Matritto (2005) Bangla Movie Poster |
চলচ্চিত্রে সরকারি "অনুদান" ও "বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট ফান্ড" ভূত-ভবিষ্যত সম্ভাবনা ।।
জাহিদ হোসেন ।।
চলচ্চিত্র পরিচালক প্রযোজক লেখক ও সংগঠক।
সম্প্রতি চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান ও ট্রাস্ট ফান্ড নিয়ে মিডিয়া ও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা সমালোচনা সন্দিহান সম্ভাবনা ও আস্থার যুক্তিতর্কের মন্তব্য হচ্ছে।
অনুদান নিয়ে সমালোচনার ঝড় নতুন নয়। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর "চলচ্চিত্র শিল্পী ট্রাস্ট ফান্ড" গঠন করে জননেত্রী ও আমাদের প্রাণপ্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র শিল্পের অভিভাবকত্বের আবারও প্রতীয়মান করলেন। এ ট্রাস্ট ফান্ড নীতিমালায় আর্থিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কয়েক কলাকুশলীদের পেশার নাম নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রে বাদ পড়েছেন সত্য।
তথাপি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির মাননীয় সাংসদ হাসানুল হক ইনু (সাবেক তথ্য মন্ত্রী) স্পষ্ট করে বলেছেন, "ইত্যাদি" শব্দ ব্যবহার করে বাদ পড়া বাকি সকলকেই বোঝানো হয়েছে। মূলত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কেহই যেন এর বাইরে নয়।
যুক্তিযুক্ত কথোপকথনে এ নীতিমালায় বলা হয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলকেই শিল্পীর মাপকাঠিতে ধরা হয়। ভালো কথা, অধিকাংশ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের পেশার নাম নীতিমালায় উল্লেখ করা হলেও কেন প্রযোজক ও পরিবেশক পেশার নামটি সংযুক্ত করা হলো না ?
যুক্তির খাতিরে বলা হচ্ছে প্রযোজক লক্ষ লক্ষ টাকা অর্থ লগ্নি করে একটি চলচ্চিত্র শিল্পের জন্ম দেন। তাদের নাম এখানে সংযুক্ত করলে অনেকটা মানহানির মতোই অবস্থা দাঁড়ায়। অথচ এই নীতিমালা তৈরী করার সময় একটি বারও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি'র মন্তব্য বা মতামত চাওয়া হয়নি। যেখানে প্রযোজকের অর্থ লগ্নির কারণেই চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল পেশাই স্বীয় অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত, সেখানে "প্রযোজক" পেশার নামটি রাখা অতিব জরুরী ছিল।
অতীতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি'র সদস্যগণ যখনই চলচ্চিত্র মুক্তি দিতেন, সেই চলচ্চিত্রের বিপরীতে একটি আংশিক টাকা দুঃস্থ শিল্পী কলাকুশলীদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় একটি হিসাবে সংরক্ষিত থাকতো। কতটা প্রীতি থাকলে প্রযোজকরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল, এটা আমাদের সকলকে বুঝতে হবে। এই সম্প্রতি সেই হিসেবের অধিকাংশ টাকাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা নিজেদের কর্মচারীদের সহায়তার জন্য রেখে বাকি সামান্যই টাকা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি'র নিকট প্রেরণ করেন।
এখন আসি, কোন এক কালে কোন দুঃস্থ প্রযোজকের সরকারি সহায়তার প্রয়োজন দেখা দিলে, সরকারি আমলাগণতো সহজেই প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, নীতিমালায় প্রযোজকরা সহায়তার আওতায় পড়েন না। একটি বিষয় কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্পে সর্বজনীন স্বীকৃত যে, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল পেশার কেহই স্বীয় কাজ করে কখনোই সর্বস্বান্ত হারিয়ে ঘরে ফিরে যাননি। চলচ্চিত্র শিল্পে সর্বস্বান্ত হারিয়ে যদি কোন পেশাদার ঘরে ফিরে গিয়ে থাকেন, তা হচ্ছে চলচ্চিত্র প্রযোজক।
