২০/০২/২০১৯
৪ টা ৫৫
মিনিট
ভিসি চত্বরে
বসন্ত বাসে বসে আছি। আমি বাম পাশের ২য় সারির ২য় সিটে বসা। আর মাত্র ২০ মিনিট সময়
আছে এরপর বাস চলা শুরু করবে রামপুরার উদ্দেশ্যে। বাসের সাম্নের জানাল দিয়ে হঠাৎ
দেখতে পেলাম একটি মেয়েকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অন্য বাসের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে প্লাস
ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলছেন। কী বিষয়ে কথা বলছেন সেটা বলা এক ধরনের পাগলামি।
সুন্দর, সুশ্রী। আমি পর্যবেক্ষণ
করলাম। পর্যবেক্ষণ বললাম এই কারণে যে, প্রত্যেক
পর্যবেক্ষণের মাঝে 'দেখা' শব্দটা
লুকিয়ে আছে কিন্তু প্রত্যেক 'দেখার' মাঝে 'পর্যবেক্ষণ' শব্দটা
নেই। পর্যবেক্ষণ করতে ভালো লাগে তাই। হঠাৎ একজন অন্ধ মানুষ ঐ পাশ থেকে ভিসি ভবনের
মূল ফটকের দিকে যাচ্ছিলেন। দেখলাম তার চোখে চশমা আছে তাই হয়তো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা
কেউ তাকে খেয়াল করেনি সাহায্য করা তো দূরের কথা। কিন্তু সেই মেয়েটি চট করে ঐ বৃদ্ধ
অন্ধ মানুষটির এক হাত ধরে তাকে ভিসি ভবনের মূল ফটকের সামনে পথচারি রাস্তায় পার করে
দিলেন। আমি অবাক হলাম। কেউ যেখানে অন্ধ মানুষটির দিকে পর্যন্ত তাকাইনি তাকে
সাহায্য করা তো দূরের কথা। কিন্তু ঐ মেয়েটি তার হাত ধরে তাকে রাস্তা পার করতে
সাহায্য করলেন। আমি তাকে চিনি না। আর আগেও কখনো দেখিনি। তবে এটুকু কল্পনা করতে
পারি যে, তিনি ঢাবির স্টুডেন্ট। আমার গর্ব হয়। ছোট কাজ
থেকেই তো বড় কাজের উদয় হয়। ঢাবি শুধু বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞান দেয় না বরং
মনুষ্যত্ববোধও শেখায়। হতে পারে সবাই শিখে না। বা শেখার চেষ্টা করে না। কিন্তু ঐ
মেয়েটির মত দুই একজন আছে যারা নিশ্চয়ই...। আর এ শহরের মানুষ তো সময় ছাড়া কিছগু
বোঝেনা। সময় তাদের কাছে জীবনের চেয়ে, মনুষ্যত্ববোধের চেয়ে
মূল্যবান বই কি। তাই হয়তো। এতো কিছু ঐ মেয়েটিকে নিয়ে লিখে ফেললাম। আসলে লেখার
ইচ্ছে ছিলনা। কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী এমন একটা ভালো কাজ চোখের সামনে হতে দেখে
অবাক হয়েছি, সত্যি। আর এত কিছু লেখার পেছনে একটি মূল কারণ
আছে 'ধন্যবাদ' জানানো। আমি
জানিনা ঐ মেয়েটি আমার ইয়ারমেট, জুনিয়র বা সিনিয়র কিনা।
তবে মানুষ হিসেবে তাকে এতটুকু ধন্যবাদ জানানোর জন্যই বার্তা লেখার প্রয়োজন অনুভব
করলাম। জানিনা ঐ মেয়েটির নাম। আমি জানিনা তিনি এ মেসেজটা পাবেন কিনা। তবে তার
পরিচয় একটু অন্যভাবে দেয়ার চেষ্টা করলে তিনি নিশ্চয়ই এই বর্ণনার চরিত্রের সাথে
নিজেকে মেলাতে পারবেন। অরেঞ্জ কালারের জামা আর ওড়না পরে তিনি দাঁড়িয়ে বনধুদের সাথে
কথা বলছিলেন। ঠোঁটেও অরেঞ্জ কালারের লিপস্টিক। চুল কালো লম্বা কিন্তু এমনভাবে
বেঁধে রাখা হয়েছে যে, চুলের অর্ধেকের বেশি পেছানো দোলানো
আর বাকিটা সামনে সীঁথিটা সম্ভবত ডান কানের দিক থেকে বাম কানের দিকে চলে গেছে। বেশ
নতুন এক হেয়ার স্টাইল আগে কখনো দেখে থাকলেও পর্যবেক্ষণ করিনি। জামার রঙয়ের সাথে
মূখমন্ডলের রঙের একটা অপরূপ সৌন্দর্যের একটা মিল রয়েছে। জামা একেবারে পায়ের গোড়ালির ওপর থেকে পরিহিত। কালো রঙ এর
পায়জামা কিন্তু মোজা দুটো সাদা রঙের হলেও জুতো দুটো কিছুটা চকচকে কালো রঙের, বেশ
সুন্দর। তাকে ২০ মিনিট যাবাৎ পর্যবেক্ষণ করার সৌভাগ্য হয়েছে মাত্র। কেননা এরপর ৫:১৫ বেজে গেলে বসন্ত বাস চলে
যেতে থাকে সামনের দিকে। তিনিও অদৃশ্য হতে থাকেন দু চোখ থেকে। লেখার শেষ মুহূর্তে
সেই মেয়েটিকে আবারো জানায়, “অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে’’।
[Collected]