গভীর অরণ্যে বিজয়ের গল্প_Short Film Stories_BD Films Info |
পৃথিবী বৈচিত্র্যপূর্ণ। হরেক রকম মানুষ। হরেক রকম মানুষের পেশা। মাস্টার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কতইনা বৈচিত্র্যপূর্ণ পেশা। সবাই যদি মাস্টার হবে তো ডাক্তার হবে কে? আর সবাই যদি ডাক্তারই হবে তো ইঞ্জিনিয়ার হবে কে? বিজয় এসব পেশার সাথে সম্পৃক্ত না। ছোট বেলা থেকে তার নেশা ছবি তোলা। এ বছর সে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। তার চাকরি কিংবা ব্যবসা কোনটা ভাল লাগেনা। পছন্দের বিষয় হচ্ছে ফটোগ্রাফি। দীর্ঘ পনের বছর ধরে সে ফটোগ্রাফির সাথে সম্পৃক্ত। ছোটবেলায় ফটোগ্রাফির অ.আ.ক.খ না জানলেও সময়ের পরিবর্তনে আজ সে অনেকটা পথ এগিয়েছে। ঢাকায় দীর্ঘ পনেরটা বছর অতিক্রম করলেও তার আশা মেটেনি। ফটোগ্রাফিকে ভালবেসে অরণ্যে যাওয়ার চিন্তাটা আজকের নতুন না। সে অনেক বছর হৃদয়ে লালন করে রাখা স্বপ্ন।
বিজয়ের বাড়িতে তার বাবা-মা আর ছোট একটি বোন আছে। বোনটির বয়স ছয় কি সাত হবে। বিজয়ের পরম আদরের বোন। কোন দিন তাকে আহ্ শব্দ শুনতে হয়নি। অভাব-অভিযোগ দুটোই আছে। তবে বিজয় তার বোনের অভাব গুলো আগে পূর্ণ করে দেয়। বিজয়ের জন্মের অনেক বছর পেরিয়ে গেল তার বাব মার একটি বিষয়ের ঝগড়ার মাধ্যমে। বিজয়ের বাবা একটি ব্যাংকের ম্যানেজার। এতেই তিনি সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়ের জন্য অর্থ জমার ব্যবস্থা করেন। ভবিষ্যতে তারা যেন কোন অভাবে না পড়ে। বিজয়ের মা গৃহিনী। বিজয়ের বাব ফিসের কাজে ব্যস্ত থাকলে তিনিই ছেলে মেয়ের দেখাশুনা করেন। বিজয় বড় হয়ে গেলেও মা তাকে এখনো সেই ছোট্ট খোকাটির মতই মনে করে। বিজয় কতবার যে তা তার মাকে বলেছে, ‘ সে এখন আর সেই ছোট্ট খোকাটি নেই।‘ কিন্তু তার মা সেতা কানেই নেন না। একমাত্র সন্তান বিজয়। সে কি কখনো বড় হতে পারে। বিজয় একমাত্র সন্তান এই কারণে যে, প্রথমেই বলা যাক বিজয়ের বাবা মায়ের ঝগড়াটির ব্যাপারে। ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’। বিজয়ের বাবা আলোচ্য উক্তির অনুসারী। এজন্য তিনি একটি সন্তানই নিয়েছিলেন। তারপর বিজ্জয়ের জন্ম হল। তাদের সংসারে আনন্দের ঝড় বয়ে গেল। খুশিতে কাকপক্ষীরা ও বিজয়কে দেখতে এসেছিল। শৈশব থেকে একটু একটু করে বড় হয়ে কৈশরে পা ডিল বিজয়। তার আগে বাবা মায়ের ঝগড়া বাঁধল এইখানে যে, ‘বিজয়ের মা আরেকটি সন্তান নিতে চেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন যদি একটি মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে তাহলে পরম আদর করে তার নাম রাখবেন, সুপ্রিয়া। সে সবার কাছে সমান প্রিয় হয়ে থাকবে সংসারে। বিজয়ের বাবা এ মতের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাদের ঝগড়া বাঁধল ঠিক বিজয়ের জন্মের তিন বছর পর। এভাবে