেভাবে দেখতে চায় সে তাকে সেই রূপেই তুলে ধরে। যার ফলে এক সাধারণ ও ক্ষমতাহীন (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক দৃঢ়তাহীন) দয়াময়ীর উপর দেবত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় সে চুপ করে থাকে। নিজের অবস্থান জানাতে পারে না।  এই চরিত্রটির অন্য স্তর দেখি আমরা তখন যখন কিনা সে নিজ ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে বা তার মধ্যে দেবত্ব পাওয়ার লোভ প্রকাশ পায়। এই কারনেই সে উমাপ্রসাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধা দেয়। এমনকি তার প্রিয় খোকার অসুখে নিজ দেবত্ব জাহির করতে গিয়ে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। ফলাফল তার হাতে খোকার মৃত্যু। শেষ দৃশ্যে আমরা তার পাগলপ্রায় অবস্থাটা লক্ষ্য করলে দেখি তার মাঝে খোকার মৃত্যু শোক নেই বরং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ।  এভাবেই এক সাধারণ কিশোরী গৃহবধূ যখন বিশেষ ক্ষমতা পায় তার মধ্য দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন স্তর উঠে আসে। এক দিকে স্বামীর স্মৃতিতে অশ্রু ঝরায় তো অপরদিকে স্বামীর সাথে ঘর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।    হরসুন্দরী-  এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় ও প্রতিবাদী চরিত্র হল বাড়ির বড় বউ হরসুন্দরী। যেখানে দয়াময়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বশুরের হাতের পুতুল সেখানে হরসুন্দরী হল সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নারী। চলচ্চিত্রটির সময়কাল এমন এক যুগের যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবল, সেই যুগে কোন নারীর এতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।  দয়াময়ীকে যখন সবাই দেবী হিসেবে মেনে নেয় তখন এর বিরোধিতা করা একমাত্র ব্যক্তি ছিল হরসুন্দরী। এমনকি সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারটি মেনে নেয়ার জন্য ভর্ৎসনা জানায়। এর পিছনে হয়তোবা মানব মনের সাধারণ হিংসা প্রবৃত্তিও থাকতে পারে। কেননা চলচ্চিত্রের প্রথম থেকেই আমরা দেখি সবার প্রিয় ছিল দয়াময়ী। তার সাথে সবারই কেমন যেন দূরত্ব। দয়াময়ীর উপর দেবত্ব আরোপের পর সবাই তার পূজা করতে থাকে। কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়।  দয়াময়ী আলাদা নিচে ঘর পাওয়ার পর তার উক্তি "তোর তো ভালই হল উপর নিচ করতে হবে না"- এর মধ্য দিয়েও একটি সুক্ষ্ম খোঁচা পরিলক্ষিত হয়।  শেষে এসে দয়াময়ীকে রাক্ষুসী আখ্যা দিয়ে সে যেন তার আগের অবস্থানের বরখেলাপ করে।    তারাপ্রসাদ-  দেবী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নিস্ক্রিয় চরিত্র হল উমাপ্রসাদের বড় ভাই তারাপ্রসাদ। তাকে দেখা যায় তার বাবার শাসনের ছায়ায় থাকা এক ব্যক্তি যার নিজের কোন রায় নেই। সে মাতাল অবস্থায় নিজের হুঁশ রাখতে পারে না। তার স্ত্রী তাকে ভর্ৎসনা করলেও সে সঠিক পথে চলে না। চরিত্রটি এতটাই নির্লিপ্ত যে তার পুত্রের অসুখের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারে না পাছে তার বাবার বিরুদ্ধে না তা চলে যায়।  তারাপ্রসাদের চরিত্রটির মানসিকতা সমাজের বুদ্ধি বিবেকহীন মেরুদণ্ডহীন পুরুষদের প্রতিনিধি।      ভিজ্যুয়াল উপাদানের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা বিশ্লেষণঃ  ভিজ্যুয়াল উপাদান যেমন ফ্রেম, আলো, শব্দ প্রভৃতির নান্দনিক ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ভিজ্যুয়াল আস্পেক্ট তৈরি করেছে। উপাদানগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাহ্যিক নয় অন্তর্গত অর্থ ও ফুটে উঠেছে। এখানে দেবীর কয়েকটি দৃশ্য ও ফ্রেমের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোর ব্যবহার আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরা হল-   প্রথমে পূজা উদযাপনের দৃশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম পাওয়া যায়। যেমন- পূজা অর্চনার সময় বিরাট দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের অবস্থান দেখে মনে হয় প্রতিমাটি যেন তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা এই তথ্যটিই পাই যে ধর্মচর্চার আতিশয্যে কালিকিঙ্কর পিষ্ট। আলোক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফ্রেমটিতে এই তথ্যই উঠে আসে। সেখানে দুর্গা প্রতিমার আলোতে অবস্থান আর কালিকিঙ্করকে অন্ধকারে রাখার মাধ্যমে আলোর সামনে থেকেও তার মাঝের ধর্মান্ধতার অভিশাপ তুলে ধরা হয়েছে।  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info                           দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের পূজা অর্চনা    আবার বলির দৃশ্যটিতে দেখা যায় পরিচালক সরাসরি বলির দৃশ্য না দেখিয়ে সেটিকে আতশবাজির দৃশ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। আতশবাজির দৃশ্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দৃশ্য। বলির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে সকল পশুত্ব ও পাপকে দূরীভূত করা। এই দৃশ্যে সরাসরি বলির দৃশ্যের রক্তপাতের পরিবর্তে যেমন একটা উদযাপনের মুড সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সাথে অন্ধকার আকাশে আতশবাজির আলোর স্ফুটন যেন সব আঁধারকে সব পাপকে দূরীভূত করে দিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।      আতশবাজির আলোকচ্ছটা: দেবী (১৯৬০)  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    বলির দৃশ্য :দেবী (১৯৬০)                    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শনের দৃশ্যটির পর্যালোচনা করলে সেখানে ত্রিনয়ন দয়াময়ীর দুই চোখ আর টিপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। দৃশ্যের শুরুতে অন্ধকারে তিনটি চোখ দেখা যায় পড়ে তা ধীরে ধীরে দয়াময়ীর ত্রিনয়নে পরিনত হয়। অন্ধকারে তিনটি চোখ কালী দেবীরই ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় চোখ মুলত ধ্বংসের প্রতিনিধি। মানুষ হিসেবে দয়াময়ীর দুটি চোখ দেখানোই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই তৃতীয় চোখ দেখানোর ফলে দয়াময়ীর মাধ্যমে কোন কিছুর বিনাশের সংকেত দেয়। ফলাফল দেখি যখন তার হাতে খোকার মৃত্যু হয়। এখানে আলো ছায়ার অসাধারণ ব্যবহারের ফলে একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।          Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শন: দেবী (১৯৬০)    শেষ সিকুয়েন্সে যখন উমাপ্রসাদ দয়াময়ীকে ফিরিয়ে নিতে আসে তখন তাদের ঘরটি তীব্র আলোয় পূর্ণ থাকে। এটি এক ধরনের পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরি করে। প্রচুর আলোকচ্ছটার মাঝে যেন দয়ার আবির্ভাব হয় উমার সামনে। দয়া যে আর উমাপ্রসাদের স্ত্রী হিসেবে নেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার সাজ পোশাক বা ব্যবহারের মধ্যেও সেই অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সে যে নিজেও তার দেবত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে এ যেন তারই প্রমাণ।    Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   তীব্র আলোর মাঝে দয়ার আবির্ভাব: দেবী (১৯৬০)    সর্বশেষ দৃশ্যে যেখানে দয়াময়ীর প্রস্থান দেখানো হয়েছে সেই ফ্রেমটি ভীষণ তাৎপর্য রাখে। তার করুণ পরিণতির গন্তব্য যে কোন অজানার পথে সেটিকে দয়াময়ীর অন্তর্ধান হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এ যেন চিরায়ত নারীদেরই শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দেয় যাদের নাকি সমাজের সংস্কারের বলি হতে হয়, তাদের গন্তব্য হয় ঠিকানাহীন হারানোর দেশে।   Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে প্রস্থান: দেবী (১৯৬০)     দেবীকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তুলে ধরা কোন চলচ্চিত্র বললে ভুল হবে। সত্যজিৎ রায় এখানে পুরো একটি সমাজের, একটি সময়কালের অংশ ব্যক্তিজীবনের পারিবারিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি সম্পর্কগুলো দেখিয়েছেন। যার ফলে দুই প্রজন্মের চিন্তা চেতনা, আবেগ এমনকি ধর্মচর্চার যে বিস্তর ফারাক সেটি এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। একই সাথে যে কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা থেকে যে আবেশ বা অবসেশন তৈরি হয় তার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেই বার্তাটিই তিনি দেবীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। Read More...
