ভালো থেকো ভালোবাসা (২০১৪)_BD Films Info |
‘ভালো থেকো ভালোবাসা’ ২০১৪ সালে
নির্মিত ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও
পরিচালনায় ছিলেন মকসুদ খান। চলচ্চতিত্রটিতে ভিভান অর্পিতা সরকার, দুলাল লাহিড়ী,
বোধিসত্ব মজুমদার, সমীর মুখার্জী, সংঘমিত্রা ব্যানার্জী, দেবু নস্কর, শুচীস্মিতা
ঠাকুরসহ আরো অনেকে অভিনয় করেন। তারা মা প্রোডাকশন (২০১১) ও আর ডি মুভিজ কর্তৃক
প্রযোজিত ও কৌশিক রায় কর্তৃক সম্পাদিত হয়। চিত্রগ্রহণের কাজে ছিলেন উজ্জ্বল
ভট্টাচার্য্য।
ভালো থেকো ভালোবাসা (২০১৪)_BD Films Info |
গল্প নির্মানঃ
‘ভালো থেকো ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রটির
মূল বিষয় হচ্ছে; একটি গ্রামে সরকার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু
গ্রামের ক্ষমতাশালী, মাতবর এক জন ব্যক্তি নিজে একা সে সব ভোগ করে। গ্রামের সাধারন
জনগন যে অন্ধকারচ্ছন্ন জীবন যাপন করে সেভাবেই করে যায়। তাদের গ্রামে কোনো পাকা
রাস্তা গড়ে উঠেনা, বিদ্যুৎ নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে, হাসপাতাল বা
স্বাস্থকেন্দ্রের কোনো উন্নয়ন নেই। গ্রামে একটি পাকা ঘর আছে সেটিও মাতবর সাহেবের।
শহর থেকে এক জন পত্রিকার সাংবাদিক আসে গ্রামে। তিনি প্রমানসহ গ্রামের সকল কিছু
নিয়ে লিখেন। পরে পুলিশ এসে মতবরকে ধরে নিয়ে যায়। গ্রাম উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে থাকে।
প্লটঃ
অনিমেষ চ্যাটার্জী সময়ের কথা পত্রিকার
একজন সাংবাদিক। তিনি কলকাতায় তার বাবা ও ছোট বোন অনুকে নিয়ে একটি বাসায় থাকেন। মিলির
সাথে তিনি বাগদত্ত। শহর ছেড়ে একটি প্রত্যন্ত গ্রাম পলাশপুরে আসেন একটি প্রজেক্ট
রিপোর্ট তৈরি করার জন্য। সরকারি ডাক বাংলোয় উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটি দোকানে
দোকানদারের সাথে গল্প করার ফাঁকে আর তার নিষেধে বাংলোয় না গিয়ে শেষমেষ গ্রামের
একটি বাড়িতে থাকতে সম্মত হন। তার ছেলে পালান তাকে নিয়ে গ্রামের রতনদের বাড়িতে যায়।
রতনের বাবা বাড়ির মালিক। তাদের সবার সাথে পরিচিত হন অনিমেষ বাবু। বাড়ির মালিক
নেতাই বাবু তার বউমাকে বলেন মেহমানকে ঘর দেখাতে। রতনের দুই পা ই খোড়া। সে চলতে
পারেনা। এক দুর্ঘটনায় সে তার দুই পা হারায়। তারপর থেকে পরিবারের হাল ধরেন বাড়ির বউ
সন্ধ্যা। সে মৌসুমে ধান কাটে, রোজগার করে তাতেই কোনভাবে অনেক কষ্টে তিন জনের সংসার
চলে। অনিমেষ কিছু টাকা দেন সন্ধ্যাকে। সে টাকা নেতাই বাবু বউমাকে কিছু রাখতে দেন আর বাকিটা
নিয়ে বাজারে যান। বাড়িতে অনেক দিন পর মাছ, মাংস দিয়ে তারা ভাত খেতে পারে। এভাবে
আনন্দেই তাদের দিন কাটতে থাকে। রতনের বাড়িতে শহর থেকে রিপোর্টার এসেছে শুনে গ্রামসুদ্ধ
অনেক লোক আসে তাকে দেখতে। কেউ এ্যান্টাগোনিস্ট কেউ প্রোটাগোনিস্ট ধরনের। স্কুলের
শিক্ষক থেকে স্বস্থকেন্দ্রেরের কর্মকর্তা সবাই তাকে দেখতে আসে। গ্রামের কিছু সদ্য
পাস করা তরুনেরা আসে তাকে দেখতে। তাদের গ্রামে কেন উন্নতি হচ্ছে না। সে বিষয়ে তারা
তাকে জানায়। তারা জানায় তাদের গ্রামে একটি মাত্র পাকা ঘর আর সেটি হচ্ছে সত্যশংকর
চক্রবর্তীর বাসা। তার কথায় গোটা গ্রাম চলে। তার কথায় গাছের পাতা নড়ে। খুব
ক্ষমতাবান ব্যক্তি। সরকারীভাবে গ্রামের উন্নয়েনের জন্য যে সব আর্থিক সহায়তা আসে
তার পুরোটা তিনি ভোগ করেন। এই কারনে গ্রামের কোন উন্নয়ন নেই। আর কেউ তার মুখের ওপর