এখানেই প্রযোজক পরিবেশকদের দুঃখ ও আক্ষেপ। আশাকরি প্রযোজকদের নাম নীতিমালায় সংযুক্ত করে "ইত্যাদি"র মাপকাঠিতে রেখে প্রযোজকদের তথ্য মন্ত্রানালয়ের দুয়ারে দুয়ারে ধর্না দেয়ার অপমানজনক অবস্থার হাত থেকে রেহাই দিবেন।
এখন আসি, চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান প্রক্রিয়াকে সমকালীন প্রেক্ষাপটে আমুল পরিবর্তন করার আবশ্যকতা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
আমার জানা মতে এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অংশগ্রহণের সুযোগ বা যোগ্যতা বা মনোনয়ন অর্জন করেছে বিশ্বখ্যাত ও সর্বোচ্চ সম্মানজনক আন্তর্জাতিক বিশ্বের সকল ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রের উৎসব ফ্রান্সের "কান চলচ্চিত্র উৎসব" এ। আশ্চর্যের বিষয় হলো এর একটি চলচ্চিত্রও সরকারি অনুদান প্রাপ্ত নয়। অথচ চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান দেয়া হচ্ছে প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে।
অতএব এই একটি যুক্তিতেই বলা যায়, চলচ্চিত্রে সরকারি অনুদান প্রদানের বিধিমালা বা নীতিমালা আমুল পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরী। দেশের স্বার্থে ও চলচ্চিত্র শিল্পের স্বার্থে।
সম্প্রতিও আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে, যে পরিচালক একটিও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি বা যে প্রযোজক একটিও চলচ্চিত্র এখনও অবধি প্রযোজনা করেননি, তারা সরকারি অনুদান কিভাবে পান। দ্বৈত নাগরিক হয়ে কি করে অনুদান পেলেন !? যেখানে দ্বৈত নাগরিক একজন সাংসদও হতে পারেন না।
একই সাথে প্রতি বছর অনুদানের চলচ্চিত্র নির্মাণে সংশ্লিষ্ট প্রযোজক পরিচালক কাজ শেষ করতে অত্যাধিক সময় ক্ষেপণ করেন। চিত্রনাট্য, গল্প ও শিল্পী কলাকুশলীদের যথাযথ ও যথার্থভাবে সংশ্লিষ্ট ও প্রয়োগ করা হচ্ছে না। ফলে খুবই নিম্নমানের ও দায়সারা একটি চলচ্চিত্র আমরা উপহার পাচ্ছি।
এছাড়াও টাকা উত্তোলন করে সেই চলচ্চিত্রটি শেষ করতে না পেরে সংশ্লিষ্ট প্রযোজকের বিরুদ্ধে সরকারকে মামলা মোকদ্দমাও করতে হয়েছে হচ্ছে।
এসকল বিষয়ে সরকারের তথ্য মন্ত্রানালয়ে মাননীয় মন্ত্রীসহ সচিব মহাদয়ের প্রতি অনুরোধ অনুদানের নীতিমালা অতিসত্তর পরিমার্জন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। এবার বিশটি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। সম্ভবপর হলে আগামী বছর ত্রিশটি চলচ্চিত্রে অনুদান দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত চলচ্চিত্রে সরকারের অনুদানের জন্য পাঁচটি মাধ্যম বা ক্যাটাগরিতে অনুদান প্রক্রিয়া প্রচলন করুনঃ-
এক,
শিশুতোষ চলচ্চিত্রের জন্য।
দুই,
মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ভিত্তিক চলচ্চিত্রের জন্য।
তিন,
শৈল্পিক ও সামাজিক পরিকাঠামোর উপর রচিত বা প্রখ্যাত গল্প বা উপন্যাস ভিত্তিক চলচ্চিত্রের সাথে শিক্ষানবিশি চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র ডিগ্রিধারীদের জন্য।
চার,
মূলধারার বানিজ্যিক চলচ্চিত্রের জন্য।
পাঁচ,
বিগত বছরের নির্মিত চলচ্চিত্র (সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্র নয় এমন চলচ্চিত্র) যা দেশে ও বিদেশে খ্যাতিঅর্জন করেছে, এমন চলচ্চিত্রের জন্য।
(এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থাকলে অনেকেই নিজ খরচে উন্নত চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠবে, যা রীতিমতো উন্নত চলচ্চিত্র নির্মাণে একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে উঠবে। বিগত বছরের নির্মিত চলচ্চিত্রের উপর প্রাপ্ত অনুদান বা প্রণোদনার ঘোষণাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে করা যেতে পারে।)
উপরে উল্লিখিত পাঁচটি ক্যাটাগরিতে কয়টি করে চলচ্চিত্রকে অনুদান দেয়া যায় তা আলোচনা পর্যালোচনা সাপেক্ষে ।।