আরেকটি সন্তান নেয়ার জন্য বিজয়ের মা অনেক সময় অভিমান করে থাকতেন। মাঝে মাঝে বিজয়ের বাবা ও একা থাকতেন। তিনি একটি সরকারী ব্যাংকে চাক্রী করেন। সরকারের নিয়ম কানুন অতি সূক্ষ্মভাবে পালন করেন। তাই একটি সন্তানই তিনি নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে আর কত দিন চলে? ঝগড়া-অভিমান সেদিন শেষ হয়েছিল যেদিন তারা একমত হয়েছিলেন যে, ‘তারা দুজনে আরেকটি সন্তান নিবেন’। এভাবে দীর্ঘ পনের বছর পর তাদের মতের মিল হল। এবং বিজয়ের বয়স যখন ষোল তখন তাদের পরিবারে এলো নতুন সদস্য। এ ঘটনায় সব চেয়ে বেশি খুশী হয়েছিল বিজয়ের মা। কারন তিনি আগে থেকেই একটি নাম লালন করে রেখেছিলেন। হয়ত ছেলে সন্তান ও জন্ম নিতে পারত কিন্তু তাতে এতটা আনন্দ থাকতনা। এতটা আনন্দের হাওয়া বয়ে যেত না। বিজয়ের জন্ম হয়েছিল রংপুরে। কিন্তু সুপ্রিয়ার জন্ম ঢাকায়। বিজয়ের জন্মের কয়েক বছর পর বিজয়ের বাবার চাকরি হয় ঢাকায়। অনেক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আজ তিনি ব্যাংকের ম্যানেজার। জীবনে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছিলেন। কিন্তু এ বয়সে এসে সন্তানদের মাঝে কষত বা অভাবের ছোঁয়া লাগতে দেন না। তাই বলে বিজয় তার বাবার কষ্টের জীবন অতিবাহিত হওয়ার গল্প জানেনা এমন না। সবই তার মুখস্ত। প্রত্যেকটা লাইন, প্রত্যেকটা বাক্য তার হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। এ সব কিছু সে তার মায়ের কাছ থেকে শুনেছে। কিন্তু আজও তার বাবা সে সব কাহিনী তার সন্তানদের মাঝে তুলেন নি। হয়ত কষ্ট পাবে বলে। কিংবা তারা যাতে কষ্টের ছোঁয়া স্পর্শ করতে না পারে তাই।
বিজয় যে এসব গল্প জানে তা কিন্তু বিজয়ের বাবার অজানা নয়।
সুপ্রিয়া ক্লাস থ্রীতে পড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় সে তার ভায়ের তোলা ছবিগুলো দেখে পেইন্ট করার চেষ্টা করে। বিজয় তাকে অনেক সাহায্য করে। বিজয়ের আলাদা রুম। রুমের চার দেয়ালে তার প্রিয় ছবুগুলো লাগিয়ে রেখেছে। রুমে প্রবেশ করলেই মনে হবে গভীর অরণ্যে প্রবেশ করেছি। কিংবা ঢাকার রাস্তার জ্যামের ছবিগুলো দেখলে মনে হবে ঢাকা শহর সত্যি জ্যামেরই শহর যেখানে সেকেন্ডে, সেকেন্ডে- মিনিটে, মিনিটে জ্যাম। এমন মনে হতেই পারে। বিজয়ের রুমটা কন সাধারণ একটা রুম না। যে কেউ প্রবেশ করলে হারিয়ে যাবে সে পরিবেশে। তার দেয়ালে রয়েছে হরেক রকমের ছবির বৈচিত্র্য যা তাকে বিমোহিত করে।
ফটোগ্রাফি বিজয়ের কাছে একটি পেশা এটা সে কোনোভাবেই বিশ্বাস করে না। বরং ভালোবেশেই সে একে বেছে নিয়েছে। স্কুল জীবন, কলেজ জীবন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন প্রত্যেকটা মুহূর্তে তার কাছে থাকত একটি ডি.এস.এল.আর ক্যামেরা। তার বাবা তার অভাব পূরণে শতভাগ এগিয়ে থাকতেন।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সকল জায়গায় সে সব প্রত্যেকটা মুহূর্তের ইতিহাস আজ তার রুমেই। ছবিগুলো দেখলে কেমন যেন আবেগ চলে আসে তার মনে। সেটা নতুন ছবি তুলতে সম্পূর্ণ নতুন ধরণের, নতুন ক্যাটাগরির ছবি তুলতে তাকে উৎসাহিত করে। স্কুল জীবনের ছবিগুলো দেখে সে খুব পুলকিত হয়।