কথা বলতে পারেনা। নিজের জমি থেকে ধান পর্যন্ত কেটে নিয়ে যেতে পারে না কৃষকেরা। কেউ
সচ্চার হলে। তার ওপর নির্মম অত্যাচার করে সত্যশংকর এর বখে যাওয়া ছেলে বাবলা। তার
সাথে গুন্ডা পান্ডা যোগ দিয়ে এসব কৃষকদের সর্বনাশ করে। গ্রামে রিপোর্টার এসেছে
শুনে সত্যশংকর বাবু বেজায় চেতে আছেন। কি জানি গ্রামের মানুষের সুখ দুখের গল্প,
তাদের জীবনের গল্প। তাদের গ্রামে কেন উন্নতি হচ্ছে না। এ বিষয়গুলো নিয়ে যদি
লেখালেখি করে তবে তিনি নিশ্চিত জেলে যাবেন। তাই তারাতাড়ি সত্যশংকর বাবু অনিমেষ
বাবুকে দাওয়াত করেন তার বাড়িতে। বেশ জাঁকজমক খাবার। পরে আসল কথাটা বলে ফেললেন যে
তার মেয়ে পূরণিমালা চক্রবর্তীর সাথে অনিষের বিয়ে দিতে তাকে ডেকেছে। কিন্তু অনিমেষ
সরাসরি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। গ্রামের পুরোহিতের মেয়ে পার্বতী। বিয়ে হয়েছিল।
তারপরই স্বামী মারা যায়। বেচারার স্বামীর ঘর করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পুরোহিত মশায়
তার দ্বিতীয় বিয়ে দেয়া ধর্মের বাইরে তাই তার দ্বিতীয় বিয়ে দেন নি। এখন ও দ্বিতীয়
বিয়ে দিতে নারাজ। গ্রামের স্বস্থকর্মী কাশিনাথ মিত্র পার্বতীকে ভালোবাসেন। কিন্তু
বিয়ের প্রস্তাব দিলেও পার্বতী তা তার বাবার কারনে প্রত্যাখ্যান করেন। গ্রামে
রিপোর্টার এসেছে শুনে তিনিও রিপোর্টারের সাথে দেখে করেন। এক সময় রিপোর্টার
অনিমেষকে ভালোবেসে ফেলেন। কিন্তু অনিমেষ তা জানেন না। অনিমেষ সন্ধ্যার হাঁসি খুব
ভালোবাসেন। কখন যে তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে
তা তিনি জানেন না। সন্ধ্যার বাবা মা কেউ নাই একমাত্র এক মাসী আছেন। কিন্তু সেখানে
একা সে যেতে পারে না। তার স্বামী রতন খোঁড়া হওয়ার কারনে তার কোথাও যাওয়া হয়না।
অবশেষে অনিমেষ তাকে নিয়ে বেড়িয়ে রাতের বেলা বাড়ি ফিরে আসেন। রতন ঘরের বারান্দায়
বসে থেকে সব কিছু জানতে পারলেও কিছু বলতে পারেনা না। শাসন করতে পারেন না। একদিন
বাবলা তার গুন্ডা পান্ডা নিয়ে অনিমিষের ওপর হামলা করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনিমেষ
গ্রাম সমপর্কে লেখালেখি করা ছেড়ে দিতে রাজি হন নি। শিক্ষক ও স্বাস্থকর্মকর্তার কাছ
থেকে তিনি সব ফাইল পেয়ে যান। যেখানে সরকার কি কি পরিমাণ ভর্তুকি, উন্নয়ন সহায়তা
দিয়েছে পলাশপুর গ্রামে আর কতটা উন্নয়ন হয়েছে। কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় হয়েছে তার
সকল তথ্য ঐ ফাইলে লিপিবদ্ধ আছে। অনিমেষ বাবু কাশিনাথের মাধ্যমে সকল তথ্যের ফাইল তাদের
পত্রিকার সম্পাদক সমর বাবুর কাছে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তী দিন পুলিশ এসে সত্যশংকর
বাবুকে ধরে নিয়ে যায়। আর বাবলার খোঁজ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে অনিমেষ পার্বতী আর
কাশিনাথের বিয়ের আয়োজন করেছেন। কিন্তু বাবলা পার্বতীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে বাবলা ও
তার গুন্ডাদের সাথে কাশিনাথ, অনিমেষ ও তার সহযোগীদের মধ্যে মারামারি হয়। কিন্তু
পুলিশ এসে বাবলা ও তার গুনডাদের ধরে নিয়ে যায়। অনিমেষের প্রজেক্ট রিপোর্ট সম্পন্ন
হওয়ায় তিনি রতনদের বাড়ি থেকে বিদায় নেন। কিন্তু সন্ধ্যার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময়