 বলির দৃশ্য :দেবী (১৯৬০)

            
কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শনের দৃশ্যটির পর্যালোচনা করলে সেখানে ত্রিনয়ন দয়াময়ীর দুই চোখ আর টিপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়দৃশ্যের শুরুতে অন্ধকারে তিনটি চোখ দেখা যায় পড়ে তা ধীরে ধীরে দয়াময়ীর ত্রিনয়নে পরিনত হয়। অন্ধকারে তিনটি চোখ কালী দেবীরই ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় চোখ মুলত ধ্বংসের প্রতিনিধি। মানুষ হিসেবে দয়াময়ীর দুটি চোখ দেখানোই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই তৃতীয় চোখ দেখানোর ফলে দয়াময়ীর মাধ্যমে কোন কিছুর বিনাশের সংকেত দেয়। ফলাফল দেখি যখন তার হাতে খোকার মৃত্যু হয়। এখানে আলো ছায়ার অসাধারণ ব্যবহারের ফলে একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
   

Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Devi (1960) Film Poster, Directed By Satyajit Ray_BD Films Info    দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।     দেবী কাহিনী সংক্ষেপ:-  উনিশ শতকে বাংলার এক গ্রাম চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের গৃহবধূ দয়াময়ীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার। সে থাকে তার স্বামী উমাপ্রসাদ, উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, বড় ভাই তারাপ্রসাদ ও তার স্ত্রী হরসুন্দরী আর তাদের ছেলে খোকার সাথে একই বাড়িতে। গ্রামের জমিদার কালিকিঙ্কর  এক দিকে যেমন বিদ্বান অন্যদিকে কালীদেবীর ভক্ত। স্নেহময়ী দয়াময়ী শ্বশুর আর শ্বশুরবাড়িকে ভালভাবেই আগলে রাখে। একদিন রাতে কালিকিঙ্কর স্বপ্নে দেখেন তার স্নেহময়ী পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী কালীর রূপে। এই স্বপ্নকে সত্যি ভেবে তিনি দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে দেবী হিসেবে পূজা করতে শুরু করেন। প্রথমে দয়াময়ী এই ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু একদিন এক মৃতপ্রায় বালকের জীবন তার কাছে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে গেলে সবাই তাকে দেবী হিসেবে মেনে নিতে থাকে। এক সময় সে নিজেও স্বীকার করে নেয় তার মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি আছে। অবশেষে তার হাতে প্রিয় খোকার মৃত্যু দিয়ে এই ধর্মান্ধতার করুণ পরিণতি লাভ করে। ফলাফল পাগলপ্রায় দেবী মিলিয়ে যায় অজানায়।          দেবী চলচ্চিত্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ:-  পরিচালক সত্যজিৎ রায় এমন একটি সময়কালকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যেখানে একদিকে দেখা যায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিদ্বান ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে কুসংস্কার বর্জিত আধুনিক চিন্তা ধারণ করা বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, দ্বিতীয় জন উমাপ্রসাদ। আর সময়টি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল নিয়ে আবর্তিত। এই সময়ে এই দুই মানসিকতার প্রবণতা সমাজে তথা পুরো রাষ্ট্রে দেখা যেত। তাইতো উমাপ্রসাদের উক্তিতে যেমন উঠে আসে তার বাবা বিদ্বান হলেও সেকেলে একইভাবে ইংরেজি শিক্ষা নেয়া উমাপ্রসাদের প্রসঙ্গে দয়াময়ীকে বলেন "তোমার কেরেসটান স্বামী"। কারণ তৎকালীন সময়ে ইংরেজি চর্চা প্রাচীনদের কাছে খ্রিস্টান চর্চার শামিল ছিল। এভাবেই সেই সময়কালে সমাজের প্রাচীন অর্বাচীনের চিন্তা ধারার বিস্তর ফারাক এই পরিবারের গল্পটিতে উঠে এসেছে।  তৎকালীন নারী সমাজের একটি চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এই পরিবারের দুই নারী চরিত্র হরসুন্দরী ও দয়াময়ীকে সমান্তরালে রেখে পরিচালক দুই ধরনের নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। হরসুন্দরী ছিল প্রতিবাদী নারীসত্ত্বার প্রতীক অপরদিকে দয়াময়ী চিরায়ত ভীরু ও নিপীড়িত সত্ত্বার প্রতীক। সেই সময়কালটি যেহেতু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল তখনকার কিছু নারীদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হতে দেখা যেত। তারা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এর প্রতিবাদ জানাত। আমরা যদি কালিকিঙ্করের চরিত্রটি দেখি তবে তাতে ব্রিটিশ শাসকদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ছিলেনও তাদেরই এক জমিদার। যার কথাই শেষ হিসেবে ধরা হত।  হরসুন্দরী তার বিপক্ষে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে তার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাকারী ছিলেন। অন্যদিকে দয়াময়ী চিরায়ত নারী সমাজের সেই শোষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।   এভাবেই চারিত্রিক বৈপরীত্যের মাধ্যমে পরিচালক তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র আর তার নতুন পথে অগ্রসরের চিন্হ এঁকেছেন।             প্লট বিভাজনঃ-   ১) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপন   (ক) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা অর্চনা  (খ) বলি অনুষ্ঠান ও উমাপ্রসাদদের পূজা উদযাপন  (গ) দেবী দুর্গার বিসর্জন    ২) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন  (ক) দয়াময়ী ও খোকার মাঝে শক্ত বন্ধন  (খ) কালিকিঙ্করের সেবা শুশ্রূষা করে দয়াময়ী  (গ) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন    ৩) দয়াময়ীকে দেবী রূপে পূজা অর্চনা  (ক) কালিকিঙ্কর দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে  (খ) দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু হয় দয়াময়ীর  (গ) দয়াময়ীর জন্য পৃথক ঘর দেয়া হয়  (ঘ) দয়াময়ীর ইচ্ছায় হরসুন্দরী উমাপ্রসাদকে কাছে চিঠি লিখে জ্ঞাত করে    ৪) দয়াময়ীর শক্তির প্রকাশ  (ক) দয়াময়ীর কাছে মুমূর্ষু নাতিকে বাঁচিয়ে তুলতে নিয়ে আসে এক বৃদ্ধ  (খ) শিশুটিকে দয়াময়ীর চরণামৃত খাওয়ানো হয়  (গ) উমাপ্রসাদ বাড়িতে ফিরে দয়াময়ীকে দেবীর আসনে দেখে  (ঘ) উমাপ্রসাদ আর কালিকিঙ্করের মাঝে বাকবিতণ্ডা  (ঙ) মুমূর্ষু শিশুটি বেঁচে উঠে  (চ) দয়াময়ীর শক্তির ব্যপারে কালিকিঙ্করের বিশ্বাস দৃঢ় হয়    ৫) উমাপ্রসাদ ও দয়াময়ীর বাড়ি থেকে পালানো  (ক) উমাপ্রসাদ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে  (খ) দয়াময়ীকে উমাপ্রসাদ পালিয়ে গৃহ ত্যাগের জন্য রাজি করায়  (গ) দয়াময়ী এবং উমাপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালায়  (ঘ) মাঝপথে দয়াময়ী পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়    ৬) খোকার মৃত্যু  (ক) দয়াময়ীর পূজা অর্চনা চলতে থাকে  (খ) এক রাতে খোকা অসুস্থ হয়ে পড়ে  (গ) অসুস্থ খোকাকে কালিকিঙ্করের অজ্ঞাতে চিকিৎসক দেখান হরসুন্দরী  (ঘ) খোকাকে দয়াময়ীর কাছে নেয়া হয়  (ঙ) খোকাকে সুস্থ করতে দয়াময়ী রাতে তার কাছে রেখে দেয়  (চ) খোকার মৃত্যু    ৭) দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ  (ক) উমাপ্রসাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারে খোকার মৃত্যু সংবাদ  (খ) কালিকিঙ্করকে খোকার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে উমাপ্রসাদ  (গ) দয়াময়ীকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় সে  (ঘ) নিজ ঘরে পাগল প্রায় দয়াময়ীকে দেখতে পায় উমাপ্রসাদ  (ঙ) তার কাছে বাঁচার আকুতি জানায় দয়াময়ী  (চ) কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে অজানায় মিলিয়ে যায় দয়াময়ী    প্লট বিশ্লেষণঃ  দেবী চলচ্চিত্রের শুরু হয় জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে। উমাপ্রসাদের কলকাতা যাত্রা আর কালিকিঙ্করের স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে দয়াময়ীকে পূজা করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর একটি শিশু কাকতালীয়ভাবে দয়াময়ীর কাছে বেঁচে উঠে। যার ফলে তার দেবত্ব ভাবের বিস্তার লাভ করে। নিজ শিক্ষা আর সেই সাথে গুরুজনেরর কুসংস্কারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উমাপ্রসাদ। দয়াময়ীও নিজ ক্ষমতার মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে শুরু করে। ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে তার হাতে আদরের খোকার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকে একটি পরিবার তথা পুরো একটি সমাজ ও গোষ্ঠীর কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস। ফলে আরোপিত দেবীর ভাগ্যেও জোটে বিসর্জনের পরিণতি।    চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ-  দেবী চলচ্চিত্র শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা নিয়ে নয়। এটি একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও। প্রতিটি চরিত্র এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেছে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা ও দেবীর নান্দনিকতার প্রকাশ পায়।  এখানে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা চেতনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল।    কালিকিঙ্কর-  কালিকিঙ্কর অন্যতম মূল চরিত্র এই চলচ্চিত্রের। জমিদার ও ভুমিপতি এই ব্যক্তি তার কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে দৃঢ় চেতন। তার বাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী কালীর নিয়মিত আরাধনা করে সে। সেই  সাথে ঘটা করে দুর্গা পুজাও করে বাড়িতে। তার ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী তার বিশেষ স্নেহভাজন সেই সাথে তাকে সে নিজের মা বলেই ডাকে, যেমনটা সে মনে করে থাকে তার অধিষ্ঠিত দেবী কালী্র ক্ষেত্রেও। তার মনের এই সুপ্ত ইচ্ছাটি স্বপ্নের মাধ্যমে উঠে আসে। এর বিশ্লেষণ আমরা পাই মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার মতে-"Dreams are the fulfillment of wishes, and sometimes that dreams represent the fulfillment of wishes."  এই কথাটিকে আমরা যদি চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষিতে দেখি তবে আরও স্পষ্ট উল্লেখ পাই কালিকিঙ্করের উক্তির মধ্য দিয়ে। সে একদিকে দয়াময়ীকে দিয়ে পা মালিশ করায় অন্য দিকে বলে তার মা অর্থাৎ দয়ার জন্যই সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেনি। এই যে দয়াময়ীকে নিজের মা হিসেবে দেখতে চাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা থেকেই স্বপ্নে তাকে দেবী রূপে দর্শন।  আবার তার কুলপতি ও একরোখা মনোভাবের জন্যই সে খোকার মৃত্যুর পরও তার আরোপিত দেবীভাবের সংস্কারের কুফল মেনে নেয়নি। এমনকি তার প্রিয় পুত্রবধূর অসহায় অবস্থাও তার সিদ্ধান্তের কোন চ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বিদ্বান কিন্তু ধর্মান্ধ এক দৃঢ় স্বৈরাচারী জমিদারের চরিত্র বলা যেতে পারে কালিকিঙ্করকে।    