স্কুল জীবনের বন্ধুত্ব সত্যিই অসাধারণ। আজ তার কাছে সব কিছুই ইতিহাস। নীরব, পলাশ, হিমেল, রোজিনা আর রুবিনা আজ তার কে যে কোথায়? জানা দুরূহ ব্যাপার। হিমেল অবশ্য খুলনায়। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে তার আর ও এক বছর বাকি।‘ গাধাটা এক বছর নিজের কুবুদ্ধিতেই একটা বছর খেয়েছে। তার এক মামাত বোন রীনা সে তার সাথে একটা বছর প্রেম করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্ট টাইম ভর্তি হতে পারেনি। সেকেন্ড টাইম খুলনায়। অবশ্য বিজয়ের সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিল হিমেল। আজ সে খুলনায়। অবশ্য খুলনায় থেকে সে ভালই করেছে। বিজয়ের অনেক দিনের স্বপ্ন সুন্দরবনে গিয়ে গিয়ে ফটোগ্রাফিটা একটু প্রয়োগ করবে। সুযোগ হয়েছে কখনো সময় হয়নি। কখনো সময় হয়েছে সুযোগ হয়নি। তাই সুন্দরবন যাওয়া ও হয়নি। কিন্তু এখন যথেষ্ঠ সময় আছে আর সুযোগ ও আছে তার কাছে। তাই দুটোই হাত ছাড়া করা যাবে না। হিমেলের সাথে তার যোগাযোগ হয়না এমন না। তাদের আলাদা ফেসবুক এ্যাকাউন্ট আছে। চ্যাটিং করে। নিয়মিত কথ না হলেও যগাযোগ রয়েছে। সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য হিমেল কখনো বলেনি । তবে তার খুলনা পরিদর্শনে সে অনেক বার বিজয়কে ডেকেছে। বিজয় যেতে পারেনি। সুন্দরবনে যাবার জন্য হিমেলই প্রথম বিজয়কে প্রস্তাব করল। হিমেল রাজী। হিমেল সাথে সাথে জানিয়ে দিল, ‘দোস্ত সত্যি তুই আসবি ? আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না রে!’ ‘ধুর পাগল, বললাম ত সত্যি আমি এবার সুন্দরবনে যাব, নিয়্যাত করেছি যাবোই’। বিজয় বলল। ‘দেখ এতো দিন আমার এখানে তোকে ডেকেছি কত তুই আসিস নি। এ জন্য বিশাস হচ্ছিল না রে দোস্ত’।
‘কবে, কখন, কথা থেকে বের হচ্ছিস? হিমেল বলল।
‘দেখি কয়েকদিন দেরি হবে রে। ঢাকা থেকে সোজা ট্রেনে রওয়ানা দেব’। বিজয় লিখে এন্টার চাপ দিল।
ল্যাপটপে ফেসবুক এ তাদের কথা হচ্ছিল। মুহূর্তে ইনবক্সে ভেসে এলো। ‘বিজয়, রুবিনাকে সঙ্গে নিয়ে আসবি?’ লেখাটি ইনবক্সে দেখেই বিজয় আঁতকে গেল। হৃদয়ে শিহরণ জেগে উঠল। বিজয় ল্যাপটপ অন রেখেই লীড চেপে, রেখে দিল টেবিলের ওপর। হিমেলের কথার রিপ্লাই দিলনা। রুবিনার কথা বলতে ভুলে গেছি। স্কুল জীবনের বান্ধবী ছিল রুবিনা। একসময় বিজয়কে ভাল লাগতে লেগেছিল রুবিনার। বিজয় কিন্তু সেটা টের পেয়েছিল। প্র্যাক্টিক্যাল নোটস, অন্যান্য বিষয়ের নোটস সব বন্ধুরা তার কাছ থেকেই নিত। নোট গুলো নেয়ার সময় এক মনে বিজয়ের দিকে