কাহিনী সংক্ষেপঃ
কানু একজন তালার মিস্ত্রি। তিনি বিভিন্ন ধরনের তালার মূল
চাবি থেকে নকল চাবি তৈরী করেন। তিনি প্রতিটি চাবি তৈরি করতে কোনোটা ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা আবার কখনো ৫০ টাকা পর্যন্ত নেন। এভাবে তিনি দৈনিক
২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় করেন। তবে বেশি মূল্যের চাবি তৈরির কাজ তেমন হাতে
আসেনা। মাসে দু তিনবার আসে বৈ কি। বেশিরভাগ চাবি কপি করেন ১০ টাকা থেকে ২০ টাকায়।
তিনি রাস্তায় বসে চাবি তৈরি করেন না। বরং ঢাকা শহরে বিভিন্ন আবাসিক ভবনগুলোতে গিয়ে
গ্রাহকদের চাবি তৈরি করে দেন। কোথায় কখন চাবি তৈরি করা লাগবে তা তিনি মোবাইল ফোনের
মাধ্যমে জানতে পারেন। গ্রাহকরা তাকে ফোন করে ডাকে চাবি তৈরি করে দেবার জন্য। তিনি
রস্তার বিভিন্ন জায়গায়, দেয়ালে লিফলেট লাগিয়েছেন। যে পোস্টারে লেখা আছে “বাসায়
গিয়ে স্বল্প মূল্যে তালার চাবি তৈরি করে দেয়____কানু মিয়া। মোবাইলঃ ০১৭১০…২০১১’’। কানু
মিয়ার, স্ত্রী ও দুই বছরের একটি সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু মাঝে কয়েকদিন কাজ
না পেলে সংসারে দেখা দেয় অভাবের তাড়না। ঘরভাড়া একটু কম হওয়ার কারনে ছোট্ট একটি
বাসায় থাকেন। কখনো কখনো তার কাজের চাপ বেড়ে যায়। আবার কোনোদিন কাজ না পেয়ে বিমর্ষ
হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। অন্যান্য দিনের
মতো সেদিন ও রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন কানু মিয়া। অনেকক্ষণ ধরে কোনো ফোন আসছে না। তিনি মোবাইল ফোন
বের করে দেখলেন মোবাইলে চার্জ নেই। মোবাইল বন্ধ হয়ে আছে। দুপুরে ক্লান্ত
কানু মিয়া একটি দোকানের কাছে যান। বাচ্চার জন্য কিছু বিস্কুট কিনবেন। কিন্তু চাল
কেনার জন্য পকেটে পর্যাপ্ত টাকা নেই। দোকনদারকে মোবাইলটি চার্জে দেয়ার জন্য অনুরোধ
করেন । কিন্তু দোকানদার তার অনুরোধ রক্ষা করেন না। তিনি ক্লান্ত শ্রান্ত অবস্থায় দোকানের পাশে একটি
বেঞ্চে হেলান দিয়ে বিশ্রাম নিতে থাকেন। এক সময় ঘুমিয়ে যান। এমন সময়ে হাত থেকে
মোবাইলটি সরে গিয়ে নিচে পড়ে যায়। আরেক জন একই দোকানে কিছু কেনার জন্য আসবে। কিন্তু
কিছু না কিনেই মোবাইলটি নিয়ে পালিয়ে যাবে। এবার তিনি
স্বপ্নে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখবেন তার সন্তান মাটিতে খেলছে। কিছুক্ষণ পর মুখ ভারি করে
কান্না করার মত অবস্থা। তার মা বলছে, কি
হয়েছে আমার কলিজার? তাকে কোলে তুলে
নেয়। ‘কেঁদনা বাবা
তোমার আব্বু তোমার জন্য বিস্কুট নিয়ে আসবে’ বলে তিনি তার সন্তানকে স্বান্তনা দেন। ফ্ল্যাশব্যাক
শেষ। কানু মিয়া ধড়ফড় করে জেগে উঠেন। জেগে ঊঠার পরই দেখতে পান তার মোবাইলটি তার হাতে নেই। আশেপাশে
অনেক খোঁজাখুজি করেন। দোকানদারকে গিয়ে বলেন। কিন্তু দোকানদারও কিছু
বলতে পারেন না। আশেপাশে জোরে হেঁটে
যান মোবাইল এর খোঁজে। কিন্তু মোবাইল এর সন্ধান না পেয়ে বিমর্ষ হয়ে রাস্তার
পাশে বসে পড়েন। বিকেল গড়িয়ে
গেল সন্ধ্যা নেমে আসে। রাস্তার পাশে একটি দোকানের টেবিলে
দেখবে একটি মোবাইল। দোকানদার সেখানে নেই। এমন সময় কানু মোবাইলটি চুরি
করে রাস্তার দিকে হাঁটতে থাকেন। রাস্তার পাশে আরেকজন
চাবিমিস্ত্রীকে দেখে রাস্তার পাশে
বসে সে চাবি তৈরি করছে। কিছুক্ষণ ভেবে তিনি মোবাইলটি রাস্তার নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেন।
পরে বাড়ির পথে হাঁটতে থাকেন। সন্ধ্যা নেমে এসেছে।