উমাপ্রসাদ-  কালিকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র উমাপ্রসাদের সাথে তার বাবার ফারাক এক যুগের। সেই সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, সংস্কারও ভিন্ন। সত্যজিৎ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই চরিত্রটি সময়ের সাথে সাথে দৃঢ় হয়েছে। তার কথার সত্যতা আমরা খুঁজে পাই চলচ্চিত্রে।  প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি এমন এক উমাপ্রসাদকে যে কিনা ইংরেজি শিক্ষার দাম্ভিকতায় তার বাবাকে সেকেল বলে আখ্যা দেয়। অথচ বিধবা বিবাহে সমর্থন দেয়া, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা আধুনিক চিন্তার এই যুবকই নিজের স্ত্রীয়ের উপর হওয়া মানসিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি। এমনকি এক সময় সে নিজেও কেমন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে দয়ার দেবত্ব নিয়ে। তার কিশোরী স্ত্রী যখন তার সাথে পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে তখন তাকে বোঝানোর মত ব্যক্তিত্ব রাখে না।  কিন্তু তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ দেখতে পাই খোকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর যখন সে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলে। এর পূর্ব পর্যন্ত পিতার অন্যায়ের বিপক্ষে তাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথেই তার চারিত্রিক শক্তির দৃঢ়তা অর্জিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক বাবার সাথে লড়াই করেও সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারে না।    দয়াময়ী-  সতের বছরের কিশোরী গৃহবধূ দয়াময়ীর চরিত্রটি নিতান্তই সাধারণ ও চিরাচরিত নারীর প্রতিনিধি। খুব বেশি পড়ালেখা না জানা সংসারব্রত পালন করা এক নারী চরিত্র এটি। আমাদের সাধারণ নারীদেরই যে বিভিন্ন রূপ সেটি দেখা যায় তার মাঝে। যেমন- খোকার কাছে সে মায়ের মত সেই সাথে খেলার সাথী, উমাপ্রসাদের কাছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর কালিকিঙ্করের কাছে একই সাথে স্নেহময়ী মেয়ে আবার মমতাময়ী মায়ের মত। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল যে যে পুরুষ তাকে যেভাবে দেখতে চায় সে তাকে সেই রূপেই তুলে ধরে। যার ফলে এক সাধারণ ও ক্ষমতাহীন (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক দৃঢ়তাহীন) দয়াময়ীর উপর দেবত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় সে চুপ করে থাকে। নিজের অবস্থান জানাতে পারে না।  এই চরিত্রটির অন্য স্তর দেখি আমরা তখন যখন কিনা সে নিজ ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে বা তার মধ্যে দেবত্ব পাওয়ার লোভ প্রকাশ পায়। এই কারনেই সে উমাপ্রসাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধা দেয়। এমনকি তার প্রিয় খোকার অসুখে নিজ দেবত্ব জাহির করতে গিয়ে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। ফলাফল তার হাতে খোকার মৃত্যু। শেষ দৃশ্যে আমরা তার পাগলপ্রায় অবস্থাটা লক্ষ্য করলে দেখি তার মাঝে খোকার মৃত্যু শোক নেই বরং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ।  এভাবেই এক সাধারণ কিশোরী গৃহবধূ যখন বিশেষ ক্ষমতা পায় তার মধ্য দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন স্তর উঠে আসে। এক দিকে স্বামীর স্মৃতিতে অশ্রু ঝরায় তো অপরদিকে স্বামীর সাথে ঘর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।    হরসুন্দরী-  এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় ও প্রতিবাদী চরিত্র হল বাড়ির বড় বউ হরসুন্দরী। যেখানে দয়াময়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বশুরের হাতের পুতুল সেখানে হরসুন্দরী হল সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নারী। চলচ্চিত্রটির সময়কাল এমন এক যুগের যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবল, সেই যুগে কোন নারীর এতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।  দয়াময়ীকে যখন সবাই দেবী হিসেবে মেনে নেয় তখন এর বিরোধিতা করা একমাত্র ব্যক্তি ছিল হরসুন্দরী। এমনকি সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারটি মেনে নেয়ার জন্য ভর্ৎসনা জানায়। এর পিছনে হয়তোবা মানব মনের সাধারণ হিংসা প্রবৃত্তিও থাকতে পারে। কেননা চলচ্চিত্রের প্রথম থেকেই আমরা দেখি সবার প্রিয় ছিল দয়াময়ী। তার সাথে সবারই কেমন যেন দূরত্ব। দয়াময়ীর উপর দেবত্ব আরোপের পর সবাই তার পূজা করতে থাকে। কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়।  দয়াময়ী আলাদা নিচে ঘর পাওয়ার পর তার উক্তি "তোর তো ভালই হল উপর নিচ করতে হবে না"- এর মধ্য দিয়েও একটি সুক্ষ্ম খোঁচা পরিলক্ষিত হয়।  শেষে এসে দয়াময়ীকে রাক্ষুসী আখ্যা দিয়ে সে যেন তার আগের অবস্থানের বরখেলাপ করে।    তারাপ্রসাদ-  দেবী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নিস্ক্রিয় চরিত্র হল উমাপ্রসাদের বড় ভাই তারাপ্রসাদ। তাকে দেখা যায় তার বাবার শাসনের ছায়ায় থাকা এক ব্যক্তি যার নিজের কোন রায় নেই। সে মাতাল অবস্থায় নিজের হুঁশ রাখতে পারে না। তার স্ত্রী তাকে ভর্ৎসনা করলেও সে সঠিক পথে চলে না। চরিত্রটি এতটাই নির্লিপ্ত যে তার পুত্রের অসুখের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারে না পাছে তার বাবার বিরুদ্ধে না তা চলে যায়।  তারাপ্রসাদের চরিত্রটির মানসিকতা সমাজের বুদ্ধি বিবেকহীন মেরুদণ্ডহীন পুরুষদের প্রতিনিধি।      ভিজ্যুয়াল উপাদানের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা বিশ্লেষণঃ  ভিজ্যুয়াল উপাদান যেমন ফ্রেম, আলো, শব্দ প্রভৃতির নান্দনিক ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ভিজ্যুয়াল আস্পেক্ট তৈরি করেছে। উপাদানগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাহ্যিক নয় অন্তর্গত অর্থ ও ফুটে উঠেছে। এখানে দেবীর কয়েকটি দৃশ্য ও ফ্রেমের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোর ব্যবহার আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরা হল-   প্রথমে পূজা উদযাপনের দৃশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম পাওয়া যায়। যেমন- পূজা অর্চনার সময় বিরাট দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের অবস্থান দেখে মনে হয় প্রতিমাটি যেন তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা এই তথ্যটিই পাই যে ধর্মচর্চার আতিশয্যে কালিকিঙ্কর পিষ্ট। আলোক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফ্রেমটিতে এই তথ্যই উঠে আসে। সেখানে দুর্গা প্রতিমার আলোতে অবস্থান আর কালিকিঙ্করকে অন্ধকারে রাখার মাধ্যমে আলোর সামনে থেকেও তার মাঝের ধর্মান্ধতার অভিশাপ তুলে ধরা হয়েছে।  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info                           দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের পূজা অর্চনা    আবার বলির দৃশ্যটিতে দেখা যায় পরিচালক সরাসরি বলির দৃশ্য না দেখিয়ে সেটিকে আতশবাজির দৃশ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। আতশবাজির দৃশ্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দৃশ্য। বলির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে সকল পশুত্ব ও পাপকে দূরীভূত করা। এই দৃশ্যে সরাসরি বলির দৃশ্যের রক্তপাতের পরিবর্তে যেমন একটা উদযাপনের মুড সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সাথে অন্ধকার আকাশে আতশবাজির আলোর স্ফুটন যেন সব আঁধারকে সব পাপকে দূরীভূত করে দিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।      আতশবাজির আলোকচ্ছটা: দেবী (১৯৬০)  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    বলির দৃশ্য :দেবী (১৯৬০)                    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শনের দৃশ্যটির পর্যালোচনা করলে সেখানে ত্রিনয়ন দয়াময়ীর দুই চোখ আর টিপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। দৃশ্যের শুরুতে অন্ধকারে তিনটি চোখ দেখা যায় পড়ে তা ধীরে ধীরে দয়াময়ীর ত্রিনয়নে পরিনত হয়। অন্ধকারে তিনটি চোখ কালী দেবীরই ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় চোখ মুলত ধ্বংসের প্রতিনিধি। মানুষ হিসেবে দয়াময়ীর দুটি চোখ দেখানোই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই তৃতীয় চোখ দেখানোর ফলে দয়াময়ীর মাধ্যমে কোন কিছুর বিনাশের সংকেত দেয়। ফলাফল দেখি যখন তার হাতে খোকার মৃত্যু হয়। এখানে আলো ছায়ার অসাধারণ ব্যবহারের ফলে একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।          Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শন: দেবী (১৯৬০)    শেষ সিকুয়েন্সে যখন উমাপ্রসাদ দয়াময়ীকে ফিরিয়ে নিতে আসে তখন তাদের ঘরটি তীব্র আলোয় পূর্ণ থাকে। এটি এক ধরনের পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরি করে। প্রচুর আলোকচ্ছটার মাঝে যেন দয়ার আবির্ভাব হয় উমার সামনে। দয়া যে আর উমাপ্রসাদের স্ত্রী হিসেবে নেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার সাজ পোশাক বা ব্যবহারের মধ্যেও সেই অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সে যে নিজেও তার দেবত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে এ যেন তারই প্রমাণ।    Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   তীব্র আলোর মাঝে দয়ার আবির্ভাব: দেবী (১৯৬০)    সর্বশেষ দৃশ্যে যেখানে দয়াময়ীর প্রস্থান দেখানো হয়েছে সেই ফ্রেমটি ভীষণ তাৎপর্য রাখে। তার করুণ পরিণতির গন্তব্য যে কোন অজানার পথে সেটিকে দয়াময়ীর অন্তর্ধান হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এ যেন চিরায়ত নারীদেরই শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দেয় যাদের নাকি সমাজের সংস্কারের বলি হতে হয়, তাদের গন্তব্য হয় ঠিকানাহীন হারানোর দেশে।   Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে প্রস্থান: দেবী (১৯৬০)     দেবীকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তুলে ধরা কোন চলচ্চিত্র বললে ভুল হবে। সত্যজিৎ রায় এখানে পুরো একটি সমাজের, একটি সময়কালের অংশ ব্যক্তিজীবনের পারিবারিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি সম্পর্কগুলো দেখিয়েছেন। যার ফলে দুই প্রজন্মের চিন্তা চেতনা, আবেগ এমনকি ধর্মচর্চার যে বিস্তর ফারাক সেটি এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। একই সাথে যে কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা থেকে যে আবেশ বা অবসেশন তৈরি হয় তার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেই বার্তাটিই তিনি দেবীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। Read More...
 কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শন: দেবী (১৯৬০)

শেষ সিকুয়েন্সে যখন উমাপ্রসাদ দয়াময়ীকে ফিরিয়ে নিতে আসে তখন তাদের ঘরটি তীব্র আলোয় পূর্ণ থাকে। এটি এক ধরনের পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরি করে। প্রচুর আলোকচ্ছটার মাঝে যেন দয়ার আবির্ভাব হয় উমার সামনে। দয়া যে আর উমাপ্রসাদের স্ত্রী হিসেবে নেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার সাজ পোশাক বা ব্যবহারের মধ্যেও সেই অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সে যে নিজেও তার দেবত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে এ যেন তারই প্রমাণ।

Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Devi (1960) Film Poster, Directed By Satyajit Ray_BD Films Info    দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।     দেবী কাহিনী সংক্ষেপ:-  উনিশ শতকে বাংলার এক গ্রাম চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের গৃহবধূ দয়াময়ীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার। সে থাকে তার স্বামী উমাপ্রসাদ, উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, বড় ভাই তারাপ্রসাদ ও তার স্ত্রী হরসুন্দরী আর তাদের ছেলে খোকার সাথে একই বাড়িতে। গ্রামের জমিদার কালিকিঙ্কর  এক দিকে যেমন বিদ্বান অন্যদিকে কালীদেবীর ভক্ত। স্নেহময়ী দয়াময়ী শ্বশুর আর শ্বশুরবাড়িকে ভালভাবেই আগলে রাখে। একদিন রাতে কালিকিঙ্কর স্বপ্নে দেখেন তার স্নেহময়ী পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী কালীর রূপে। এই স্বপ্নকে সত্যি ভেবে তিনি দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে দেবী হিসেবে পূজা করতে শুরু করেন। প্রথমে দয়াময়ী এই ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু একদিন এক মৃতপ্রায় বালকের জীবন তার কাছে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে গেলে সবাই তাকে দেবী হিসেবে মেনে নিতে থাকে। এক সময় সে নিজেও স্বীকার করে নেয় তার মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি আছে। অবশেষে তার হাতে প্রিয় খোকার মৃত্যু দিয়ে এই ধর্মান্ধতার করুণ পরিণতি লাভ করে। ফলাফল পাগলপ্রায় দেবী মিলিয়ে যায় অজানায়।          দেবী চলচ্চিত্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ:-  পরিচালক সত্যজিৎ রায় এমন একটি সময়কালকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যেখানে একদিকে দেখা যায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিদ্বান ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে কুসংস্কার বর্জিত আধুনিক চিন্তা ধারণ করা বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, দ্বিতীয় জন উমাপ্রসাদ। আর সময়টি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল নিয়ে আবর্তিত। এই সময়ে এই দুই মানসিকতার প্রবণতা সমাজে তথা পুরো রাষ্ট্রে দেখা যেত। তাইতো উমাপ্রসাদের উক্তিতে যেমন উঠে আসে তার বাবা বিদ্বান হলেও সেকেলে একইভাবে ইংরেজি শিক্ষা নেয়া উমাপ্রসাদের প্রসঙ্গে দয়াময়ীকে বলেন "তোমার কেরেসটান স্বামী"। কারণ তৎকালীন সময়ে ইংরেজি চর্চা প্রাচীনদের কাছে খ্রিস্টান চর্চার শামিল ছিল। এভাবেই সেই সময়কালে সমাজের প্রাচীন অর্বাচীনের চিন্তা ধারার বিস্তর ফারাক এই পরিবারের গল্পটিতে উঠে এসেছে।  তৎকালীন নারী সমাজের একটি চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এই পরিবারের দুই নারী চরিত্র হরসুন্দরী ও দয়াময়ীকে সমান্তরালে রেখে পরিচালক দুই ধরনের নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। হরসুন্দরী ছিল প্রতিবাদী নারীসত্ত্বার প্রতীক অপরদিকে দয়াময়ী চিরায়ত ভীরু ও নিপীড়িত সত্ত্বার প্রতীক। সেই সময়কালটি যেহেতু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল তখনকার কিছু নারীদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হতে দেখা যেত। তারা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এর প্রতিবাদ জানাত। আমরা যদি কালিকিঙ্করের চরিত্রটি দেখি তবে তাতে ব্রিটিশ শাসকদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ছিলেনও তাদেরই এক জমিদার। যার কথাই শেষ হিসেবে ধরা হত।  হরসুন্দরী তার বিপক্ষে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে তার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাকারী ছিলেন। অন্যদিকে দয়াময়ী চিরায়ত নারী সমাজের সেই শোষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।   এভাবেই চারিত্রিক বৈপরীত্যের মাধ্যমে পরিচালক তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র আর তার নতুন পথে অগ্রসরের চিন্হ এঁকেছেন।             প্লট বিভাজনঃ-   ১) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপন   (ক) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা অর্চনা  (খ) বলি অনুষ্ঠান ও উমাপ্রসাদদের পূজা উদযাপন  (গ) দেবী দুর্গার বিসর্জন    ২) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন  (ক) দয়াময়ী ও খোকার মাঝে শক্ত বন্ধন  (খ) কালিকিঙ্করের সেবা শুশ্রূষা করে দয়াময়ী  (গ) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন    ৩) দয়াময়ীকে দেবী রূপে পূজা অর্চনা  (ক) কালিকিঙ্কর দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে  (খ) দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু হয় দয়াময়ীর  (গ) দয়াময়ীর জন্য পৃথক ঘর দেয়া হয়  (ঘ) দয়াময়ীর ইচ্ছায় হরসুন্দরী উমাপ্রসাদকে কাছে চিঠি লিখে জ্ঞাত করে    ৪) দয়াময়ীর শক্তির প্রকাশ  (ক) দয়াময়ীর কাছে মুমূর্ষু নাতিকে বাঁচিয়ে তুলতে নিয়ে আসে এক বৃদ্ধ  (খ) শিশুটিকে দয়াময়ীর চরণামৃত খাওয়ানো হয়  (গ) উমাপ্রসাদ বাড়িতে ফিরে দয়াময়ীকে দেবীর আসনে দেখে  (ঘ) উমাপ্রসাদ আর কালিকিঙ্করের মাঝে বাকবিতণ্ডা  (ঙ) মুমূর্ষু শিশুটি বেঁচে উঠে  (চ) দয়াময়ীর শক্তির ব্যপারে কালিকিঙ্করের বিশ্বাস দৃঢ় হয়    ৫) উমাপ্রসাদ ও দয়াময়ীর বাড়ি থেকে পালানো  (ক) উমাপ্রসাদ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে  (খ) দয়াময়ীকে উমাপ্রসাদ পালিয়ে গৃহ ত্যাগের জন্য রাজি করায়  (গ) দয়াময়ী এবং উমাপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালায়  (ঘ) মাঝপথে দয়াময়ী পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়    ৬) খোকার মৃত্যু  (ক) দয়াময়ীর পূজা অর্চনা চলতে থাকে  (খ) এক রাতে খোকা অসুস্থ হয়ে পড়ে  (গ) অসুস্থ খোকাকে কালিকিঙ্করের অজ্ঞাতে চিকিৎসক দেখান হরসুন্দরী  (ঘ) খোকাকে দয়াময়ীর কাছে নেয়া হয়  (ঙ) খোকাকে সুস্থ করতে দয়াময়ী রাতে তার কাছে রেখে দেয়  (চ) খোকার মৃত্যু    ৭) দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ  (ক) উমাপ্রসাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারে খোকার মৃত্যু সংবাদ  (খ) কালিকিঙ্করকে খোকার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে উমাপ্রসাদ  (গ) দয়াময়ীকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় সে  (ঘ) নিজ ঘরে পাগল প্রায় দয়াময়ীকে দেখতে পায় উমাপ্রসাদ  (ঙ) তার কাছে বাঁচার আকুতি জানায় দয়াময়ী  (চ) কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে অজানায় মিলিয়ে যায় দয়াময়ী    প্লট বিশ্লেষণঃ  দেবী চলচ্চিত্রের শুরু হয় জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে। উমাপ্রসাদের কলকাতা যাত্রা আর কালিকিঙ্করের স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে দয়াময়ীকে পূজা করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর একটি শিশু কাকতালীয়ভাবে দয়াময়ীর কাছে বেঁচে উঠে। যার ফলে তার দেবত্ব ভাবের বিস্তার লাভ করে। নিজ শিক্ষা আর সেই সাথে গুরুজনেরর কুসংস্কারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উমাপ্রসাদ। দয়াময়ীও নিজ ক্ষমতার মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে শুরু করে। ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে তার হাতে আদরের খোকার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকে একটি পরিবার তথা পুরো একটি সমাজ ও গোষ্ঠীর কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস। ফলে আরোপিত দেবীর ভাগ্যেও জোটে বিসর্জনের পরিণতি।    চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ-  দেবী চলচ্চিত্র শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা নিয়ে নয়। এটি একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও। প্রতিটি চরিত্র এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেছে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা ও দেবীর নান্দনিকতার প্রকাশ পায়।  