তাকিয়ে থাকত মেয়েটি। বিজয় অনেকবার সেটা বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু একমাত্র রুবিনাকে মুখ ফুটে বলা হয়ে ওঠেনি তার। তখন তারা ক্লাস এইটে। জীবন মানে কি? জীবনে ভালবাসাই বা কেন? ভালবাসাই বা কি? সব কিছুর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করত বিজয়। খুঁজে না পেলে প্রথমে তার মাকেই জিজ্ঞেস করত। মায়ের কাছ থেকে যে সব উত্তর পেত তা মনঃপুত হত না তার। বিজয়কে একদিন মনের কথাগুলো বলে ফেলেছিল রুবিনা। কিন্তু তখন বিজয় রুবিনার মনের অবস্থা জানত এবং বুঝতে পেরেছিল যে, সে তাকে সত্যি সত্যি ভালবাসে। তখন বিজয় তার কথা শুনে কোন উত্তর দিতে পারেনি। রুবিনা মেয়েটি দেখতে ছিমছাম গড়নের, ফর্সা রঙের, ক্লাস এইটে ভর্তি হয়েই বিজয়কে দেখে ভাল লেগে যায় তাঁর। রুবিনার বাবা একজন ডাক্তার। কোন ডিগ্রী না থাকলে ও গ্রামের সাধারণ জনগন তাকে খুব শ্রদ্ধা করেন। রুবিনার মা গৃহিনী। তাদের একমাত্র সন্তান রুবিনা। শহরে পাঠিয়ে দেয় পড়ালেখার জন্য। স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে যায় তাঁর বাবা। গ্রামের বেশ গন্যমান্য ব্যক্তি। গ্রামের মোড়ল, মাতবর এর মতই তাঁর মর্যাদা। রুবিনার কাছে একদিন শুনেছিল যে, তাঁর বাবার মত কয়েক জন গন্যমান্য লোক আছে বলেই তাদের গ্রামটা আজ উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছে।
রুবিনা অন্য পাঁচ জন মেয়ের মত ছিলনা। সে ক্লাসের অন্যান্য মেয়েদের অনেকভাবে সাহায্য করত। অনেক মেধাবী ছিল। হাই স্কুলে ক্লাস নাইন-টেন এ সেই মেয়েদের ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছিল। রুবিনা গ্রামের মেয়ে কিন্তু শহর তার অনেক আগে থেকেই পরিচিত। ক্লাস এইটে ভর্তি হওয়ার আগে অনেকবার ঢাকা এসেছিল সে তার মামার সঙ্গে। আগে থেকেই তার মামা মামী ঢাকায় থাকতেন। দুজনেই সরকারী চাকরী করতেন। সুতরাং ছোটবেলা থেকেই ঢাকা পরিচিত ছিল রুবিনার। শহরে থাকলে কি হবে সে গ্রামকে অনেক ভালবাসত। গ্রামের স্বাধীন সবুজক্ষেত, গ্রামের রাস্তাঘাট, গ্রামের গাছপালা, গ্রামবাসী সবকিছুই ছিল তার প্রিয়।
দেখতে দেখতে তিনটি বছর চলে গেল। বিজয় রুবিনার সাথে একটি কথা ও বলেনি। তবে রুবিনার সব খবরই রাখত বিজয়। চিঠি আসত। শত শত চিঠি লিখত রুবিনা। ডাকপিয়ন সব চিঠি দিত বিজয়কে। বিজয়ের বাবা কখনো জিজ্ঞেস করলে এক কথায় উত্তর দিত বিজয় ‘আমার এক বন্ধুর চিঠি, বাবা’। অথচ সেই বন্ধুটির সাথে একটি বারের জন্য ও কথা বলেনি সে। বিজয় মনে মনে রুবিনাকে ভালবাসত। কিন্তু কোন দিন মুখ ফুটে কিছু বলেনি। রুবিনা এমনভাবে কথা বলত যে, সহজে কারো মন জয় করে নিত। তাকে কখনো ঘৃণা করা যায়না যদিও বিজয় ভালবাসার কথা কখনো মুখ ফুটে তাকে বলেনি।