সন্ধ্যা কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনিমেষের ভালোবাসা গচ্ছিত থাকুক সন্ধ্যার কাছে। ভালো
থাকুক ভালোবাসা সন্ধ্যার হৃদয়ে।
নির্মাণ সহযোগী ও কলাকুশলীঃ
ভজুবাস মন্ডল ও রাজু ইয়ার্ডি নিবেদিত
‘ভালো থেকো ভালোবাসা’ একটি ভারতীয় বাংলা চলচ্ছিত্র। এ চলচ্ছিত্র নির্মাণে যারা বিভিন্ন
ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তারা হচ্ছেন;
কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও
পরিচালনাঃ মকসুদ খান
প্রযোজনাঃ তারা মা প্রোডাকশন (২০১১)
ও আর ডি মুভিজ
সম্পাদনাঃ কৌশিক রায়
চিত্রগ্রহণঃ উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য
মূখ্য সহকারী পরিচালকঃ সন্দীপ বেরা
ফাইটঃ পালান সর্দার
নৃত্য পরিচালনাঃ এ্যানি, আকাশ
রূপসজ্জাঃ পীযুষ ঘোষ
আবহ সঙ্গীতঃ প্রশন্ত বিশ্বাস
সঙ্গীত ও গিতীকারঃ ডি অরুণ
কন্ঠ সঙ্গীতঃ শ্রেয়া ঘোষাল, ডি অরুণ,
মৌমিতা ও টিনটিন
কলাকুশলীঃ
ভিভান অর্পিতা সরকার,
দুলাল লাহিড়ী,
বোধিসত্ব মজুমদার,
সমীর মুখার্জী,
সংঘমিত্রা ব্যানার্জী,
দেবু নস্কর,
শুচীস্মিতা ঠাকুরসহ আরো অনেকে
মুভি বিশ্লেষনঃ
‘ভালো থেকো ভালোবাসা’ মুভিটির
পরিচালক মকসুদ খান। মুভিটির নির্মাণ প্রক্রিয়া যেভাবেই হোক না কেন এর গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়টি হচ্ছে এর গল্প। গল্পটি আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। একেবারে নতুন একটি গল্প। শহর
থেকে রিপোর্টার এসেছে গ্রামে তা শুনে গ্রামের সবাই দেখতে আসে। আসলে ভারতের কলকাতার
কথা বলতে পারবান। তবে আমাদের দেশ বাংলাদেশে গ্রামে রিপোর্টারদের গ্রামের মানুষ খুব
শ্রদ্ধা করেন। এটা তাদের কাছে একটি শ্রদ্ধার পেশা। তাদের জীবন, সুখ, দুঃখ নিয়ে কেবল রিপোর্টাররাই তো লেখালেখি করেন তাই
হয়তো। অথবা অন্য কোনো কারনে গ্রামের সাধারন মানষ রিপোর্টারদের শ্রদ্ধা, সম্মান
করেন। এ বিষয়টা পরিচালক খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অভিনয়ে যদিও কিছুটা
ঘাটতি রয়েছে কিন্তু শক্তিশালী গল্প এটাকে
আরো শক্তিশালী করেছে।
চিত্রগ্রহনঃ
চিনেমাটোগ্রাফি খুব যে অসাধরন হয়েছে
তা বলা যায় না। তবে এমনিতে সাধারনভাবে যা
ক্যাপচার করা হয়। সেভাবেই এই মুভির দৃশ্য ক্যাপচার করা হয়েছে।
তবে বিভিন্ন শটের সংমিশ্রণ থাকলে খুব
ভাল হত। বিভিন্ন ধরনের এ্যাঙ্গেলে ক্যাপচার করা যেত। একেক জন দর্শক একেকভাবে একেক
জিনিস দেখতে পছন্দ করে। সুতরাং ক্যাপচারিং এ ও বিভিন্নতা থাকা জরুরি।
ভালো থেকো ভালোবাসা (২০১৪)_BD Films Info |
মিজো সিনঃ
দৃশ্যগুলো কতটা সাজানো গোছানো বা
প্রপস ঠিকঠাক মত আছে কিনা। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে মিজো সিন। মুভি খুব একটা
গুরুত্বপূর্ণ না এখানে সুতরাং এতটা বিস্তারিতভাবে বলার কোন জো নাই। দৃশ্যের
এ্যারেঞ্জমেন্টটা স্বাভাবিক তবে কোথাও কোথাও জাম্প কাট দেখা যায়। আর লাইটিং বা আবহ
সঙ্গীত বা সেট এসব নিয়ে আর নাই বা বলি।
সম্পাদনাঃ
অতিরিক্ত বলার কোন জো নাই। প্রথম
দিকে শব্দের সাথে দৃশ্যের মনে হলো সমন্বয়টা তেমনটা ছিলনা। বাকি সব ঠিকঠাক।
সম্পাদনাটা খুব ন্যাচারাল হয়েগেছে। মাঝে মাঝে কিছু গ্রাফিক্স, বা একটু ভিন্নভাবে
দৃশ্যগুলোর রেপ্রেজেন্টেশন করা যেত। এমনিতে সম্পাদনা ভালোই। খারাপ তো বলা যাবেনা।
যেহেতু এটা একটা মিনিং সৃষ্টি করেছে। এটাতে একটা শক্তিশালী গল্প আছে।