এখানে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা চেতনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল।    কালিকিঙ্কর-  কালিকিঙ্কর অন্যতম মূল চরিত্র এই চলচ্চিত্রের। জমিদার ও ভুমিপতি এই ব্যক্তি তার কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে দৃঢ় চেতন। তার বাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী কালীর নিয়মিত আরাধনা করে সে। সেই  সাথে ঘটা করে দুর্গা পুজাও করে বাড়িতে। তার ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী তার বিশেষ স্নেহভাজন সেই সাথে তাকে সে নিজের মা বলেই ডাকে, যেমনটা সে মনে করে থাকে তার অধিষ্ঠিত দেবী কালী্র ক্ষেত্রেও। তার মনের এই সুপ্ত ইচ্ছাটি স্বপ্নের মাধ্যমে উঠে আসে। এর বিশ্লেষণ আমরা পাই মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার মতে-"Dreams are the fulfillment of wishes, and sometimes that dreams represent the fulfillment of wishes."  এই কথাটিকে আমরা যদি চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষিতে দেখি তবে আরও স্পষ্ট উল্লেখ পাই কালিকিঙ্করের উক্তির মধ্য দিয়ে। সে একদিকে দয়াময়ীকে দিয়ে পা মালিশ করায় অন্য দিকে বলে তার মা অর্থাৎ দয়ার জন্যই সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেনি। এই যে দয়াময়ীকে নিজের মা হিসেবে দেখতে চাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা থেকেই স্বপ্নে তাকে দেবী রূপে দর্শন।  আবার তার কুলপতি ও একরোখা মনোভাবের জন্যই সে খোকার মৃত্যুর পরও তার আরোপিত দেবীভাবের সংস্কারের কুফল মেনে নেয়নি। এমনকি তার প্রিয় পুত্রবধূর অসহায় অবস্থাও তার সিদ্ধান্তের কোন চ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বিদ্বান কিন্তু ধর্মান্ধ এক দৃঢ় স্বৈরাচারী জমিদারের চরিত্র বলা যেতে পারে কালিকিঙ্করকে।    উমাপ্রসাদ-  কালিকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র উমাপ্রসাদের সাথে তার বাবার ফারাক এক যুগের। সেই সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, সংস্কারও ভিন্ন। সত্যজিৎ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই চরিত্রটি সময়ের সাথে সাথে দৃঢ় হয়েছে। তার কথার সত্যতা আমরা খুঁজে পাই চলচ্চিত্রে।  প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি এমন এক উমাপ্রসাদকে যে কিনা ইংরেজি শিক্ষার দাম্ভিকতায় তার বাবাকে সেকেল বলে আখ্যা দেয়। অথচ বিধবা বিবাহে সমর্থন দেয়া, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা আধুনিক চিন্তার এই যুবকই নিজের স্ত্রীয়ের উপর হওয়া মানসিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি। এমনকি এক সময় সে নিজেও কেমন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে দয়ার দেবত্ব নিয়ে। তার কিশোরী স্ত্রী যখন তার সাথে পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে তখন তাকে বোঝানোর মত ব্যক্তিত্ব রাখে না।  কিন্তু তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ দেখতে পাই খোকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর যখন সে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলে। এর পূর্ব পর্যন্ত পিতার অন্যায়ের বিপক্ষে তাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথেই তার চারিত্রিক শক্তির দৃঢ়তা অর্জিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক বাবার সাথে লড়াই করেও সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারে না।    দয়াময়ী-  সতের বছরের কিশোরী গৃহবধূ দয়াময়ীর চরিত্রটি নিতান্তই সাধারণ ও চিরাচরিত নারীর প্রতিনিধি। খুব বেশি পড়ালেখা না জানা সংসারব্রত পালন করা এক নারী চরিত্র এটি। আমাদের সাধারণ নারীদেরই যে বিভিন্ন রূপ সেটি দেখা যায় তার মাঝে। যেমন- খোকার কাছে সে মায়ের মত সেই সাথে খেলার সাথী, উমাপ্রসাদের কাছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর কালিকিঙ্করের কাছে একই সাথে স্নেহময়ী মেয়ে আবার মমতাময়ী মায়ের মত। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল যে যে পুরুষ তাকে যেভাবে দেখতে চায় সে তাকে সেই রূপেই তুলে ধরে। যার ফলে এক সাধারণ ও ক্ষমতাহীন (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক দৃঢ়তাহীন) দয়াময়ীর উপর দেবত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় সে চুপ করে থাকে। নিজের অবস্থান জানাতে পারে না।  এই চরিত্রটির অন্য স্তর দেখি আমরা তখন যখন কিনা সে নিজ ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে বা তার মধ্যে দেবত্ব পাওয়ার লোভ প্রকাশ পায়। এই কারনেই সে উমাপ্রসাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধা দেয়। এমনকি তার প্রিয় খোকার অসুখে নিজ দেবত্ব জাহির করতে গিয়ে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। ফলাফল তার হাতে খোকার মৃত্যু। শেষ দৃশ্যে আমরা তার পাগলপ্রায় অবস্থাটা লক্ষ্য করলে দেখি তার মাঝে খোকার মৃত্যু শোক নেই বরং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ।  এভাবেই এক সাধারণ কিশোরী গৃহবধূ যখন বিশেষ ক্ষমতা পায় তার মধ্য দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন স্তর উঠে আসে। এক দিকে স্বামীর স্মৃতিতে অশ্রু ঝরায় তো অপরদিকে স্বামীর সাথে ঘর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।    হরসুন্দরী-  এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় ও প্রতিবাদী চরিত্র হল বাড়ির বড় বউ হরসুন্দরী। যেখানে দয়াময়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বশুরের হাতের পুতুল সেখানে হরসুন্দরী হল সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নারী। চলচ্চিত্রটির সময়কাল এমন এক যুগের যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবল, সেই যুগে কোন নারীর এতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।  দয়াময়ীকে যখন সবাই দেবী হিসেবে মেনে নেয় তখন এর বিরোধিতা করা একমাত্র ব্যক্তি ছিল হরসুন্দরী। এমনকি সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারটি মেনে নেয়ার জন্য ভর্ৎসনা জানায়। এর পিছনে হয়তোবা মানব মনের সাধারণ হিংসা প্রবৃত্তিও থাকতে পারে। কেননা চলচ্চিত্রের প্রথম থেকেই আমরা দেখি সবার প্রিয় ছিল দয়াময়ী। তার সাথে সবারই কেমন যেন দূরত্ব। দয়াময়ীর উপর দেবত্ব আরোপের পর সবাই তার পূজা করতে থাকে। কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়।  দয়াময়ী আলাদা নিচে ঘর পাওয়ার পর তার উক্তি "তোর তো ভালই হল উপর নিচ করতে হবে না"- এর মধ্য দিয়েও একটি সুক্ষ্ম খোঁচা পরিলক্ষিত হয়।  শেষে এসে দয়াময়ীকে রাক্ষুসী আখ্যা দিয়ে সে যেন তার আগের অবস্থানের বরখেলাপ করে।    তারাপ্রসাদ-  দেবী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নিস্ক্রিয় চরিত্র হল উমাপ্রসাদের বড় ভাই তারাপ্রসাদ। তাকে দেখা যায় তার বাবার শাসনের ছায়ায় থাকা এক ব্যক্তি যার নিজের কোন রায় নেই। সে মাতাল অবস্থায় নিজের হুঁশ রাখতে পারে না। তার স্ত্রী তাকে ভর্ৎসনা করলেও সে সঠিক পথে চলে না। চরিত্রটি এতটাই নির্লিপ্ত যে তার পুত্রের অসুখের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারে না পাছে তার বাবার বিরুদ্ধে না তা চলে যায়।  তারাপ্রসাদের চরিত্রটির মানসিকতা সমাজের বুদ্ধি বিবেকহীন মেরুদণ্ডহীন পুরুষদের প্রতিনিধি।      ভিজ্যুয়াল উপাদানের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা বিশ্লেষণঃ  ভিজ্যুয়াল উপাদান যেমন ফ্রেম, আলো, শব্দ প্রভৃতির নান্দনিক ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ভিজ্যুয়াল আস্পেক্ট তৈরি করেছে। উপাদানগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাহ্যিক নয় অন্তর্গত অর্থ ও ফুটে উঠেছে। এখানে দেবীর কয়েকটি দৃশ্য ও ফ্রেমের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোর ব্যবহার আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরা হল-   প্রথমে পূজা উদযাপনের দৃশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম পাওয়া যায়। যেমন- পূজা অর্চনার সময় বিরাট দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের অবস্থান দেখে মনে হয় প্রতিমাটি যেন তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা এই তথ্যটিই পাই যে ধর্মচর্চার আতিশয্যে কালিকিঙ্কর পিষ্ট। আলোক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফ্রেমটিতে এই তথ্যই উঠে আসে। সেখানে দুর্গা প্রতিমার আলোতে অবস্থান আর কালিকিঙ্করকে অন্ধকারে রাখার মাধ্যমে আলোর সামনে থেকেও তার মাঝের ধর্মান্ধতার অভিশাপ তুলে ধরা হয়েছে।  