তিন বছর পর বিজয় রুবিনাকে একটি চিঠি লিখল। বিজয় জানত এ সময়টা ভালবাসার সময় নয়। কারণ সে সব কিছুই পেয়েছে পরিবার অর্থাৎ বাবা-মা এবং সুপ্রিয়ার কাছ থেকে। ভালবাসা কি? সে দিন হয়তো তার প্রেমে সাড়া দেয়া যেত কিন্তু তাকে তার বাবা-মার কাছে চির মিথ্যাবাদী হয়ে থাকতে হত। বিশেষ করে বাবা কত কষ্ট করে নিজের স্থান দখল করেছেন। তিনি যদিও আমাকে কিছু বলেন নি তারপর ও আমি আমার মায়ের কাছ থেকে তার সকল অর্জন এর গল্প শুনেছি। শৈশবকাল এমন একটি সময় যখন কোন গল্প শুনলে আর ভোলা যায়না। রুবিনা আমাই তোমার প্রেমে হয়তো সাড়া দিতে পারতাম কিন্তু বাব-মায়ের কাছে চির অপরাধী হয়ে থাকতে হত। আমি চাই আমাদের মধ্যে আর কোন প্রেমালাপ না হোক। তুমি একজন মেধাবী স্টুডেন্ট। তুমি যদি এমন কথা বলো তাহলে তুমি যাদের সাহায্য সহযোগিতা করতে তাদের কি হবে? তারা তো তোমার থেকে আর ও ......... । নিজেকে একটু বুঝতে চেষ্টা কর। আমি জানি এ বয়সের ছেলেমেয়েরা এমনটা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর ফল অদূর ভবিষ্যতে অনেক খারাপ হতে পারে। আমি তোমাকে ভালোবাসি সত্যি। কিন্তু এ মুহূর্তে তোমার প্রেমে সাড়া দেয়া আমার পক্ষে মঙ্গলকর নয়। আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। তুমি জানো সামনে আমাদের ম্যাট্টিক পরীক্ষা। পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করবে। ভাল একটা কলেজে ভর্তি হবে। ভাল রেজাল্ট করবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তো অনেক বিস্তৃত। তোমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। প্রেম ভালবাসার সময় আছে অনেক। ভাল একটা ক্যারিয়ার নিয়ে ভাববে। আমি চাই তুমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করবে তারপর আমরা মিলিত হব। তুমি যদি এতটা বছর অপেক্ষা করতে পারো নিশ্চয়ই আমি তোমার প্রেমে সাড়া দিব। তখন আমাদের সময়টা হবে কেবল সুখের। চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
তোমার ভালবাসা
বিজয়
সময় অতিবাহিত হতে থাকে। রুবিনা আজও চিঠির উত্তর দেয়নি। দীর্ঘ সাত বছর পেরিয়ে গেল। বিজয়ের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়েছে। হয়তো রুবিনার ও শেষ হয়েছে। তার সাথে আর দেখে হয়নি বিজয়ের। ম্যাট্টিক পরীক্ষার পূর্বে চিঠিটি লিখেছিল বিজয়। সেখানে বিজয়ের বাসার ঠিকানা দেয়া ছিলনা। বেনামে পাঠিয়েছিল। হয়তো রাগে, অভিমানে রুবিনা আজ ও বিজয়ের চিঠির উত্তর দেয়নি। কিংবা কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিল রুবিনা। কিংবা হয়তো অপেক্ষা করেনি তার জন্য। হয়তো ভালো কোথাও বিয়ে হয়ে গেছে। নয়তো জানিনা। ভাবতে গেলে মাথাটা হিম হয়ে আসে। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সেদিন হিমেলের মেসেজের উত্তর দেয়া হয়নি বিজয়ের। তার আর রুবিনার সম্পর্কের কথা হিমেলই জানত কেবল। তাই হয়তো সে ভেবেছিল আজ ও তাদের সম্পর্ক মধুর আছে।