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info                           দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের পূজা অর্চনা    আবার বলির দৃশ্যটিতে দেখা যায় পরিচালক সরাসরি বলির দৃশ্য না দেখিয়ে সেটিকে আতশবাজির দৃশ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। আতশবাজির দৃশ্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দৃশ্য। বলির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে সকল পশুত্ব ও পাপকে দূরীভূত করা। এই দৃশ্যে সরাসরি বলির দৃশ্যের রক্তপাতের পরিবর্তে যেমন একটা উদযাপনের মুড সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সাথে অন্ধকার আকাশে আতশবাজির আলোর স্ফুটন যেন সব আঁধারকে সব পাপকে দূরীভূত করে দিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।      আতশবাজির আলোকচ্ছটা: দেবী (১৯৬০)  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    বলির দৃশ্য :দেবী (১৯৬০)                    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শনের দৃশ্যটির পর্যালোচনা করলে সেখানে ত্রিনয়ন দয়াময়ীর দুই চোখ আর টিপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। দৃশ্যের শুরুতে অন্ধকারে তিনটি চোখ দেখা যায় পড়ে তা ধীরে ধীরে দয়াময়ীর ত্রিনয়নে পরিনত হয়। অন্ধকারে তিনটি চোখ কালী দেবীরই ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় চোখ মুলত ধ্বংসের প্রতিনিধি। মানুষ হিসেবে দয়াময়ীর দুটি চোখ দেখানোই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই তৃতীয় চোখ দেখানোর ফলে দয়াময়ীর মাধ্যমে কোন কিছুর বিনাশের সংকেত দেয়। ফলাফল দেখি যখন তার হাতে খোকার মৃত্যু হয়। এখানে আলো ছায়ার অসাধারণ ব্যবহারের ফলে একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।          Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শন: দেবী (১৯৬০)    শেষ সিকুয়েন্সে যখন উমাপ্রসাদ দয়াময়ীকে ফিরিয়ে নিতে আসে তখন তাদের ঘরটি তীব্র আলোয় পূর্ণ থাকে। এটি এক ধরনের পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরি করে। প্রচুর আলোকচ্ছটার মাঝে যেন দয়ার আবির্ভাব হয় উমার সামনে। দয়া যে আর উমাপ্রসাদের স্ত্রী হিসেবে নেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার সাজ পোশাক বা ব্যবহারের মধ্যেও সেই অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সে যে নিজেও তার দেবত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে এ যেন তারই প্রমাণ।    Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   তীব্র আলোর মাঝে দয়ার আবির্ভাব: দেবী (১৯৬০)    সর্বশেষ দৃশ্যে যেখানে দয়াময়ীর প্রস্থান দেখানো হয়েছে সেই ফ্রেমটি ভীষণ তাৎপর্য রাখে। তার করুণ পরিণতির গন্তব্য যে কোন অজানার পথে সেটিকে দয়াময়ীর অন্তর্ধান হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এ যেন চিরায়ত নারীদেরই শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দেয় যাদের নাকি সমাজের সংস্কারের বলি হতে হয়, তাদের গন্তব্য হয় ঠিকানাহীন হারানোর দেশে।   Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে প্রস্থান: দেবী (১৯৬০)     দেবীকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তুলে ধরা কোন চলচ্চিত্র বললে ভুল হবে। সত্যজিৎ রায় এখানে পুরো একটি সমাজের, একটি সময়কালের অংশ ব্যক্তিজীবনের পারিবারিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি সম্পর্কগুলো দেখিয়েছেন। যার ফলে দুই প্রজন্মের চিন্তা চেতনা, আবেগ এমনকি ধর্মচর্চার যে বিস্তর ফারাক সেটি এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। একই সাথে যে কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা থেকে যে আবেশ বা অবসেশন তৈরি হয় তার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেই বার্তাটিই তিনি দেবীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। Read More...
তীব্র আলোর মাঝে দয়ার আবির্ভাব: দেবী (১৯৬০)

সর্বশেষ দৃশ্যে যেখানে দয়াময়ীর প্রস্থান দেখানো হয়েছে সেই ফ্রেমটি ভীষণ তাৎপর্য রাখে। তার করুণ পরিণতির গন্তব্য যে কোন অজানার পথে সেটিকে দয়াময়ীর অন্তর্ধান হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এ যেন চিরায়ত নারীদেরই শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দেয় যাদের নাকি সমাজের সংস্কারের বলি হতে হয়, তাদের গন্তব্য হয় ঠিকানাহীন হারানোর দেশে।
Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া। ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে। Devi (1960) Film Poster, Directed By Satyajit Ray_BD Films Info    দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।     দেবী কাহিনী সংক্ষেপ:-  উনিশ শতকে বাংলার এক গ্রাম চাঁদপুরের জমিদার পরিবারের গৃহবধূ দয়াময়ীকে ঘিরে গল্পের বিস্তার। সে থাকে তার স্বামী উমাপ্রসাদ, উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, বড় ভাই তারাপ্রসাদ ও তার স্ত্রী হরসুন্দরী আর তাদের ছেলে খোকার সাথে একই বাড়িতে। গ্রামের জমিদার কালিকিঙ্কর  এক দিকে যেমন বিদ্বান অন্যদিকে কালীদেবীর ভক্ত। স্নেহময়ী দয়াময়ী শ্বশুর আর শ্বশুরবাড়িকে ভালভাবেই আগলে রাখে। একদিন রাতে কালিকিঙ্কর স্বপ্নে দেখেন তার স্নেহময়ী পুত্রবধূ দয়াময়ীকে দেবী কালীর রূপে। এই স্বপ্নকে সত্যি ভেবে তিনি দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পরেন এবং তাকে দেবী হিসেবে পূজা করতে শুরু করেন। প্রথমে দয়াময়ী এই ক্ষমতা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু একদিন এক মৃতপ্রায় বালকের জীবন তার কাছে কাকতালীয়ভাবে বেঁচে গেলে সবাই তাকে দেবী হিসেবে মেনে নিতে থাকে। এক সময় সে নিজেও স্বীকার করে নেয় তার মাঝে ঐশ্বরিক শক্তি আছে। অবশেষে তার হাতে প্রিয় খোকার মৃত্যু দিয়ে এই ধর্মান্ধতার করুণ পরিণতি লাভ করে। ফলাফল পাগলপ্রায় দেবী মিলিয়ে যায় অজানায়।          দেবী চলচ্চিত্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিশ্লেষণ:-  পরিচালক সত্যজিৎ রায় এমন একটি সময়কালকে তুলে ধরেছেন চলচ্চিত্রে যেখানে একদিকে দেখা যায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিদ্বান ব্যক্তিত্ব, অন্যদিকে কুসংস্কার বর্জিত আধুনিক চিন্তা ধারণ করা বিদ্বান ব্যক্তিত্ব। প্রথম জন উমাপ্রসাদের বাবা কালিকিঙ্কর, দ্বিতীয় জন উমাপ্রসাদ। আর সময়টি উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়কাল নিয়ে আবর্তিত। এই সময়ে এই দুই মানসিকতার প্রবণতা সমাজে তথা পুরো রাষ্ট্রে দেখা যেত। তাইতো উমাপ্রসাদের উক্তিতে যেমন উঠে আসে তার বাবা বিদ্বান হলেও সেকেলে একইভাবে ইংরেজি শিক্ষা নেয়া উমাপ্রসাদের প্রসঙ্গে দয়াময়ীকে বলেন "তোমার কেরেসটান স্বামী"। কারণ তৎকালীন সময়ে ইংরেজি চর্চা প্রাচীনদের কাছে খ্রিস্টান চর্চার শামিল ছিল। এভাবেই সেই সময়কালে সমাজের প্রাচীন অর্বাচীনের চিন্তা ধারার বিস্তর ফারাক এই পরিবারের গল্পটিতে উঠে এসেছে।  তৎকালীন নারী সমাজের একটি চিত্র উঠে এসেছে এই চলচ্চিত্রে। এই পরিবারের দুই নারী চরিত্র হরসুন্দরী ও দয়াময়ীকে সমান্তরালে রেখে পরিচালক দুই ধরনের নারী চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলেছেন। হরসুন্দরী ছিল প্রতিবাদী নারীসত্ত্বার প্রতীক অপরদিকে দয়াময়ী চিরায়ত ভীরু ও নিপীড়িত সত্ত্বার প্রতীক। সেই সময়কালটি যেহেতু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল তখনকার কিছু নারীদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদে যুক্ত হতে দেখা যেত। তারা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এর প্রতিবাদ জানাত। আমরা যদি কালিকিঙ্করের চরিত্রটি দেখি তবে তাতে ব্রিটিশ শাসকদের ছাপ স্পষ্ট। তিনি ছিলেনও তাদেরই এক জমিদার। যার কথাই শেষ হিসেবে ধরা হত।  হরসুন্দরী তার বিপক্ষে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে তার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনাকারী ছিলেন। অন্যদিকে দয়াময়ী চিরায়ত নারী সমাজের সেই শোষিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করে।   এভাবেই চারিত্রিক বৈপরীত্যের মাধ্যমে পরিচালক তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র আর তার নতুন পথে অগ্রসরের চিন্হ এঁকেছেন।             প্লট বিভাজনঃ-   ১) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপন   (ক) কালিকিঙ্করের বাড়িতে দুর্গা পূজা অর্চনা  (খ) বলি অনুষ্ঠান ও উমাপ্রসাদদের পূজা উদযাপন  (গ) দেবী দুর্গার বিসর্জন    ২) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন  (ক) দয়াময়ী ও খোকার মাঝে শক্ত বন্ধন  (খ) কালিকিঙ্করের সেবা শুশ্রূষা করে দয়াময়ী  (গ) কালিকিঙ্করের স্বপ্নে কালী রূপে দয়াময়ীকে দর্শন    ৩) দয়াময়ীকে দেবী রূপে পূজা অর্চনা  (ক) কালিকিঙ্কর দয়াময়ীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে  (খ) দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু হয় দয়াময়ীর  (গ) দয়াময়ীর জন্য পৃথক ঘর দেয়া হয়  (ঘ) দয়াময়ীর ইচ্ছায় হরসুন্দরী উমাপ্রসাদকে কাছে চিঠি লিখে জ্ঞাত করে    ৪) দয়াময়ীর শক্তির প্রকাশ  (ক) দয়াময়ীর কাছে মুমূর্ষু নাতিকে বাঁচিয়ে তুলতে নিয়ে আসে এক বৃদ্ধ  (খ) শিশুটিকে দয়াময়ীর চরণামৃত খাওয়ানো হয়  (গ) উমাপ্রসাদ বাড়িতে ফিরে দয়াময়ীকে দেবীর আসনে দেখে  (ঘ) উমাপ্রসাদ আর কালিকিঙ্করের মাঝে বাকবিতণ্ডা  (ঙ) মুমূর্ষু শিশুটি বেঁচে উঠে  (চ) দয়াময়ীর শক্তির ব্যপারে কালিকিঙ্করের বিশ্বাস দৃঢ় হয়    ৫) উমাপ্রসাদ ও দয়াময়ীর বাড়ি থেকে পালানো  (ক) উমাপ্রসাদ দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে  (খ) দয়াময়ীকে উমাপ্রসাদ পালিয়ে গৃহ ত্যাগের জন্য রাজি করায়  (গ) দয়াময়ী এবং উমাপ্রসাদ বাড়ি ছেড়ে পালায়  (ঘ) মাঝপথে দয়াময়ী পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়    ৬) খোকার মৃত্যু  (ক) দয়াময়ীর পূজা অর্চনা চলতে থাকে  (খ) এক রাতে খোকা অসুস্থ হয়ে পড়ে  (গ) অসুস্থ খোকাকে কালিকিঙ্করের অজ্ঞাতে চিকিৎসক দেখান হরসুন্দরী  (ঘ) খোকাকে দয়াময়ীর কাছে নেয়া হয়  (ঙ) খোকাকে সুস্থ করতে দয়াময়ী রাতে তার কাছে রেখে দেয়  (চ) খোকার মৃত্যু    ৭) দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে গৃহত্যাগ  (ক) উমাপ্রসাদ বাড়ি ফিরে জানতে পারে খোকার মৃত্যু সংবাদ  (খ) কালিকিঙ্করকে খোকার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে উমাপ্রসাদ  (গ) দয়াময়ীকে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় সে  (ঘ) নিজ ঘরে পাগল প্রায় দয়াময়ীকে দেখতে পায় উমাপ্রসাদ  (ঙ) তার কাছে বাঁচার আকুতি জানায় দয়াময়ী  (চ) কুয়াশাচ্ছন্ন মাঠে অজানায় মিলিয়ে যায় দয়াময়ী    প্লট বিশ্লেষণঃ  দেবী চলচ্চিত্রের শুরু হয় জমিদার বাড়িতে দুর্গা পূজা উদযাপনের মধ্য দিয়ে। উমাপ্রসাদের কলকাতা যাত্রা আর কালিকিঙ্করের স্বপ্ন দর্শনের মাধ্যমে দয়াময়ীকে পূজা করার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি এগিয়ে যেতে থাকে। এরপর একটি শিশু কাকতালীয়ভাবে দয়াময়ীর কাছে বেঁচে উঠে। যার ফলে তার দেবত্ব ভাবের বিস্তার লাভ করে। নিজ শিক্ষা আর সেই সাথে গুরুজনেরর কুসংস্কারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উমাপ্রসাদ। দয়াময়ীও নিজ ক্ষমতার মিথ্যা আশ্বাসে বাঁচতে শুরু করে। ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে তার হাতে আদরের খোকার মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকে একটি পরিবার তথা পুরো একটি সমাজ ও গোষ্ঠীর কুসংস্কার আর অন্ধ বিশ্বাস। ফলে আরোপিত দেবীর ভাগ্যেও জোটে বিসর্জনের পরিণতি।    চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ-  দেবী চলচ্চিত্র শুধুমাত্র ধর্মান্ধতা নিয়ে নয়। এটি একই সাথে মনস্তাত্ত্বিক চলচ্চিত্রও। প্রতিটি চরিত্র এখানে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মানসিকতার ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেছে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা ও দেবীর নান্দনিকতার প্রকাশ পায়।  এখানে চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা চেতনার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হল।    কালিকিঙ্কর-  কালিকিঙ্কর অন্যতম মূল চরিত্র এই চলচ্চিত্রের। জমিদার ও ভুমিপতি এই ব্যক্তি তার কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসে দৃঢ় চেতন। তার বাড়িতে অধিষ্ঠিত দেবী কালীর নিয়মিত আরাধনা করে সে। সেই  সাথে ঘটা করে দুর্গা পুজাও করে বাড়িতে। তার ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী তার বিশেষ স্নেহভাজন সেই সাথে তাকে সে নিজের মা বলেই ডাকে, যেমনটা সে মনে করে থাকে তার অধিষ্ঠিত দেবী কালী্র ক্ষেত্রেও। তার মনের এই সুপ্ত ইচ্ছাটি স্বপ্নের মাধ্যমে উঠে আসে। এর বিশ্লেষণ আমরা পাই মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার মতে-"Dreams are the fulfillment of wishes, and sometimes that dreams represent the fulfillment of wishes."  এই কথাটিকে আমরা যদি চলচ্চিত্রটির প্রেক্ষিতে দেখি তবে আরও স্পষ্ট উল্লেখ পাই কালিকিঙ্করের উক্তির মধ্য দিয়ে। সে একদিকে দয়াময়ীকে দিয়ে পা মালিশ করায় অন্য দিকে বলে তার মা অর্থাৎ দয়ার জন্যই সে সন্ন্যাস গ্রহণ করেনি। এই যে দয়াময়ীকে নিজের মা হিসেবে দেখতে চাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা থেকেই স্বপ্নে তাকে দেবী রূপে দর্শন।  আবার তার কুলপতি ও একরোখা মনোভাবের জন্যই সে খোকার মৃত্যুর পরও তার আরোপিত দেবীভাবের সংস্কারের কুফল মেনে নেয়নি। এমনকি তার প্রিয় পুত্রবধূর অসহায় অবস্থাও তার সিদ্ধান্তের কোন চ্যুতি ঘটাতে পারেনি। বিদ্বান কিন্তু ধর্মান্ধ এক দৃঢ় স্বৈরাচারী জমিদারের চরিত্র বলা যেতে পারে কালিকিঙ্করকে।    উমাপ্রসাদ-  কালিকিঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র উমাপ্রসাদের সাথে তার বাবার ফারাক এক যুগের। সেই সাথে তাদের চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা, সংস্কারও ভিন্ন। সত্যজিৎ রায় একটি ইন্টারভিউতে বলেছেন যে এই চরিত্রটি সময়ের সাথে সাথে দৃঢ় হয়েছে। তার কথার সত্যতা আমরা খুঁজে পাই চলচ্চিত্রে।  প্রথমে আমরা লক্ষ্য করি এমন এক উমাপ্রসাদকে যে কিনা ইংরেজি শিক্ষার দাম্ভিকতায় তার বাবাকে সেকেল বলে আখ্যা দেয়। অথচ বিধবা বিবাহে সমর্থন দেয়া, রাজা রামমোহন রায়ের প্রতি সুদৃষ্টি রাখা আধুনিক চিন্তার এই যুবকই নিজের স্ত্রীয়ের উপর হওয়া মানসিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি। এমনকি এক সময় সে নিজেও কেমন দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে দয়ার দেবত্ব নিয়ে। তার কিশোরী স্ত্রী যখন তার সাথে পালিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায় সে তখন তাকে বোঝানোর মত ব্যক্তিত্ব রাখে না।  কিন্তু তার দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রকাশ দেখতে পাই খোকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর যখন সে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলে। এর পূর্ব পর্যন্ত পিতার অন্যায়ের বিপক্ষে তাকে দৃঢ় অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। সময়ের সাথে সাথেই তার চারিত্রিক শক্তির দৃঢ়তা অর্জিত হয়। দুর্ভাগ্যজনক বাবার সাথে লড়াই করেও সে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচাতে পারে না।    দয়াময়ী-  সতের বছরের কিশোরী গৃহবধূ দয়াময়ীর চরিত্রটি নিতান্তই সাধারণ ও চিরাচরিত নারীর প্রতিনিধি। খুব বেশি পড়ালেখা না জানা সংসারব্রত পালন করা এক নারী চরিত্র এটি। আমাদের সাধারণ নারীদেরই যে বিভিন্ন রূপ সেটি দেখা যায় তার মাঝে। যেমন- খোকার কাছে সে মায়ের মত সেই সাথে খেলার সাথী, উমাপ্রসাদের কাছে প্রিয়তমা স্ত্রী আর কালিকিঙ্করের কাছে একই সাথে স্নেহময়ী মেয়ে আবার মমতাময়ী মায়ের মত। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল যে যে পুরুষ তাকে যেভাবে দেখতে চায় সে তাকে সেই রূপেই তুলে ধরে। যার ফলে এক সাধারণ ও ক্ষমতাহীন (অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক দৃঢ়তাহীন) দয়াময়ীর উপর দেবত্ব চাপিয়ে দেয়া হয় সে চুপ করে থাকে। নিজের অবস্থান জানাতে পারে না।  এই চরিত্রটির অন্য স্তর দেখি আমরা তখন যখন কিনা সে নিজ ক্ষমতার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করে বা তার মধ্যে দেবত্ব পাওয়ার লোভ প্রকাশ পায়। এই কারনেই সে উমাপ্রসাদের সাথে পালিয়ে যেতে বাধা দেয়। এমনকি তার প্রিয় খোকার অসুখে নিজ দেবত্ব জাহির করতে গিয়ে তাকে নিজের কাছে রেখে দেয়। ফলাফল তার হাতে খোকার মৃত্যু। শেষ দৃশ্যে আমরা তার পাগলপ্রায় অবস্থাটা লক্ষ্য করলে দেখি তার মাঝে খোকার মৃত্যু শোক নেই বরং নিজেকে বাঁচানোর তাগিদ।  এভাবেই এক সাধারণ কিশোরী গৃহবধূ যখন বিশেষ ক্ষমতা পায় তার মধ্য দিয়ে তার মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন স্তর উঠে আসে। এক দিকে স্বামীর স্মৃতিতে অশ্রু ঝরায় তো অপরদিকে স্বামীর সাথে ঘর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।    