আজ কেন যেন রুবিনাকে মনে পড়ছে বিজয়ের। মাঝে মাঝে রুবিনার পাঠানো চিঠিগুলো নেড়েচেড়ে দেখছে। স্মৃতিগুলো আজও মনে পড়ছে তার। রুবিনা তাকে যেসব চিঠি লিখত সেগুলোতে প্রেমের গল্প ছিলনা। ছিল তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবনের গল্প, তার গ্রামের গল্প, তার গ্রামের শস্য শ্যামল মাঠের গল্প, আর তার স্বধীনতার গল্প। ভালবেসে রুবিনা তাকে এতটা ব্যক্তিগত বিষয় লিখত যে, সে কখন কল্পনা ও করতে পারতনা। সকল চিঠি পড়ার সময় ছিলনা বিজয়ের। কিছু চিঠি খুলত, দু এক লাইন পড়ত তারপর রেখে দিত। সাত আট বছর আগের চিঠিগুলো আজ সে পড়া শুরু করেছে নখদর্পণে। চিঠিগুলতে সরাসরি প্রেমের গল্প না থাকলে ও ছিল প্রেমের হাতছানি, ছিল ভালবাসার স্পর্শ। আজ বিজয় হৃদয়ে রুবিনার ভালবাসা অনুভব করছে তার প্রত্যেকটা চিঠির বাক্যে, প্রত্যেকটা শব্দে।
হিমেলকে বলেছিল বিজয় কয়েকদিনের মধ্যে খুলনা রওনা দিবে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। দশ পনের দিন হয়ে গেল হিমেলের সাথে বিজয়ের কোন যোগাযোগ নাই। যদিও হিমেল কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল। বিজয় উত্তর দেইনি।
রুবিনা যে সমস্ত চিঠি লিখত সবগুলতেই তার বাসার ঠিকানা দিয়ে রাখত। রুবিনার চিঠিতে দেয়া ঠিকানায় বিজয় কয়েকবার গিয়েছিল, রুবিনারকে পায়নি। ঠিকানাটা ছিল রুবিনার মামার বাসা।
তারা মামা বলেছিলেন, ‘ সে ত অনেক আগের কথা বাবা, সাত আট বছর হয়ে গেল। রুবিনা ম্যাট্টিক পরীক্ষা দেয়ার পরপরই এখান থেকে চলে গেছে’।
---- তার গ্রামে গেছে, আঙ্কেল?
----তার বাবা গ্রাম থেকে এসে নিয়ে গেছে।
----তার পরালেখা?
----সে কথা জানিনা। তবে শুনেছিলাম, ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল।
বিজয় নাম পরিচয় দিয়ে রুবিনার মামার সাথে নম্রভাবেই কথা বলছিল যে, সে রুবিনার ফ্রেন্ড। হঠাত, রুমের এক দেয়ালে রুবিনার একটি ছবি টাঙানো দেখতে পায়।
---- আঙ্কেল, রুবিনার গ্রামের বাসার ঠিকানাটা পেতে পারি, খুব প্রয়োজন ছিল, যদি মনে কিছু না করেন।
--- হঠাত রুবিনার ঠিকানা তুমি কি করবে, বিজয়?
---খুব প্রয়জন আঙ্কেল।
--- ঠিক আছে, রুনা আমার ডায়েরীটা দিয়ে যাও।
রুবিনার মামা ডায়েরিতে ঠিকানাটা লিখে, পাতাটি বিজয়কে ছিঁড়ে দিলেন। বিজয় বেশ কয়েকবার রুবিনার ছবিটির দিকে তাকাচ্ছিল। আজ হয়তো রুবিনা অনেক বদলে গেছে, তাকে হয়তো নাও চিনতে পারে। তারপর ও সে তার খোঁজে যাবে। দেয়ালের ছবিটি রুবিনার কৈশোরকালের। আজ হয়তো তার চেহারার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
হঠাত নির্দ্বিধায় বিজয় বলে ফেলল, ‘ আঙ্কেল রুবিনার ছবিটি থেকে একটি ছবি তুলতে পারি, তাকে খুঁজে পেতে অনেক সহজ হত!’
রুবিনার মামা অনুমতি দিলে বিজয় এই প্রথম রুবিনার কোন ছবি তুলল সেটাও আবার ছবি থেকে ছবি।
তারপর...............