হরসুন্দরী-  এই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সক্রিয় ও প্রতিবাদী চরিত্র হল বাড়ির বড় বউ হরসুন্দরী। যেখানে দয়াময়ী কুসংস্কারাচ্ছন্ন শ্বশুরের হাতের পুতুল সেখানে হরসুন্দরী হল সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা এক নারী। চলচ্চিত্রটির সময়কাল এমন এক যুগের যেখানে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রবল, সেই যুগে কোন নারীর এতটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়।  দয়াময়ীকে যখন সবাই দেবী হিসেবে মেনে নেয় তখন এর বিরোধিতা করা একমাত্র ব্যক্তি ছিল হরসুন্দরী। এমনকি সে তার স্বামীকেও এ ব্যপারটি মেনে নেয়ার জন্য ভর্ৎসনা জানায়। এর পিছনে হয়তোবা মানব মনের সাধারণ হিংসা প্রবৃত্তিও থাকতে পারে। কেননা চলচ্চিত্রের প্রথম থেকেই আমরা দেখি সবার প্রিয় ছিল দয়াময়ী। তার সাথে সবারই কেমন যেন দূরত্ব। দয়াময়ীর উপর দেবত্ব আরোপের পর সবাই তার পূজা করতে থাকে। কিন্তু সে যেমন ছিল তেমনি রয়ে যায়।  দয়াময়ী আলাদা নিচে ঘর পাওয়ার পর তার উক্তি "তোর তো ভালই হল উপর নিচ করতে হবে না"- এর মধ্য দিয়েও একটি সুক্ষ্ম খোঁচা পরিলক্ষিত হয়।  শেষে এসে দয়াময়ীকে রাক্ষুসী আখ্যা দিয়ে সে যেন তার আগের অবস্থানের বরখেলাপ করে।    তারাপ্রসাদ-  দেবী চলচ্চিত্রের সবচেয়ে নিস্ক্রিয় চরিত্র হল উমাপ্রসাদের বড় ভাই তারাপ্রসাদ। তাকে দেখা যায় তার বাবার শাসনের ছায়ায় থাকা এক ব্যক্তি যার নিজের কোন রায় নেই। সে মাতাল অবস্থায় নিজের হুঁশ রাখতে পারে না। তার স্ত্রী তাকে ভর্ৎসনা করলেও সে সঠিক পথে চলে না। চরিত্রটি এতটাই নির্লিপ্ত যে তার পুত্রের অসুখের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে পারে না পাছে তার বাবার বিরুদ্ধে না তা চলে যায়।  তারাপ্রসাদের চরিত্রটির মানসিকতা সমাজের বুদ্ধি বিবেকহীন মেরুদণ্ডহীন পুরুষদের প্রতিনিধি।      ভিজ্যুয়াল উপাদানের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা বিশ্লেষণঃ  ভিজ্যুয়াল উপাদান যেমন ফ্রেম, আলো, শব্দ প্রভৃতির নান্দনিক ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে দেবী চলচ্চিত্রটি অসাধারণ ভিজ্যুয়াল আস্পেক্ট তৈরি করেছে। উপাদানগুলোর মাধ্যমে শুধুমাত্র বাহ্যিক নয় অন্তর্গত অর্থ ও ফুটে উঠেছে। এখানে দেবীর কয়েকটি দৃশ্য ও ফ্রেমের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল উপাদানগুলোর ব্যবহার আর তার অন্তর্নিহিত অর্থ তুলে ধরা হল-   প্রথমে পূজা উদযাপনের দৃশ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম পাওয়া যায়। যেমন- পূজা অর্চনার সময় বিরাট দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের অবস্থান দেখে মনে হয় প্রতিমাটি যেন তাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা এই তথ্যটিই পাই যে ধর্মচর্চার আতিশয্যে কালিকিঙ্কর পিষ্ট। আলোক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফ্রেমটিতে এই তথ্যই উঠে আসে। সেখানে দুর্গা প্রতিমার আলোতে অবস্থান আর কালিকিঙ্করকে অন্ধকারে রাখার মাধ্যমে আলোর সামনে থেকেও তার মাঝের ধর্মান্ধতার অভিশাপ তুলে ধরা হয়েছে।  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info                           দুর্গা প্রতিমার সামনে কালিকিঙ্করের পূজা অর্চনা    আবার বলির দৃশ্যটিতে দেখা যায় পরিচালক সরাসরি বলির দৃশ্য না দেখিয়ে সেটিকে আতশবাজির দৃশ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছেন। আতশবাজির দৃশ্যটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি দৃশ্য। বলির উদ্দেশ্য হল ত্যাগের মাধ্যমে সকল পশুত্ব ও পাপকে দূরীভূত করা। এই দৃশ্যে সরাসরি বলির দৃশ্যের রক্তপাতের পরিবর্তে যেমন একটা উদযাপনের মুড সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সাথে অন্ধকার আকাশে আতশবাজির আলোর স্ফুটন যেন সব আঁধারকে সব পাপকে দূরীভূত করে দিয়ে চার দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।      আতশবাজির আলোকচ্ছটা: দেবী (১৯৬০)  Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    বলির দৃশ্য :দেবী (১৯৬০)                    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শনের দৃশ্যটির পর্যালোচনা করলে সেখানে ত্রিনয়ন দয়াময়ীর দুই চোখ আর টিপ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। দৃশ্যের শুরুতে অন্ধকারে তিনটি চোখ দেখা যায় পড়ে তা ধীরে ধীরে দয়াময়ীর ত্রিনয়নে পরিনত হয়। অন্ধকারে তিনটি চোখ কালী দেবীরই ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় চোখ মুলত ধ্বংসের প্রতিনিধি। মানুষ হিসেবে দয়াময়ীর দুটি চোখ দেখানোই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এই তৃতীয় চোখ দেখানোর ফলে দয়াময়ীর মাধ্যমে কোন কিছুর বিনাশের সংকেত দেয়। ফলাফল দেখি যখন তার হাতে খোকার মৃত্যু হয়। এখানে আলো ছায়ার অসাধারণ ব্যবহারের ফলে একটি রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।          Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    কালিকিঙ্করের দয়াময়ীকে দেবী রূপে স্বপ্ন দর্শন: দেবী (১৯৬০)    শেষ সিকুয়েন্সে যখন উমাপ্রসাদ দয়াময়ীকে ফিরিয়ে নিতে আসে তখন তাদের ঘরটি তীব্র আলোয় পূর্ণ থাকে। এটি এক ধরনের পরাবাস্তব পরিবেশ তৈরি করে। প্রচুর আলোকচ্ছটার মাঝে যেন দয়ার আবির্ভাব হয় উমার সামনে। দয়া যে আর উমাপ্রসাদের স্ত্রী হিসেবে নেই তাদের মধ্যকার দূরত্ব এখানে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তার সাজ পোশাক বা ব্যবহারের মধ্যেও সেই অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। সে যে নিজেও তার দেবত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে এ যেন তারই প্রমাণ।    Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।   তীব্র আলোর মাঝে দয়ার আবির্ভাব: দেবী (১৯৬০)    সর্বশেষ দৃশ্যে যেখানে দয়াময়ীর প্রস্থান দেখানো হয়েছে সেই ফ্রেমটি ভীষণ তাৎপর্য রাখে। তার করুণ পরিণতির গন্তব্য যে কোন অজানার পথে সেটিকে দয়াময়ীর অন্তর্ধান হিসেবেই তুলে ধরা যায়। এ যেন চিরায়ত নারীদেরই শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দেয় যাদের নাকি সমাজের সংস্কারের বলি হতে হয়, তাদের গন্তব্য হয় ঠিকানাহীন হারানোর দেশে।   Film Aesthetics of Devi (1960) Directed By Satyajit Ray_BD Films Info দেবী  সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দেবী চলচ্চিত্রটির কাহিনী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়'-এর "দেবী" গল্প থেকে নেয়া।  ১৭৯০ এর পটভূমিতে রচিত গল্পটি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছে ১৮৬০ এর দশকের প্রেক্ষাপটে। ১৯৬০ সালে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বাংলা ছায়াছবির জন্য রাষ্ট্রপতি রৌপ্য পদক লাভ করে। এছাড়াও ১৯৬২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সর্বোচ্চ পদক পাম দি অরের জন্য মনোনীত হয়। ধর্মান্ধতার পাশাপাশি ধর্ম ও চিন্তার অস্পষ্টতা আর আচ্ছন্নতা, মনস্তাত্তিক টানাপোড়নের মাধ্যমে অসাধারণ এক ট্র্যাজেডির অবতারণা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।    দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে প্রস্থান: দেবী (১৯৬০)     দেবীকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তুলে ধরা কোন চলচ্চিত্র বললে ভুল হবে। সত্যজিৎ রায় এখানে পুরো একটি সমাজের, একটি সময়কালের অংশ ব্যক্তিজীবনের পারিবারিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি সম্পর্কগুলো দেখিয়েছেন। যার ফলে দুই প্রজন্মের চিন্তা চেতনা, আবেগ এমনকি ধর্মচর্চার যে বিস্তর ফারাক সেটি এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। একই সাথে যে কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা থেকে যে আবেশ বা অবসেশন তৈরি হয় তার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেই বার্তাটিই তিনি দেবীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। Read More...
 দয়াময়ীর অজানার উদ্দেশ্যে প্রস্থান: দেবী (১৯৬০) 

দেবীকে শুধুমাত্র ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তুলে ধরা কোন চলচ্চিত্র বললে ভুল হবে। সত্যজিৎ রায় এখানে পুরো একটি সমাজের, একটি সময়কালের অংশ ব্যক্তিজীবনের পারিবারিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক প্রভৃতি সম্পর্কগুলো দেখিয়েছেন। যার ফলে দুই প্রজন্মের চিন্তা চেতনা, আবেগ এমনকি ধর্মচর্চার যে বিস্তর ফারাক সেটি এই চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে। একই সাথে যে কোন বিষয়ে অস্পষ্ট ধারনা থেকে যে আবেশ বা অবসেশন তৈরি হয় তার পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে সেই বার্তাটিই তিনি দেবীর মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। Read More...


SHARE THIS